৬০০ বছরের পুরনো দুর্গামন্দির। সেখানে পুজো করেন একজন মুসলিম। শুনতে অবাক লাগলেও সত্যি। মসজিদে নমাজ পাঠের সঙ্গে পৌরহিত্যও করেন এই ব্যক্তি। কোথায় রয়েছে এমন মন্দির? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
বছরঘুরে মর্তে ফিরবেন উমা। বাংলা জুড়ে ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে দেবী আগমনের প্রস্তুতি। মণ্ডপে মণ্ডপে পৌঁছতে শুরু করেছে প্রতিমা। তবে বাংলার বাইরে দুর্গাপুজোর চল তুলনায় কম। বরং নবরাত্রি উৎসবের জাঁকজমক বেশি। সেও দেবী মহামায়ারই আরাধনা। তবে ধরণ আলাদা। দিনসংখ্যাও বেশি। এমনই ক নবরাত্রি উৎসবে পৌরহিত্যের দায়িত্ব সামলান জালালুদ্দিন খান।
ধর্ম বিশ্বাস আলাদা। তবু শ্রদ্ধার সঙ্গে পুজোর দায়িত্ব সামলান এই মুসলিম ব্যক্তি। বর্তমানে তাঁর ঠিকানা রাজস্থানের এক প্রাচীন মন্দির। সেখানেই থাকেন, খাওয়া-দাওয়া করেন, ঘুমোন। মন্দির দেখাশোনা এবং পুজো করা সব দায়িত্ব তাঁর। যোধপুরের ভোপালগড় অঞ্চলের বাগোড়িয়া গ্রামের এই মন্দিরের বয়স ৬০০ পেরিয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই স্থানীয়দের কাছে এই মন্দিরের মাহাত্ম্য অন্যরকম। দুর্গামন্দির, তাই প্রতিবছর ধুমধাম করে নবরাত্রি পালিত হয়। আর সেই সময় একা হাতে সবদিক সামলান জালালুদ্দিন। পুজো করা তো রয়েছেই, সেইসঙ্গে মন্দির কীভাবে সাজানো হবে, ভোগ রান্না হবে কোথায় সব কিছুর দেখভাল করেন তিনি। এমনটা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরেই করে আসছে তাঁর পরিবার। নেপথ্যে রয়েছে বিশেষ এক কারণ। একই পরিবার প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে পৌরহিত্য করছে, এমনটা এ দেশের অনেক মন্দিরেই দেখা যায়। কিন্তু কোনও মুসলিম পরিবার কীভাবে দুর্গামন্দিরে পুজোর দায়িত্ব পেল?
নেপথ্যের কাহিনি গ্রামের মানুষের মুখে মুখে ফেরে। জানা যায়, জালালুদ্দিনের পূর্বপুরুষদের সিন্ধ প্রদেশের আদি বাসিন্দা। পেশায় ব্যবসায়ী ছিলেন তাঁরা। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত ঘুরে বেড়াতেন ব্যবসার খাতিরে। তবে দেশভাগের পর তাঁদের ঠিকানা হয় পাকিস্তান। কিন্তু ব্যবসার বেশিরভাগ কাজই হয় ভারতে। এত সহজে দুই দেশে যাতায়াত সম্ভব হত না। তাই তাঁরা ভারতে আসার সিদ্ধান্ত নেন। পরিবারের মোটামুটি সব সদস্যকে নিয়েই তাঁরা হাজির হন এদেশে। বাধ সাধে শরীর। রাজস্থানে এই অঞ্চলে এসে পরিবারের অনেকেই ভয়ানক রোগে আক্রান্ত হন। কেউ বলেন, তাঁদের সঙ্গে থাকা খাবার-জল ফুরিয়ে গিয়েছিল। তাই দুর্ভোগে পড়েন তাঁরা। পরিণতি এমনই হয় যে বাঁচার আশা ছিল না কারও। বাধ্য হয়ে সকলে আশ্রয় নেন এই দুর্গামন্দিরে। তখনই ম্যাজিকের মতো ঘটনা ঘটে। ধীরে ধীরে সুস্থ হতে থাকেন তাঁরা। সেই দেখেই সকলে ভেবে নেন এ নিশ্চয়ই দৈবের কৃপা। তখন থেকেই মন্দিরের দেখভালের দায়িত্ব নিজেদের কাঁধে তুলে নেন জালালুদ্দিনের পূর্বপুরুষরা। যা এখনও বজায় রেখেছেন জালালুদ্দিন। তিনি ১৩ তম প্রজন্ম। দেখে বোঝার উপায় নেই তাঁর ধর্মবিশ্বাস আলাদা। কারণ হিন্দুদের মতোই হাতে লালসুতো মাথায় তিলক কেটে পুজো করতে দেখা যায় তাঁকে। মন্ত্র, নিয়ম সবই জানেন পুরোদস্তুর। গ্রামের সকলেও তাঁকে ভক্তিশ্রদ্ধা করেন। নবরাত্রির সময় তাঁর ব্যস্ততা থাকে তুঙ্গে। নিয়ম মেনে প্রতিবছর দেবী দুর্গার আরাধনা করেন রাজস্থানের এই মুসলিম ব্যক্তি।