আর জি করের চিকিৎসক তরুণীর ধর্ষণ খুনের ঘটনায় উত্তাল বাংলা। বৃষ্টিভেজা পথ সাক্ষী হচ্ছে একের পর এক মিছিলের। আর এই ঘটনা মনে করিয়ে দিচ্ছে ৪২ বছর আগেকার এমনই এক নারকীয় ঘটনাকে। মনে করাচ্ছে সরকারি হাসপাতালের এক নার্সকে, গণধর্ষণ-খুনের শিকার হয়েছিলেন যে তরুণী। কী ঘটেছিল তারপর?
বৃষ্টি মাথায় নিয়েই মিছিলে হাঁটছে মেয়েরা। হাঁটছে মানুষ। বৃষ্টিভেজা রাজপথে আছড়ে পড়ছে স্লোগান, বিচার চাই। কর্মক্ষেত্রে ডিউটি করার সময়েই একজন চিকিৎসক তরুণী যে গণধর্ষণ খুনের শিকার হলেন, সে ঘটনা সকলের যাবতীয় সুরক্ষার বোধকেই তছনছ করে দিয়েছে। তাই সাধারণ মানুষের মধ্যে থেকেই উঠে আসছে প্রশ্ন। আর এই বিপন্নতাই ফিরিয়ে আনছে ৪২ বছর আগেকার আরেক ঘটনার স্মৃতি। সেখানেও গণধর্ষণ-খুনের শিকার হয়ে মরে যেতে হয়েছিল এক তরুণীকে, পেশার নিরিখে তিনিও এই চিকিৎসাজগতেরই একজন। কর্মক্ষেত্রের পরিসরে না হলেও, পেশার সূত্রেই হাসপাতালের কাছাকাছি থাকতে হত তাঁকে। আর সেখানেই আক্রান্ত হয়েছিলেন সেই তরুণী। এমনই এক বৃষ্টিমুখর সময় প্রাণ কেড়ে নিয়েছিল তাঁর। এমনই এক বৃষ্টিমুখর সময়ে প্রতিবাদও হয়েছিল। কিন্তু তারপর?
কী ঘটেছিল ঠিক?
আরও শুনুন:
হাসপাতালে কি আদৌ নিরাপদ মহিলা কর্মীরা? আর.জি.কর মনে করাচ্ছে অরুণাকেও
সেটা ১৯৮২ সালের জুন মাস। বালুরঘাটের বাড়ি ছেড়ে সরকারি হাসপাতালে নার্সের চাকরি নিয়ে কোচবিহারে এসেছিলেন তরুণী। সেখানেই থাকতে হত তাঁকে। মহারাজা জিতেন্দ্রনারায়ণ হাসপাতালে কর্মরত ওই নার্স সেদিনও ডিউটি শেষে বাড়ি ফিরে এসেছিলেন। পরদিন সকালে পড়শিরা যখন তাঁকে দেখেন, তখন তাঁর শরীরে সুতোটি নেই। কথা বলার ক্ষমতা নেই। কারণ মুখ থেকে গলা পুড়ে গিয়েছে অ্যাসিডে। রাইলস টিউব দিয়ে মুখে ঢেলে দেওয়া হয়েছে অ্যাসিড। গোপনাঙ্গও অ্যাসিডে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, যাতে ধর্ষণের সব প্রমাণ লোপাট করা যায়। প্রবল বৃষ্টির শব্দে তরুণীর আর্তনাদ শোনাও যায়নি। ঘটনার বীভৎসতা চমকে দিয়েছিল সকলকে। প্রায় মৃত তরুণীকে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁর হাসপাতালেই, তবে শেষরক্ষা হয়নি।
আরও শুনুন:
ধর্ষিতাদের মুখ লুকোনোর দায় নেই, দেশজোড়া ‘গরিমা যাত্রা’য় হেঁটে বুঝিয়েছিলেন নির্যাতিতারা
নির্যাতিতার স্বর থামিয়ে দেওয়া হলেও, সাধারণ মানুষ তাঁর হয়ে প্রতিবাদ করেছিলেন। কিন্তু আইনের কাছে সে স্বরও পৌঁছয়নি। দশ অভিযুক্তের মধ্যে তিনজনের দশ বছরের কারাবাস হয়। ছাড়া পেয়ে যায় বাকি সাতজনই। জল্পনা, রাজনৈতিক প্রভাবের জেরেই রেহাই পেয়ে গিয়েছিল ধর্ষকেরা। সেই সময়টা মোবাইল ফোন, সোশাল মিডিয়ার দখলে ছিল না। এই নারকীয় ঘটনার খবর গোটা রাজ্যে বিশেষ ছড়িয়েও পড়েনি। এলাকার মানুষ আর নির্যাতিতার পরিজনদের প্রতিবাদ চাপা পড়ে গিয়েছে ওই ছোট্ট পরিসরেই। ৪২ বছরে ওই এলাকা আরও আট সরকার আর তিন মুখ্যমন্ত্রীকে দেখেছে। কিন্তু বিচার অধরাই রয়ে গিয়েছে এখনও।