আর জি করের নৃশংস ধর্ষণ-খুনের ঘটনায় তোলপাড় বাংলা। এই পরিস্থিতিতে হিন্দুত্ববাদী শিবির থেকেও শোনা যাচ্ছে প্রতিবাদ। পালটা তর্ক উঠছে, হিন্দুত্ববাদীরা নারীকে আদৌ কতখানি মর্যাদা দেন? নারী নির্যাতনের ক্ষেত্রে কী কর্তব্য, একশো বছর আগেও সে উপদেশ পেয়েছিল হিন্দু মহাসভা। কী বলা হয়েছিল সেসময়? শুনে নেওয়া যাক।
দেশ যতই উন্নতির পথে হাঁটুক, দেশজুড়ে নারী নির্যাতনের ঘটনা অব্যাহত। আর সেই নির্যাতন নিয়ে রাজনীতির টানাপোড়েনও কমার নাম নেই। নির্যাতনের ঘটনা সামনে এলেই এক দলের দিকে আঙুল ওঠে আরেক দলের। অথচ মেয়েরা বলছেন, নারীনির্যাতনের ঘটনায় কোনও দলই যে নারীর প্রতি বিশেষ সহমর্মিতা দেখিয়েছেন, তা কিন্তু নয়। আর জি কর কাণ্ডের সাম্প্রতিক আবহেও এই তরজা চলছেই। বিশেষ করে হিন্দুত্ববাদী শিবির থেকে প্রতিবাদ উঠলে অনেকেরই মনে পড়ে যাচ্ছে, আগে একাধিক নারী নির্যাতনের ঘটনায় তাদের অবস্থান কী ছিল। অথচ নারী নির্যাতন সম্বন্ধে হিন্দু মহাসভার কর্তব্য কী, একশো বছর আগেই সে উপদেশ মিলেছিল।
কী বলা হয়েছিল সে উপদেশে?
বলা হয়েছিল, “মহাসভার প্রত্যেক সভ্যকে প্রতিজ্ঞা করিতে হইবে, যে, তাঁহারা তাঁহাদের জ্ঞাতসারে হিন্দু অহিন্দু যে কোন নারীর উপর অত্যাচার হইবে, বা অত্যাচারের সম্ভাবনা হইবে, তাহার প্রতিকারের চেষ্টা করিবেন। কেহ এরূপ সফল চেষ্টা করিলে, তাহা মহাসভা অন্য সভ্যদের গোচর করিবেন। প্রতিজ্ঞা করিলেই তাহা পালিত হয় না, জানি। অনেক যুবক বিবাহের পূর্ব্বে প্রতিজ্ঞা করেন, যে, পণ লইবেন না; কিন্তু পরে, মা আত্মহত্যা করিবেন বলিয়াছেন বা তদ্রূপ অন্য কোন কারণে পণ লইয়া থাকেন। তথাপি, প্রতিজ্ঞা দ্বারা বা কোন উৎকৃষ্টতর উপায়ে হিন্দু মহাসভার প্রত্যেক সভ্যের ইহা হৃদয়ঙ্গম করিয়া দেওয়া উচিত, যে, নারীর সম্মান ও ধৰ্ম্ম রক্ষা প্রত্যেক সভ্যের একটি প্রধান কর্তব্য।”
কেবল নির্যাতনের হাত থেকে নারীকে রক্ষা করার কথাই নয়, এখানে বলা হয়েছিল কোনও নারী নির্যাতিতা হলে তাঁর প্রতি কেমন আচরণ করা বাঞ্ছনীয়। সত্যি বলতে, কোনও নারী ধর্ষিতা হলে তাঁর উপরেই লজ্জার বোঝা চাপিয়ে দেয় সমাজ। এখনও। অন্য যে কোনও অপরাধের ক্ষেত্রে যেভাবে ভিকটিম মুখ খোলেন, প্রতিবাদে সরব হন, যৌন নির্যাতনের ক্ষেত্রে অনেকে লোকলজ্জা পেরিয়ে সেইভাবে মুখ খুলতেই পারেন না। ধর্ষিতা কোনও নারীকে কার্যত একঘরে করে দেন তাঁর আশেপাশের মানুষেরা। সেই প্রসঙ্গেও বলা হয়েছিল, “মূল হিন্দু মহাসভার এবং তাহার প্রত্যেক শাখার এই একটি নিয়ম থাকা উচিত, যে, কোন কুমারী, সধবা বা বিধবা নারী কোন প্রকারে অত্যাচারিতা হইলে পরিবারচ্যুতা বা সমাজচ্যুতা হইবেন না, এবং তাঁহার আত্মীয়-স্বজনেরাও সমাজচ্যুত হইবেন না।”
১৩৩৩ বঙ্গাব্দের শ্রাবণ সংখ্যার প্রবাসী-তে প্রকাশিত হয়েছিল এমনই এক প্রতিবেদন, যার শিরোনাম ছিল ‘নারীনির্যাতন সম্বন্ধে হিন্দু মহাসভার কর্ত্তব্য’। আর সেই প্রতিবেদনেই মিলেছিল এই উপদেশগুলি, যা দলমত নির্বিশেষেই প্রযোজ্য হতে পারে এখনও।