শুধু বাংলা নয়, দুর্গাপুজো হয় গোটা দেশেই। এমনকি বিদশেও। বেশিরভাগ জায়গাতেই মূর্তি যায় কুমোরটুলি থেকে। কিন্তু সর্বত্র সম্ভব নয়। তাই বাংলার বাইরেও গড়ে উঠেছে একাধিক কুমোরপাড়া। তার মধ্যে সবথেকে জনপ্রিয় কোনটি? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
হাতে আর মাত্র কয়েকদিন! সকলেরই ব্যস্ততা তুঙ্গে। কেউ আঁকছেন দেবীর চোখ, কেউ পরাচ্ছেন শাড়ি। কেউ আবার মূর্তির শেষ মুহূর্তে সাজ ঠিক করতে ব্যস্ত। মহালয়া থেকে মণ্ডপে মণ্ডপে মূর্তি রওনা দিতেও শুরু করেছে। বাকী মূর্তি ষষ্ঠীর আগে তৈরি না হলে বিপদ। নিশ্চয়ই ভাবছেন কুমোরটুলির কথা বলছি? তা ভাবলে ভুল নয়। তবে স্রেফ কুমোরটুলির পরিস্থিতিই যে এমন, তাও নয়।
আরও শুনুন:
দুর্গাপুজোর মেয়াদ কেবল চারদিন নয়, বছরভর দেবী আরাধনার সুর বাঁধে নানা তিথি
দুর্গাপুজো বাঙালির শ্রেষ্ট উৎসব। সুতরাং যেখানে বাঙালি রয়েছে সেখানেই দুর্গাপুজো হওয়াটা আবশ্যক। দেশের বিভিন্ন প্রান্তেই ঘটা করে আয়োজন হয় দুর্গাপুজোর। বিদেশের জৌলুসও কম যায় না। তবে কুমোরটুলির মতো ব্যস্ততা ধরা পড়ে দিল্লির চিত্তরঞ্জন পার্ক চত্বরে। পুজোর আগে এই জায়গায় যেন দ্বিতীয় কুমোরটুলি। কারণ দিল্লির অধিকাংশ মণ্ডপের মূর্তি তৈরি হয় এই পটুয়াপাড়ায়। শিল্পীরা অবশ্য বেশিরভাগই বাংলার মানুষ। পুজোর অন্তত ৪-৫ মাস আগে তাঁরা পৌঁছে যান রাজধানীতে। নিষ্ঠাভরে একের পর এক মূর্তি গড়েন। থিমের বালাই নেই বললেই চলে। সনাতনী ধাঁচেই তৈরি হয় মাতৃ প্রতিমা। আকারে বড় হলেও একচালার আধিক্য বেশি। ডাকের সাজের বরাবরই আলাদা কদর। দিল্লিতেও ব্যতিক্রম নয়। রাজধানীর বিখ্যাত সব পুজোতে মাতৃ প্রতিমায় চিরন্তন বাংলার ছাপ ফুটে ওঠে। কিছু জায়গায় অবশ্যই বাংলার কুমোরটুলি থেকে মূর্তি পাঠানো হয়। কিন্তু তাতে খরচ এবং ঝক্কি দুটোই বেশি। তাই ভরসা দিল্লির নিজস্ব কুমোরটুলি।
আরও শুনুন:
দুর্গাপুজোয় বাজবে না ঢাক! সাহেবদের আপত্তির পালটা দিয়েছিলেন রানি রাসমণি
বিগত কয়েক দশক ধরে এইভাবে দিল্লিতে গিয়ে প্রতিমা তৈরি করছেন বাংলার শিল্পীরা। শুধুমাত্র কলকাতা নয়, নদীয়া, বীরভূম সহ বিভিন্ন জেলা থেকেও মৃৎশিল্পীরা এই সময়টা রাজধানীতে হাজির হন। পরিবার পরিজন ছেড়ে পুজোর আগে বেশ কয়েক মাস সেখানেই কাটাতে হয়। ফেরার সুযোগ দূরের কথা, নিজেরাই ঠিক মতো খাওয়া দাওয়ার সময় পান না। কারণ যে সংখ্যায় প্রতিমা গড়তে হয়, তত শিল্পী থাকেন না। কাজেই একজন শিল্পীকে অনেক কাজ একাই করতে হয়। তবু সামান্য বাড়তি রোজগারের আশায় প্রতিবছর দিল্লি ছোটেন শিল্পীরা। কলকাতার কুমোরটুলির পাশেই গঙ্গা, এছাড়া প্রতিমার সাজ-সরঞ্জামও সেখানেই তৈরি হয়। দিল্লিতে সে বালাই নেই। প্রতিমা তৈরির জন্য মাটি আর জল যমুনা থেকে মিললেও, বাকি সবই নিয়ে যেতে হয় কলকাতা থেকে। প্রয়োজন মতো প্রতিমার শাড়ি, সাজ, গয়না নিয়ে যান শিল্পীরা। এমনকি অস্ত্রও আলাদা করে নিয়ে যেতে হয়। সব কষ্ট ফিকে হয়ে যায় দেবীর আগমনী বার্তায়। মণ্ডপে মাতৃ প্রতিমার সাজ সম্পূর্ণ করে তৃপ্তির নিঃশ্বাস নেন শিল্পীরা। অপেক্ষা আবারও এক বছরের। ততদিন সংসারে নানা টালমাটাল অবস্থা থাকবে। কিন্তু দেবীর কৃপায় সব বাধা পেরিয়ে সামনের বছর আবার হবে। এই আশা বুকে নিয়েই ঘরে ফেরেন এই কুমোরটুলির শিল্পীরা।