রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গানে রয়েছে, ‘দয়া, তব দয়া দিয়ে হবে গো মোর জীবন ধুতে’। কে দয়া করেন! কীভাবে বর্ষিত হয় সেই দয়া! ঈশ্বরের ভজনায় নাম সংকীর্তন করার কোনও আলাদা গুরুত্ব রয়েছে? কি বলছে শ্রীমাদ্ভাগবত গীতা এবং শাস্ত্র। শোনাচ্ছেন, সতীনাথ মুখোপাধ্যায়।
এই জগত বাধায় কণ্টকিত। নানা বাসনা থেকে বাধা – পথ অবরোধ করে দাঁড়ায়। কিন্তু মানুষের সর্বোত্তম বাসনা লক্ষ্য হচ্ছে ঈশ্বরোপলব্ধি। ভগবান সর্বত্র বিরাজমান। কিন্তু মায়া বা আড়াল তাঁকে মানুষের থেকে আড়াল করে রাখে। তাই ভক্ত যিনি তাঁকে ভিন্ন ভিন্ন পথে তাঁর সান্নিধ্যলাভের চেষ্টা করতে হয়। আবার ফিরে যেতে হবে রবীন্দ্রনাথের গানেই। তিনিই লিখেছিলেন, ‘তাই তোমার আনন্দ আমার পর, তুমি তাই এসেছ নিজে। আমায় নইলে ত্রিভুবেনশ্বর, তোমার প্রেম হত যে মিছে।’ ভক্তিযোগের আচার্য বলেছেন, ভক্তের সঙ্গলাভের জন্য ভগবান অনেক বেশি আগ্রহী, এই বিশাল বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে ভগবৎকৃপা লাভের উদ্দেশ্যে ভগবান লাভ করতে চান এমন মানুষের সংখ্যা নিতান্ত নগণ্য। লক্ষ লক্ষ মানুষ ভগবানকে ডাকেন তাঁদের নিত্যদিনের বাঁধা বিপদ দুর্বিপাক থেকে নিজেকে বা পরিবারকে রক্ষার উদ্দেশ্যে। শুধুমাত্র প্রেমনামে প্রেমময় ঈশ্বরের শরণাগত হন, এমন মানুষের সংখ্যা নিতান্ত নগণ্য।
আরও শুনুন – Spiritual: গৃহী মানুষের নিত্যকর্ম কেমন হওয়া উচিত?
ভক্ত তো নানাভাবে ঈশ্বরের সান্নিধ্য পেতে পারেন। ধ্যান করে তাঁকে আবাহন করতে পারেন। পবিত্র শাস্ত্রপাঠ করে, তার প্রতি গভীর এবং অখণ্ড মনঃসংযোগ করে তাঁকে আহবান করতে পারেন। ভারতীয় আধ্যাত্মিক ঐতিহ্য অনুযায়ী ঈশ্বরের সঙ্গে মিলনের আরও একটি পথ হচ্ছে মন্ত্র-যোগ অর্থাৎ ঈশ্বরের পবিত্র নামজপ। মন্ত্রযোগ ঈশ্বরসান্নিধ্যের এবং আধ্যাত্মিক জীবনের অন্যতম শ্রেষ্ঠ একটি পন্থা। এই সর্বোত্তম মিলনকালে ব্রহ্মাণ্ডের প্রতিটি বস্তু ভগবানের অংশ বলে মনে হয়। উপলব্ধি হয় জীবনের এই বিশাল প্রবাহের মূলে হচ্ছেন ঈশ্বর এবং এই বিপুলা ব্রহ্মাণ্ড ঈশ্বরের থেকে আলাদা কিছু নয়।
যারা সদ্গুরুর কাছে দীক্ষা বা মন্ত্র লাভ করেছেন তাঁরা মন্ত্রকে হৃদয়ের এক অতি মুল্যবান সম্পদ বলে মনে করেন। যতদূর সম্ভব ভালোবাসা এবং বিশ্বাস নিয়ে অপরের শ্রুতি এড়িয়ে এই মন্ত্র অতি নীরবে জপ করতে হয়। ধৈর্য, ও ভক্তি নিয়ে জপাভ্যাস করলে, ঐশী সত্য উপলব্ধ হয়। সাধকদের কাছে, ‘যপাৎ-সিদ্ধি’ কথাটি খুব সুবিদিত।
আরও শুনুন – Spiritual: ফললাভের কামনা করেই কি পুজো করা উচিত?
ঠাকুর শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণদেব বলতেন-
‘হ্যাঁ নামের খুব মাহাত্ম্য আছে বটে। তবে অনুরাগ না থাকলে কি হয়? ঈশ্বরের জন্য প্রাণ ব্যাকুল হওয়া দরকার। শুধু নাম করে যাচ্ছি কিন্তু কামিনী-কাঞ্চনে মন রয়েছে, তাতে কি হয়?’
কেউ একজন ঠাকুরকে জিজ্ঞেস করছিলেন, জপ থেকে ঈশ্বর লাভ হয়?
ঠাকুর বললেন, ‘হ্যাঁ জপ থেকে ঈশ্বর লাভ হয়। নির্জনে গোপনে তাঁর নাম করতে হয় তাঁর কৃপা হয়। তারপর দর্শন।’
বাকিটা শুনে নিন প্লে-বাটন ক্লিক করে।