যুদ্ধ মানেই তো ধ্বংস আর ক্ষতি। তবে সেই কথাটা বড়দের বোঝাতে যতটা কষ্ট, ততটাই সহজে বুঝে গিয়েছে একরত্তিরা। তাই যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ থেকে আসা নতুন বন্ধুকে আপন করে নিতে দেরি করেনি তাঁরা। সম্প্রতি কিন্ডারগার্ডেন স্কুলের বাচ্চাদের এমন ব্যবহার ভাইরাল হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। যা দেখে আবেগ ধরে রাখতে পারেনি নেটিজেনরা। কী এমন করেছে খুদেরা? আসুন শুনে নিই।
একমাসের মধ্যে যেন আমূল পাল্টে গিয়েছে দেশটা। যুদ্ধের আওয়াজ, বারুদের গন্ধ এসব ছেড়ে কোনও মতে প্রাণ হাতে করে পালিয়েছেন অজস্র ইউক্রেনবাসী। তাঁরা জড়ো হয়েছেন প্রতিবেশী দেশগুলির সীমান্তে। সেখান থেকে শরণার্থী হয়ে পৌঁছেছেন অন্যান্য দেশগুলিতে। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন অসংখ্য মহিলা আর শিশু। নিজের দেশ, শহর, ঘরবাড়ি, শিকড় ছেড়ে তাঁদের ভবিষ্যৎ আজ অন্ধকার।
এদিকে, যুদ্ধ থামার কোনও ইঙ্গিত নেই। বরং ক্রমশ আরও জোরদার হচ্ছে পারমানবিক হামলার আশঙ্কা। একাধিক বার আলোচনা-বৈঠকেও ফল মেলেনি। ফের পারমাণবিক হামলার সম্ভাবনা উসকে দিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্টের ঘনিষ্ঠ ক্রেমলিনের মুখপাত্র পেসকভ। এদিকে, অবস্থান থেকে সরতে অনড় ইউক্রেন প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনেস্কিও। ফলে সমাধান সূত্র বেরোনোর আশা ক্রমশ ক্ষীণ। পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে রাষ্ট্রপুঞ্জ। এ দিকে প্রতিদিন হামলার তেজ বাড়িয়েই চলেছে রাশিয়া। দেখতে দেখতে ২৯ দিনে পড়ল রাশিয়া- ইউক্রেন যুদ্ধ। ইউক্রেনের একের পর এক শহরে মারাত্মক হামলা হানছে রুশ সেনা। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি বেশ ভয়াবহ।
আরও শুনুন: যুদ্ধের আঁচে দেশ ছেড়ে পালিয়েছিল একাই, অবশেষে মায়ের দেখা পেল ইউক্রেনের খুদে
এক দিকে যখন ইউক্রেনে মৃত্যু, ক্ষয় আর ধ্বংসের ছবি। সেখানে স্পেনের একটি ছোটদের স্কুলে দেখা গেল অন্য ছবি। যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেন থেকে পালিয়ে আসা শরণার্থী শিশুর আপ্যায়নে ত্রুটি রাখল না সেখানকার একটি কিন্ডারগার্টেন স্কুল। নতুন বন্ধুদের জড়িয়ে ধরে স্বাগত জানাল খুদে পড়ুয়ারা। সম্প্রতি এমনই একটি ভিডিয়ো ভাইরাল হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। যেখানে দেখা গিয়েছে, ইউক্রেনের শরণার্থী বন্ধুটিকে দেখেই দৌড়ে এসেছে স্কুলের বাকি খুদেরা। সকলে মিলে তাকে জড়িয়ে ধরেছে এসে। এক লহমায় মিটে গিয়েছে দেশের দূরত্ব। তখন তাদের দেখে কে বলবে, এটাই তাদের প্রথম আলাপ।
অস্ট্রিয়ার প্রাক্তন ইউক্রেন দূত অলেক্সান্ডার শেরবা টুইটারে ভাগ করে নিয়েছেন ভিডিয়োটি। যা দেখে মুগ্ধ নেট দুনিয়া। ইতিমধ্যে ২০ লক্ষ মানুষ দেখে ফেলেছেন ওই ভিডিয়ো। সেটিকে পছন্দও করেছেন অসংখ্য মানুষ।
আরও শুনুন: এখন ব্যবসার সময় নয়! যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনে মানুষের মুখে বিনামূল্যে খাবার তুলে দিচ্ছে অসংখ্য রেস্তরাঁ
যুদ্ধের বিরাম নেই ইউক্রেনে। ক্রমশ বাড়ছে পারমানবিক হামলার আশঙ্কা। এই পরিস্থিতিতে সকলেই সকলের মতো করে ইউক্রেনের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছে। বিশেষত প্রতিবেশী দেশগুলি শরণার্থীদের জন্য খুলে দিয়েছে নিজেদের দরজা। নতুন দেশে এসে তাঁদের যাতে সমস্যা না হয়, তার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে মানবাধিকার সংগঠনগুলি। তবে ছোট ছোট বাচ্চাগুলো যে কথাটা এত সহজে বুঝে গিয়েছে, সেই কথাটা বুঝতে নারাজ তাবড় দেশের নেতারা। তাঁদের যুদ্ধের সিদ্ধান্তে যখন গোটা পৃথিবীকে ক্রমশ বিপন্নতার মুখে ঠেলে দিয়েছে, সেখানে খুদেদের এই ব্যবহার আবেগে ভাসিয়েছে নেটিজেনদের।