সন্ধ্যার পর মন্দিরে ঢোকেন না ভক্তরা। নবরাত্রির সময় সামনে দিয়ে প্রণাম করে চলে যান। কারণ একটাই, ভয়। প্রত্যক্ষদর্শীদের এই সময় দাবি মন্দির থেকে স্পষ্ট শোনা যায় সিংহের গর্জন। একইসঙ্গে শোনা যায় নুপুরের ধ্বনিও। কোথায় রয়েছে এমন দুর্গা মন্দির? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
দুর্গাপুজো। গোটা বাংলা সেজে উঠছে উৎসবের আলোয়। বাদ নয় রাজ্যের বাইরের প্রদেশও। সেখানে অবশ্য নবরাত্রি। তাও উৎসবের জৌলুস কম নয়। সেইসঙ্গে ভক্তিভরে দেবীর আরাধনা। বছরের এই কয়েকটা দিন দেবী মন্দিরে পা রাখার জায়গা থাকে না। ব্যতিক্রম মধ্যপ্রদেশের এক মন্দির। নবরাত্রির সময় এই মন্দিরে ঢোকার সাহস দেখান না কেউই।
কথা বলছি, মধ্যপ্রদেশের দেবাস অঞ্চলের দুর্গামন্দির সম্পর্কে। পুরনো মন্দির। জনপ্রিয়ও বটে। তবে তার কারণ অন্য। ভক্তির বদলে এই মন্দির ভক্তদের কাছে ভয়ের কারণ হিসেবে ধরা দেয়। মন্দির ঘিরে নানা কিংবদন্তি রয়েছে। সেসব বিশ্বাস করেন স্থানীয় সকলেই। সেখান থেকেই ভয়ের উদ্রেক। শোনা যায়, এই মন্দিরের অন্দর থেকে নবরাত্রির সময় সিংহের গর্জন শোনা যায়। কাছে দাঁড়িয়ে শুনলে মনে হবে সত্যিই ভিতরে সিংহ রয়েছে। অনেকেই এমন অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছেন। কেউ কেউ আবার দাবি করেন, মন্দিরের অন্দরে নুপুরের ধ্বনি শোনা গিয়েছে। সেইসব কথা জনশ্রুতি হয়ে ছড়িয়েছে। তবে সবটাই যে গুজব তা নয়। মন্দিরের ইতিহাসে এমনই এক অধ্যায় রয়েছে, যা শুনলে এইসব অবিশ্বাস্য মনে নাও হতে পারে।
এমনিতে এ দেশে রহস্যময় মন্দিরের কমতি নেই। এই মন্দিরও সেই তালিকায় থাকতে পারে। এখানে পুজো দিতে এসে নানা অলৌকিক ঘটনার সাক্ষী থেকেছেন অনেকে। বলা হয়, এই মন্দির আসলে অভিশপ্ত। তার কারণ লুকিয়ে রয়েছে মন্দিরের ইতিহাসে। স্থানীয়দের দাবি, এখানে একসময় ঘটা করে দুর্গাপুজোর চল ছিল। জাগ্রত দেবীকে সবাই মান্য করতেন। কিন্তু মন্দিরে অদ্ভুত এক ঘটনার কারণে পুজো বন্ধ হয়ে যায় চিরতরে। মূর্তি সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় অন্যত্র। এমনকি চেষ্টা করা হয় মন্দির ভেঙে ফেলার। কিন্তু সেটা করা যায়নি। বরং এমন চেষ্টা করতে গিয়ে অনেকে অলৌকিক কাণ্ডের সম্মুখীন হয়েছেন। আসলে, যে ঘটনা ঘটেছিল তা মোটেও সারণ কিছু নয়। ঘটনার সঙ্গে জড়িয়ে ছিলেন এলাকার রাজা স্বয়ং। কথিত আছে, এখানকার রাজকন্যার সঙ্গে একসময় প্রণয়ের সম্পর্ক ছিল সেনাপতির। তা মেনে নিতে পারেননি রাজা। মেয়েকে কারাগারে বন্দী করে রেখে দেন। এদিকে চরম অপমান করে তাড়িয়ে দেন সেনাপতিকে। কারাগারে বন্দী থাকাকালীন মারা যান রাজকন্যা। তারপর আত্মহত্যা করেন সেই সেনাপতিও। কিন্তু সেই কাজ তিনি করেছিলেন ওই দুর্গা মন্দিরে। এই ঘটনার পরই মন্দিরকে অশুচী বলে চিহ্নিত করেন স্থানীয় ব্রাহ্মণরা। এবং মূর্তি সরানো বা মন্দির ভাঙার কাজ শুরু হয় তারপর থেকেই। মূর্তি সরাতে তেমন সমস্যা না হলেও মন্দির ভাঙতে পারেননি কেউ। বরং সেই থেকেই শুরু হয় মন্দির থেকে নানা শব্দ ভেসে আসা। অনেকে বলেন অভিশাপের কারণেই এই মন্দিরে এমনটা হয়ে থাকে। তাই নবরাত্রি হোক বা দুর্গাপুজো, মন্দিরের ভিতরে পা রাখেন না কেউ। সন্ধ্যার পর তো নয়ই। বাইরে থেকে প্রণাম করে চলে যান ভক্তরা।