ইহলোকের পাশাপাশি, পরলোক নিয়েও নানারকম চিন্তা আমাদের পেয়ে বসে। আমরা ভাবতে থাকি, এ জীবনে যা পাপ-তাপ হয়ে যাচ্ছে, তার ফল কী হবে? পরলোকে কি এর জন্য আমাদের শাস্তি বরাদ্দ হয়ে আছে? একবার এক ভক্ত এ প্রশ্ন করেছিলেন ঠাকুর শ্রী রামকৃষ্ণের কাছে। ঠাকুর তাঁকে কী বলেছিলেন… আসুন শুনে নিই।
চিন্তার নানা স্রোত। নানাবিধ গতি। সে যে কখন কোন খাতে বয়ে যাবে, তা তো আগাম অনুমান করা যায় না। তাই চিন্তা যখন আমাদের আচ্ছন্ন করে, তখন আমরা তার উত্তর হাতড়ে বেড়াই। গৃহস্থ মানুষের সংসার নিয়ে হাজারও চিন্তা থাকে। পাশাপাশি ঈশ্বর উপাসনায় তার মন কী করে থিতু হবে, তা নিয়েও চিন্তা থাকে। এই দুই পথ মেলানো তো সহজ কথা নয়। ঠাকুর শ্রী রামকৃষ্ণ সেই কঠিন কাজটিকেই সহজ করে দেন। গৃহস্থকে তিনি বলেন, আগে মনটাকে পরশমণির ছোঁয়ায় সোনা করে নাও। তারপর সংসার করো, তাতে আর কোনও ভয় নেই।
আরও শুনুন: Spiritual: গৃহস্থের চঞ্চল মন শান্ত হবে কী করে? উপদেশ দিয়েছিলেন ঠাকুর ও শ্রীশ্রীমা সারদা
এ যেমন গেল একটা দিক, তেমনই আমাদের চিন্তা থাকে পরলোক নিয়েও। মনে হয়, এ জীবনে জ্ঞাতসারে বা অজ্ঞাতে যে সব পাপকাজ আমাদের দ্বারা হয়ে চলেছে, তার পরিণতি কী! পরলোকে কি এর জন্য শাস্তি পেতে হবে? একবার এক ভক্ত এ প্রশ্ন করলেন ঠাকুর শ্রী রামকৃষ্ণের কাছে। ঠাকুর সব শুনলেন শান্ত হয়ে। তারপর বললেন, তুমি আম খাও না! তোমার ওসব হিসেবে দরকার কী? পরলোক আছে কিনা- তাতে কী হয়- এসব খবর! আম খাও- আম প্রয়োজন…
ঠাকুর তো বলে দিলেন। কিন্তু চিন্তা কি অত সহজে দূর হয়! ভক্ত পুনরায় তাই প্রশ্ন করলেন, আমগাছ কোথা? আম পাই কোথা? ঠাকুর এবার উত্তর দিলেন, গাছ? তিনি অনাদি অনন্ত ব্রহ্ম। তিনি আছেনই, তিনি নিত্য! তবে একটি কথা আছে, তিনি কল্পতরু…
আরও শুনুন: Spiritual: পুজোর সময় প্রদীপ জ্বালানো হয় কেন? এর মাহাত্ম্য কী?
এই কথা বলে ঠাকুর বলে উঠলেন, কালী কল্পতরু মূলে রে মন চারি ফল কুড়ায়ে পাবি…
সেই ভক্তকে উদ্দেশ্য করে বললেন, কল্পতরুরর কাছে গিয়ে প্রার্থনা করতে হয়, তবে ফল পাওয়া যায়, – তবে ফল তরুর মূলে পড়ে – তখন কুড়িয়ে নেওয়া যায়। এই চারি ফল হল – ধর্ম অর্থ কাম , মোক্ষ। যে যেমনটি চায়। ঠাকুর বলেন, জ্ঞানীরা মুক্তি অর্থাৎ মোক্ষ চান। ভক্তেরা ভক্তি চায়, অহেতুকী ভক্তি। তারা ধর্ম অর্থ কাম চায় না।