ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ তাঁর সংসারী ভক্তদের খুবই গুরুত্ব দিতেন। সংসারে থেকে যাঁরা ঈশ্বরে মন রেখেছেন, তাঁদের কথা খুব করে বলতেন ঠাকুর। বলতেন, যাঁরই নিত্য, তাঁরই লীলা। তাই আমি নিত্য, লীলা সবই লই। মায়া বলে জগৎসংসার উড়িয়ে দিই না। এই ভাবনা সহজ করে বুঝিয়ে দিতে ঠাকুর একখানা গল্পও বলেছিলেন। আসুন শুনে নিই।
ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ একবার ভক্তদের উদ্দেশে বললেন, বেদান্ত বিচারে, সংসার মায়াময়, — স্বপ্নের মতো, সব মিথ্যা। যিনি পরমাত্মা, তিনি সাক্ষীস্বরূপ — জাগ্রত, স্বপন, সুষুপ্তি তিন অবস্থারই সাক্ষিস্বরূপ। এ-সব তোমার ভাবের কথা। স্বপ্নও যত সত্য, জাগরণও সেইরূপ সত্য। একটা গল্প বলি শোন।
আরও শুনুন: ভক্ত জানতে চাইলেন ‘রামের ইচ্ছা’ গল্পটা কী, ঠাকুর বললেন…
বলে ঠাকুর একখানা গল্প বলতে শুরু করলেন। বললেন, “এক দেশে একটি চাষা থাকে। ভারী জ্ঞানী। চাষবাস করে — পরিবার আছে, একটি ছেলে অনেকদিন পরে হয়েছে; নাম হারু। ছেলেটির উপর বাপ-মা দুজনেরই ভালবাসা; কেননা, সবেধন নীলমণি। চাষাটি ধার্মিক, গাঁয়ের সব লোকেই ভালবাসে। একদিন মাঠে কাজ করছে, এমন সময় একজন এসে খপর দিলে, হারুর কলেরা হয়েছে। চাষাটি বাড়ি গিয়ে অনেক চিকিৎসা করালে কিন্তু ছেলেটি মারা গেল। বাড়ির সকলে শোকে কাতর কিন্তু চাষাটির যেন কিছুই হয় নাই। উলটে সকলকে বুঝায় যে, শোক করে কী হবে? তারপর আবার চাষ করতে গেল। বাড়ি ফিরে এসে দেখে, পরিবার আরও কাঁদছে। পরিবার বললে, ‘তুমি নিষ্ঠুর — ছেলেটার জন্য একবার কাঁদলেও না?’ চাষা তখন স্থির হয়ে বললে, ‘কেন কাঁদছি না বলব? আমি কাল একটা ভারী স্বপ্ন দেখেছি। দেখলাম যে, রাজা হয়েছি আর আট ছেলের বাপ হয়েছি — খুব সুখে আছি। তারপর ঘুম ভেঙে গেল। এখন মহা ভাবনায় পড়েছি — আমার সেই আট ছেলের জন্য শোক করব, না, তোমার এই এক ছেলে হারুর জন্য শোক করব?’
আরও শুনুন: সত্ত্ব, রজঃ আর তমঃ… কে কোন গুণের অধিকারী? চিনিয়ে দিয়েছিলেন শ্রীরামকৃষ্ণ
এই গল্প শুনিয়ে ঠাকুর বললেন, “চাষা জ্ঞানী, তাই দেখছিল স্বপ্ন অবস্থাও যেমন মিথ্যা, জাগরণ অবস্থাও তেমনি মিথ্যা; এক নিত্যবস্তু সেই আত্মা।”
“আমি সবই লই। তুরীয় আবার জাগ্রত, স্বপ্ন, সুষুপ্তি। আমি তিন অবস্থাই লই। ব্রহ্ম আবার মায়া, জীব, জগৎ আমি সবই লই। সব না নিলে ওজনে কম পড়ে।”
একজন ভক্ত তখন জানতে চাইলেন, ওজনে কেন কম পড়ে? শুনে সকলেই হেসে ফেললেন।
ঠাকুর তখন তাঁকে বুঝিয়ে বললেন, ব্রহ্ম — জীবজগৎবিশিষ্ট।
শুনে নিন বাকি অংশ।