পৃথিবীর প্রাচীনতম ভাষাগুলির মধ্যে একটি সংস্কৃত। আদি ভাষা হলেও সে আসলে লেখ্য ভাষা। কথ্য ভাষা হয়ে ওঠার প্রয়াস বা দায় কোনওদিনই ছিল না তার। আর মুখের ভাষা হিসেবে যে তার চলন খুব একটা সহজ নয়, তা-ও এক কথায় মানবেন সকলেই। তাই সকলের ভাষা কোনওদিনই হয়ে ওঠেনি সে। আর সেই কারণেই একসময় রুদ্ধ হয়ে গিয়েছে তার গতি। কিন্তু সেই ভাষাকে বাঁচাতেই এবার এক আশ্চর্য পদক্ষেপের কথা ঘোষণা করেছে উত্তরাখণ্ড। ঠিক কী সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেই রাজ্য? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
মনের ভাব প্রকাশের প্রয়োজনেই ভাষা। আর মানুষের মুখের ভাষার চলন তাই সহজতার দিকেই। পাশাপাশি ভাষা নিয়ত পরিবর্তনশীল। যুগের সঙ্গে, সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বদলাতে বদলাতে চলে সে নদীর মতো। যোগাযোগ ও মনের ভাব প্রকাশের প্রয়োজনে রূপান্তরিত হতে হতে চলে ভাষা। কিছু শব্দ সংযোজন হয়, কিছু বর্জন করতে করতে চলে সে। এ ভাবেই ভাষা বাঁচে।
যে ভাষায় এককালে লেখা হয়েছে একের পর এক সাহিত্য, পুথি, ধর্মগ্রন্থ- সময়ের স্রোতে সেই ভাষা আজ প্রায় অতীত। পৃথিবীর আদিতম ভাষার অন্যতম হলেও মৌখিক ব্যবহারের দিক থেকে তো বটেই, লিখিত হিসেবেও প্রায় অবলুপ্ত আজ সংস্কৃত। তবে সেই লুপ্তপ্রায় ভাষাকেই বাঁচিয়ে তুলতে উঠেপড়ে লেগেছে উত্তরাখণ্ড সরকার। মধ্যিখানে রাষ্ট্রভাষা নিয়ে বিতর্ক বেঁধেছিল। সেসময় প্রাচীনতম ভাষা হওয়ার কারণে সংস্কৃতকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে মর্যাদা দেওয়ার দাবি তুলেছিলেন বলিউড অভিনেত্রী কঙ্গনা রানাউত। তাঁর সেই বক্তব্যের সমালোচনা করেছিলেন অনেকেই।
আরও শুনুন: সনাতন ধর্মের পাঠ এবার আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ে, ব্যতিক্রমী সিদ্ধান্ত কর্তৃপক্ষের
তবে উত্তরাখণ্ড সরকারের নতুন পদক্ষেপ তাঁর সেই দাবিকেই বোধহয় জোরালো করে তুলতে চাইছে। সম্প্রতি সে রাজ্যের সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, উত্তরাখণ্ডের প্রত্যেকটি জেলায় অন্তত একটি করে এমন গ্রাম থাকতে হবে, যেখানে কথ্যভাষা হবে সংস্কৃত। সেসব গ্রামের বাসিন্দারা যোগাযোগ এবং মনের ভাব প্রকাশের জন্য ব্যবহার করবেন প্রায় বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া সুপ্রাচীন এই ভাষাটিই। আর সেই প্রস্তুতির জন্য বিশেষ প্রশিক্ষক রাখারও সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রশাসন। উত্তরাখণ্ডের শিক্ষামন্ত্রী ধন সিং রাওয়ত জানান, সেসব গ্রামে গিয়ে সংস্কৃতের প্রশিক্ষকেরা স্থানীয় মানুষকে শেখাবেন কীভাবে সংস্কৃত ভাষায় রোজের কাজকর্ম এবং যোগাযোগ সবটাই করা যায় স্বচ্ছন্দে।
আরও শুনুন: শিবের বন্দনা গাওয়া ‘পাপ’, এবার মুসলিম ধর্মগুরুদের রোষের মুখে শিল্পী
এখানেই শেষ নয়। সেসব গ্রামের বাসিন্দাদের পড়ানো হবে বেদ, পুরানের মতো একাধিক পুঁথি। যা সংস্কৃত ভাষাকে নিখুঁত ভাবে জানতে ও শিখতে সাহায্য করবে তাঁদের। সেসব গ্রামের নাম রাখা হবে ‘সংস্কৃত গ্রাম’। সুপ্রাচীন ভারতীয় সংস্কৃতির ধারা বহন করবে সেই গ্রামগুলি। বিশ্বের দরবারে সেই সংস্কৃতিকে তুলেও ধরবে তারা।
গোড়া থেকেই এই ভাষাকে বাঁচিয়ে রাখার পক্ষে লড়াই করে আসছে উত্তরাখণ্ড। এমনকী এ রাজ্যের দ্বিতীয় সরকারি ভাষাও সংস্কৃত। সংস্কৃত নিয়ে এত বড় পদক্ষেপও এর আগে কোনও রাজ্যকে নিতে দেখা যায়নি। কর্ণাটকে একটি মাত্র গ্রাম রয়েছে, যেখানে সংস্কৃতে কথা বলার চল রয়েছে। শিমোগা জেলার মাথুর গ্রামটিই দেশের একমাত্র সংস্কৃত ভাষায় কথা বলা গ্রাম। সংস্কৃত ভাষাকে বাঁচাতে ইতিমধ্যেই নতুন একটি পাঁচ সদস্যের কমিটি গড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে উত্তরাখণ্ড। এমনকী স্কুলশিক্ষার ক্ষেত্রেও সংস্কৃত ভাষার উপরে জোর দেওয়ার কথা ভাবছে রাজ্যটি।