পবনপুত্র হনুমান। তাঁর স্মরণে যেকোনও বিপদের হাত থেকে মুক্তি মেলে। হনুমানের স্তব করলে তুষ্ট থাকেন গ্রহরাজ শনিদেবও। প্রভুর রামের নাম করলেই তিনি বিশেষ তুষ্ট হন। তাই যে কোনও রামমন্দিরেই হনুমান মূর্তি দেখা যায়। তবে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিখ্যাত কিছু হনুমান মন্দিরও রয়েছে। কী বিশেষ ফল মেলে এইসব মন্দিরে পুজো দিলে? আসুন শুনে নিই।
তাঁর মতো আর কোনও প্রভুভক্তের উল্লেখ শাস্ত্রে মেলে না। স্বয়ং শিবের অংশ, অঞ্জনিপুত্র হনুমান। মা সীতা ও শ্রীরামের মিলনে তাঁর ভূমিকা অনস্বীকার্য। তাঁর স্তব করলেই মুক্তি মেলে বিপদের হাত থেকে। ভক্তের মনোস্কামনা পূর্ণ করার জন্য তিনি সর্বদা প্রস্তুত। স্রেফ তাঁকে মনে করিয়ে দিতে হয়, তিনি ঠিক কতটা শক্তিধর।
আরও শুনুন: পুরুষ দেবতা, অথচ শ্রী হনুমানের সারা শরীর সিঁদুর মাখানো! নেপথ্যে কারণ কী?
এ প্রসঙ্গে বলতে হয় হনুমানের সঙ্গে জড়িত এক কাহিনির কথা। কথিত আছে, ছোটবেলায় তিনি অনেক দুঃসাহসী কাজ করেছিলেন। স্বয়ং সূর্যদেবকেই মুখে পুড়েছিলেন বাল হনুমান। এমনই এক কাজের জেরে জনৈক ঋষির অভিশাপ পেয়েছিলেন হনুমান। ঋষি বলেছিলেন, কেউ মনে না করিয়ে দেওয়া অবধি হনুমান নিজের শক্তির কথা মাথায় রাখতে পারবেন না। তাই রামায়নের কাহিনিতেই দেখা যায়, সাগর পেরানোর আগে হনুমানকে মনে করিয়ে দিতে হয়েছিল তিনি ঠিক কতটা শক্তি ধরেন। হনুমান আরাধনার প্রসঙ্গটিও খানিক সেই সূত্র ধরেই। সংকটমোচন স্তবে তাঁর বিভিন্ন কীর্তির কথা লেখা রয়েছে। মনে করা হয়, সেইসব হনুমানকে একবার মনে করিয়ে দিলেই তিনি ভক্তের কল্পতরু হয়ে উঠবেন। সেই কাজ যদি দেশের প্রসিদ্ধ হনুমান মন্দিরগুলিতে গিয়ে করা হয় তাহলে তো কথাই নেই।
আরও শুনুন: মহাদেবের দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গ, কোন শিবক্ষেত্র দর্শনে কী বিশেষ ফল মেলে?
প্রথমেই বলতে হয় বারাণসীর সঙ্কটমোচন মন্দিরের কথা। স্বয়ং তুলসীদাস এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন বলেই কথিত রয়েছে। প্রতিদিন দূরদূরান্ত থেকে ভক্তরা এই মন্দিরে পুজো দিতে আসেন। শহরের বিখ্যাত হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়য়ের কাছেই এই মন্দির অবস্থিত। এখানে বিশেষ এক কুয়ো রয়েছে। হনুমানের পুজো দিয়ে সেই কুয়োর জল খেলে বিভিন্ন রোগ সেরে যায় বলেই দাবি করেন স্থানীয়রা। এরপর রয়েছে দিল্লির এক হনুমান মন্দির। মহাভারতের আমলে তৈরি এই মন্দিরে স্বয়ং হনুমানের অবস্থান, বলেই মনে করেন ভক্তরা। তালিকায় রয়েছে মেহেন্দিপুরের বিখ্যাত বালাজি মন্দিরও। এখানেও হনুমানের মূর্তি রয়েছে। যা খুবই প্রসিদ্ধ। এই মন্দির ভূত-প্রেত বা কালোজাদুর প্রভাব থেকে মুক্তি ঘটায়। সেক্ষেত্রে হনুমানের প্রভাব বিশেষভাবে লক্ষ্য করা যায়। এরপর অবশ্যই বলতে হয় রাজস্থানের সালাসারজী-র কথা। ইনিও হনুমানের এক বিশেষ রূপ। এই বিগ্রহে গোঁফ দেখা যায়। যা সাধারণ হনুমান মূর্তিতে একেবারেই দেখা যায় না। প্রতি বছর এই মন্দিরে ভক্তের ভিড় থাকে চোখে পড়ার মতো। এছাড়া এলাহাবাদের ত্রিবেনি সঙ্গমের কাছেও এক অদ্ভুত হনুমান মন্দির দেখা যায়। হনুমান এখানে শায়িত রয়েছেন। এছাড়া চিত্রকূট পর্বতেও বিখ্যাত এক হনুমান মন্দির রয়েছে। দক্ষিণ ভারতেও হনুমান মন্দিরের সংখ্যা নেহাতই কম নয়। দক্ষিণের দুই জায়গায় হনুমানের জন্মস্থান নিয়েও তর্ক চলে। সেই মন্দির গুলিও যথেষ্ট প্রসিদ্ধ। ভক্তিভরে এইসব মন্দিরে পুজো দিলে অবশ্যই ফল মেলে। এবং আজীবন সুস্থ থাকে শরীর।