কথায় বলে, গুরু মেলে লাখে লাখে শিষ্য মেলে এক। অর্থাৎ, প্রকৃত গুরুর সন্ধান হয়তো পাওয়া যায়, কিন্তু তেমন শিষ্যের দেখা পাওয়া যায় কই। আসলে, শিষ্য হওয়া সহজ বিষয় নয়। ভক্তমনে প্রশ্ন জাগে, ঠিক কেমন গুণ থাকা উচিত শিষ্যের, যাতে গুরু তাঁর প্রতি প্রসন্ন হন?
গুরুর কাছেই থাকে শ্রেষ্ঠ জ্ঞান। গুরুই শিখিয়ে দিতে পারেন সাধন প্রণালী। গুরুর সেই জ্ঞানকে ধারণ করার মতো উপযুক্ত আধার থাকতে হয়। অন্যথায় গুরু তাঁর এই রাজবিদ্যা অপাত্রে দান করেন না। তাই, জীবনের যা শ্রেষ্ঠ জ্ঞান, সেই তত্ত্ব আহরণ করার জন্য শিষ্যকে উপযুক্ত হয়ে উঠতে হয়। নইলে সেই অযুত জ্ঞানরাশির নাগাল পাওয়া যায় না। অর্থাৎ, শিষ্য হয়ে ওঠার জন্যও নির্দিষ্ট গুণাবলি প্রয়োজন।
কেমন সেই গুণ?
আরও শুনুন: Spiritual: শঙ্খধ্বনি কেন মঙ্গলকর? শুভ কাজে শাঁখ কেন বাজানো হয় জানেন?
গীতায় আমরা দেখি, ভগবান শ্রী কৃষ্ণ আমাদের গুরুরূপে অবতীর্ণ হয়েছেন। তিনি মানবজগতের গুরু। জগতের কল্যাণের জন্যই তিনি গুরু ভূমিকা নিয়েছেন। আর, এখানে তাঁর শিষ্যটি হলেন অর্জুন। অর্জুন যদি উপযুক্ত শিষ্য না হতেন, তাহলে শ্রী কৃষ্ণ তাঁকে আত্মতত্ত্ব ও অন্যান্য জ্ঞানের হদিশ দিতেন না। অর্থাৎ, স্বয়ং শ্রী কৃষ্ণের মনে হয়েছে অর্জুনই উপযুক্ত শিষ্য। আমরা যদি অর্জুনের গুণাবলীর দিকে তাকাই, তাহলেই আমরা প্রকৃত শিষ্যের গুণ বুঝতে পারব।
আরও শুনুন: Spiritual: পুজোর সময় প্রদীপ জ্বালানো হয় কেন? এর মাহাত্ম্য কী?
গীতায় অর্জুনকে লক্ষ্য করে শ্রী কৃষ্ণ এক জায়গায় বলেছেন, ‘তুমি অসূয়াশূন্য, দোষদর্শী নও। তোমাকেই এই অতিগুহ্য বিজ্ঞানসহিত ঈশ্বর বিষয়ক জ্ঞান বলিতেছি, ইহা জ্ঞাত হইলে তুমি সংসারদুঃখ হইতে মুক্ত হইবে। যে অধ্যায়ে এই কথাটি উচ্চারিত হয়েছে, সেটির নাম রাজবিদ্যা-রাজগুহ্য যোগ।’ রাজবিদ্যা অর্থে এখানে বুঝতে হবে যে বিদ্যা সর্বোৎকৃষ্ট। পবিত্র। সর্বধর্মের ফলস্বরূপ। সুখসাধ্য এবং অক্ষয় ফলপ্রদ। বিজ্ঞানসহিতম্ অর্থে বিজ্ঞানের সহিত উপদেশ। এই কথার অর্থ কেউ কেউ করেন ব্রহ্মবিদ্যা। আবার সাধন প্রণালীও বোঝায়। সেই জ্ঞান একমাত্র গুরুই জানেন। এই হল শ্রেষ্ঠ বিদ্যা। এই বিদ্যা গুরু কাকে দিচ্ছেন? না, তাঁর উপযুক্ত শিষ্যটিকে। সেই শিষ্য কেমন? ভগবান বলছেন, তিনি হবেন অসূয়াশূন্য এবং যিনি দোষদর্শী নন। অর্থাৎ শিষ্য যদি শ্রদ্ধাহীন হন, যদি দোষদর্শী হন তাহলে গুরু তাঁকে গুহ্য বিষয়ে উপদেশ দেন না। কিন্তু অর্জুন সেরকম নন। তাই তিনি এই বিষয় বা বিদ্যা শ্রবণের অধিকারী।
এখান থেকেই আমরা বুঝতে পারি একজন শিষ্যের মনের আকাশ ঠিক কেমন হলে গুরু তাঁকে সর্বশ্রেষ্ঠ জ্ঞান দান করেন। অর্থাৎ, অসূয়াশূন্য, দোষদর্শী নন যিনি তিনিই হয়ে উঠতে পারেন উপযুক্ত শিষ্য।