সত্ত্ব, রজঃ আর তমঃ- মানুষের এই তিন গুণ। সব মানুষের ভিতরই এর লক্ষণ ফুটে ওঠে। তা যেমন সংসারীর ক্ষেত্রে সত্যি, সত্যি ভক্তের ক্ষেত্রেও। কিন্তু কেমন করে বোঝা যায়, কে কোন গুণের অধিকারী। নিজেকে না বুঝলে তো উত্তরণের পথ মেলে না। ঠাকুর শ্রী রামকৃষ্ণ সেই কথাটিই বুঝিয়ে দিয়েছিলেন সহজ করে।
সত্ত্ব, রজঃ আর তমঃ গুণের কথা তো আমরা সবাই জানি। কিন্তু বুঝব কী করে আমরা কে কোন জায়গায় আছি? আবার সংসারী মনে করে, ভক্ত বোধহয় এসবের ঊর্ধে সত্যিই কি তাই। এই সব সংশয় নিরসনের জন্যই আমাদের আচার্যের শরণ নিতে হয়। ঠাকুর শ্রীমাকৃষ্ণ ভক্তমনের এই সন্দেহ নিরসন মিটিয়ে দেন একেবারে সহজ কথায়। তিনি বলেন, “সংসারীর সত্ত্বগুণ কিরকম জানো? বাড়িটি এখানে ভাঙা, ওখানে ভাঙা — মেরামত করে না। ঠাকুরদালানে পায়রাগুলো হাগছে, উঠানে শেওলা পড়েছে হুঁশ নাই। আসবাবগুলো পুরানো, ফিটফাট করবার চেষ্টা নাই। কাপড় যা তাই একখানা হলেই হল। লোকটি খুব শান্ত, শিষ্ট, দয়ালু, অমায়িক; কারু কোনও অনিষ্ট করে না।
আরও শুনুন: দক্ষিণেশ্বর আলো করে আছেন মা ভবতারিণী, জানেন কে এই মূর্তির রূপকার?
“সংসারীর রজোগুণের লক্ষণ আবার আছে। ঘড়ি, ঘড়ির চেন, হাতে দুই-তিনটা আঙটি। বাড়ির আসবাব খুব ফিটফাট। দেওয়ালে কুইনের ছবি, রাজপুত্রের ছবি, কোন বড় মানুষের ছবি। বাড়িটি চুনকাম করা, যেন কোনখানে একটু দাগ নাই। নানারকমের ভাল পোষাক। চাকরদেরও পোশাক। এমনি এমনি সব।
“সংসারীর তমোগুণের লক্ষণ — নিদ্রা, কাম, ক্রোধ, অহংকার এই সব।
আরও শুনুন: কালী কি কালো! এ প্রশ্নের কী উত্তর দিয়েছিলেন ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ?
“আর ভক্তির সত্ত্ব আছে। যে ভক্তের সত্ত্বগুণ আছে, সে ধ্যান করে অতি গোপনে। সে হয়তো মশারির ভিতর ধ্যান করে — সবাই জানছে, ইনি শুয়ে আছেন, বুঝি রাত্রে ঘুম হয় নাই, তাই উঠতে দেরি হচ্ছে। এদিকে শরীরের উপর আদর কেবল পেটচলা পর্যন্ত; শাকান্ন পেলেই হল। খাবার ঘটা নাই। পোশাকের আড়ম্বর নাই। বাড়ির আসবাবের জাঁকজমক নাই। আর সত্ত্বগুণী ভক্ত কখনও তোষামোদ করে ধন লয় না। “ভক্তির রজঃ থাকলে সে ভক্তের হয়তো তিলক আছে, রুদ্রাক্ষের মালা আছে। সেই মালার মধ্যে মধ্যে আবার একটি সোনার দানা। যখন পূজা করে, গরদের কাপড় পরে পূজা করে।” এই কথা শুনে সকলেই হেসে ফেলেন।
বাকি অংশ শুনে নিন।