তাজমহল আসলে শিবমন্দির। এই বিশ্বাসেই গঙ্গাজল নিয়ে সৌধের সামনে হাজির মহিলা। উদ্দেশ্য, তাজমহলে অন্দরে গিয়ে গঙ্গাজল দিয়ে পুজো করবেন মহাদেবকে। কী হল তারপর? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
কাঁধে কানওয়ার। দুদিকে গঙ্গাজলের ঘড়া। শিবের নাম করতে করতে রাস্তা দিয়ে যাচ্ছেন মহিলা। শ্রাবণমাসে এই দৃশ্য খুব একটা অস্বাভাবিক নয়। বিশেষ করে যোগীরাজ্যে এই ধরনের কানওয়ার যাত্রীদের ভিড় চোখে পড়তে বাধ্য। তবে এই মহিলার গন্তব্য কোনও শিবমন্দির নয়। বরং এমন এক সৌধ যা তৈরি করেছিলেন মুঘল সম্রাট শাহজাহান! ঠিক ধরেছেন, মহিলা গঙ্গাজল নিয়ে তাজমহলের উদ্দেশেই রওনা দিয়েছিলেন।
শ্রাবণমাসে শিবের মাথায় গঙ্গাজল ঢাললে পুণ্য হবে। এই বিশ্বাসে হাজার হাজার শিবভক্ত শামিল হন কানওয়ার যাত্রায়। দেশের প্রায় সমস্ত শিবমন্দিরেই এই সময় রীতিমতো ভিড় চোখে পড়ে। তাহলে তাজমহলই বা বাদ যায় কেন! শুনতে অবাক লাগলেও, জনপ্রিয় এই সৌধকে শিবমন্দির মনে করেন হিন্দুত্ববাদিরা। তাঁদের ধারণা এই সৌধের আসল নাম ‘তেজো মহালয়া’। এর অন্দরে শিবমূর্তি রয়েছে বলেও মনে করেন তাঁরা। তাই শ্রাবণ মাসে সেই শিবের মাথায় জল ঢালতে হাজির হয়েছিলেন যোগিরাজ্যের মহিলা। যদিও সেখানে তাঁকে ঢুকতেই দেওয়া হয়নি। নিয়ম অনুযায়ী, তাজমহল চত্বরে কোনওরূপ ধর্মীয় আচার পালন করা যায় না। এর আগে তাজমহলে নমাজ পড়তে গিয়েও বাধা পেয়েছেন অনেকে। তাই এই মহিলাকেও গঙ্গাজল নিয়ে অন্যত্র যেতে বলেন তাজমহলের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ আধিকারিক। দীর্ঘক্ষণ তাঁদের সঙ্গে বচসা চালান মহিলা। নিজেকে অখিল ভারত হিন্দু পরিষদের জেলা সভাপতি হিসেবে দাবি করে, ভিতরে ঢুকতে চান। তাঁর একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল ভিতরে গিয়ে শিবমূর্তিতে গঙ্গাজল ঢালা। কিন্তু তাজমহলের অন্দরে যে শিবমূর্তি নেই, সে কথা মানতেই চাইছিলেন না। শেষমেশ অবশ্য মানতেই হয়। বাধ্য হয়ে স্থানীয় এক মন্দিরের শিবমূর্তিতে গঙ্গাজল ঢালেন। যদিও তাঁর সমর্থনে সুর চড়িয়েছেন হিন্দু সংগঠনের সদস্যরা। তাজমহলের অন্দরে গিয়ে গঙ্গাজল ঢালা তাঁদের অধিকার বলেই দাবি করেছেন হিন্দুত্ববাদিরা।
আসলে, তাজমহল যে শিবমন্দির সেই বিতর্ক আজকের নয়। হিন্দুত্ববাদীরা নন, এই ভাবনার নেপথ্যে ছিলেন পুরুষোত্তম নাগেশ ওক। এই যে ‘তেজো মহালয়া’ নামক বিতর্কিত তত্ত্ব, তা ভেবছিলেন তিনিই। ন্দোরের একটি মরাঠা পরিবারে জন্ম পি এন ওকের। ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল আর্মির হয়ে লড়েছিলেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে। পরে অবশ্য যুদ্ধ ছেড়ে সাংবাদিকতায় আসেন তিনি। কাজ করেছিলেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রকেও। ১৯৬৪ সাল নাগাদ ‘ইনস্টিটিউট ফর রিরাইটিং ইন্ডিয়ান হিস্ট্রি’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান তৈরি করেন ওক। ইতিহাসকে গড়েপিটে নিজের মতো করে একটা ব্যাখ্যা তৈরি করার চেষ্টা করাই ছিল যার উদ্দেশ্য। এ বিষয়ে প্রচুর বইও লিখেছিলেন তিনি। তেমনই একটি তত্ত্ব এই ‘তেজো মহালয়া’। এই নিয়ে অবশ্য মামলাও চলেছে আদালতে। তাও মাঝেমধ্যেই এই নিয়ে সরব হন হিন্দুত্ববাদীরা। তাজমহলে গঙ্গাজল নিয়ে হাজির হয়ে সেই বিতর্কই উসকে দিলেন মহিলা।