বছর শুধু আসে আর যায় রাজনীতি পালটায় না। নাকি পালটায়! পালটালেও গড় একটা নকশা থাকে। তবে নতুন বছরে যদি রাজনীতিকে রেজলিউশন নিতে হয়, তাহলে কী কী হতে পারে? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
বছর আসে, বছর যায়। রাজনীতি কি বদলায়? জনতার মন বলে, বদলানো তো উচিত। যেমন চলছে, যেভাবে চলছে, সেভাবে কি আর চিরকাল চলতে পারে! আসলে, রাজনীতিতে বদল হয় না এ কথা ভুল। শাসক-বিরোধীর ভূমিকা বদলে যায়। এক একটি দলের দর্শন আলাদা। সেইমতো তাদের কাজের পদ্ধতিও বদলে বদলে যায়। তবে, খেয়াল করলে দেখা যাবে গড় একটা নকশা থাকে, যার বদল বড় একটা হয় না। এদিকে জনতার মন নিয়ে রাজনীতির কারবার। সেই জনতা কি নতুন কিছু চায়? নতুন বছরে সবাই যেমন রেজলিউশন নেয়, রাজনৈতিক দলগুলো তা নিলে, কী কী পরিবর্তনের কথা ভাবা যেতে পারে? রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের কেউ বলেন, দলগুলো যদি কয়েকটি বিষয়ে নতুন চিন্তাভাবনা করে তাহলে মন্দ হয় না!
কীরকম সেই নতুন চিন্তাভাবনা?
যেমন, প্রতিশ্রুতির প্রতিযোগিতা বন্ধ হোক। দলগুলির ক্ষেত্রে তা বন্ধ করা খানিক কঠিনই হবে বটে। তবে, কেন এই ভাবনার জন্ম? এ কথা ঠিক যে মানুষের ভালোর জন্য রাজনৈতিক দলগুলো প্রতিশ্রুতি দেবেই। আবার এখনকার শাসকদলকে হারাতে অন্য রাজনৈতিক দল আরও বেশি প্রতিশ্রুতি দিতে থাকে। আদতে যেন তা একটি প্রতিযোগিতায় পরিণত হয়। তাতে মানুষের উপকার হয় না, তা নয়। তবে, অঞ্চলভিত্তিতে মানুষের চাহিদা আলাদা। যদি তথ্য বিশ্লেষণ করে সেই চাহিদার হদিশ পাওয়া যেত, তাহলে অন্তত একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলের মানুষের সামগ্রিক জীবন যাপনের মান কীভাবে উন্নত করা যায়, তার রুটম্যাপ মিলত। অর্থাৎ, অমুক দলের অমুক রাজ্যের কর্মসূচি তমুক দল তমুক রাজ্যে লাগু করছে- ব্যাপারটা এরকম না হওয়াই ভালো। বরং বিশেষজ্ঞদের দিয়ে অঞ্চলভিত্তিতে সমীক্ষা চালিয়ে এই মানোন্নয়নের কর্মসূচি যদি তৈরি করা যায়, তাহলে আখেরে সকলেই লাভবান হবেন।
আর একটি রেজলিউশন হতে পারে সংসদকে সচল রাখা। নানা কারণে সংসদ যে প্রায়শই অচল হয়ে যায়, মানুষ তা দেখেন। সেই কারণ যে অমূলক, তা হয়তো নয়। তবে, দিনের পর দিন তা দেখতে দেখতে মানুষের মনে ভুল ধারণা জন্মায়। যাঁদের নির্বাচিত করে পাঠানো হয়ছে সংসদে, তাঁরা কী কাজ করছেন, এ প্রশ্ন জাগতে থাকে। তাতে রাজনীতিবিদদের গ্রহণযোগ্যতাতেও সমস্যা দেখা দেয়। তাই এই রেওয়াজের পরিবর্তন জরুরি বলেই মনে করছেন অনেকে।
দরকার মডেল স্টেট তৈরিতে মন দেওয়া। অর্থাৎ যা প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, তা যদি পূরণ হয়, তাহলে আর বাড়তি প্রতিযোগিতার দরকার হয় না। মানুষ দেখবেন যে, যে আশা নিয়ে তাঁরা একটি দলকে ভোট দিয়েছিলেন, সে আশা তাঁদের পূরণ হয়েছে। ফলাফল তাহলে হাতেনাতেই মিলবে। যে কোনও রাজনৈতিক দলের ক্ষেত্রেই দীর্ঘমেয়াদে টিকে থাকার এ এক আবশ্যিক শর্ত।
আবার অনেকে মনে করেন, ইস্যু ভিত্তিতে রাজনৈতিক দলগুলোর নিজস্ব অবস্থান খুব গুরুত্বপূর্ণ। হতেই পারে যে শাসক-বিরোধী দ্বন্দ্ব চলছে নানা কারণে। কিন্তু এমন কোনও ইস্যু, যা বৃহত্তর অর্থে জনজীবনকে প্রভাবিত করতে পার, সেখানে চলতি বিরোধিতার বদলে, বিশ্লেষণ দরকার। প্রয়োজনে আলোচনায় বসা যেতে পারে। তবে বিরোধিতার স্বার্থে বিরোধিতা চালিয়ে যাওয়া কোনও সমাধানের দিকে এগোতে পারে না।
অতএব, শেষ পর্যন্ত ভূমিকা নিতে হবে বিরোধীকেও। একটি বিরোধী দলকে তার কাজ চালিয়ে যাওয়ার পরিসর দিতে হবে শাসককে। তাতে বজায় থাকবে গণতন্ত্র। তেমনই বিরোধীকেও গঠনমূলক হতে হবে। মানুষ যেন বুঝতে পারেন, কেন বিরোধিতা, কীসের ভিত্তিতে বিরোধিতা। তা নেহাত রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপূরণে, নাকি সেখানে মানুষের স্বার্থ জড়িয়ে আছে। এই গঠনমূলক ভূমিকাতেই রাজনীতির পরিসর ফিরে পাবে তার স্বাস্থ্য।
এরকম পাঁচ রেজলিউশন রাজনৈতিক দল নিতেই পারে। তাতে রাজনীতি-জনতা উভয়েরই মঙ্গল।