মহাকুম্ভে বহু দেশের প্রতিনিধি উপস্থিত থাকবেন ১ ফেব্রুয়ারি। প্রায় ৭৩টি দেশের প্রতিনিধি অংশ নেবেন মহাকুম্ভের মিলন মেলায়। বিদেশমন্ত্রকের তরফে এই আয়োজন করা হবে। কিন্তু এবছরে ত্রিবেণী-স্নানে শামিল হতে নারাজ ইউক্রেন। নেপথ্যে রয়েছে কোন কারণ? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
রাশিয়া বনাম ইউক্রেন। রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের সাক্ষী গোটা বিশ্ব। এমন এক যুদ্ধ, যা বদলে দিয়েছে যুদ্ধের ধরন। যে যুদ্ধের শুরু আছে, কিন্তু শেষ আছে কি? বিজিত বা নির্জিত পক্ষ আছে কি? উত্তর খুঁজছে আন্তর্জাতিক রাজনীতি। সেই রক্তক্ষরণের ভিতর বসে কি শান্তির ললিত বাণী ব্যর্থ পরিহাসের মতো শোনায়? ইউক্রেন বলছে, নিশ্চিতই তা-ই। আর তাই রক্তের সমুদ্দুর পেরিয়ে ত্রিবেণী-স্নানে শামিল হতে নারাজ সে-দেশ।
মহাকুম্ভে বহু দেশের প্রতিনিধি উপস্থিত থাকবেন ১ ফেব্রুয়ারি। বিদেশমন্ত্রকের তরফে এই আয়োজন। জানা গিয়েছিল, প্রায় ৭৩টি দেশের প্রতিনিধি এখানে অংশ নেবেন। অন্যান্য দেশের সঙ্গে থাকছে রাশিয়া এবং ইউক্রেনও। তবে সম্প্রতি ইউক্রেনের ভারতীয় রাষ্ট্রদূত সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, কুম্ভে তাঁরা অংশ নিতে চাইছেন না। দেশের উপর আগ্রাসনের রোলার চালানো রাশিয়া যেখানে উপস্থিত, সেখানে তাঁদের পক্ষে থাকা সম্ভব নয়। যুদ্ধই এর নেপথ্য কারণ। যুদ্ধের দরুন যে ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে এসেছে ইউক্রেনে, মৃত্যু-রক্ত-শিশুদের নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়া- মহিলাদের উপর হওয়া যৌন নির্যাতনের কথা তুলে এনেছেন তিনি। বলেছেন, সেই যন্ত্রণা অহরহ তাঁদের পীড়া দিচ্ছে। এই যন্ত্রণাক্লিষ্ট মুহূর্তে দাঁড়িয়ে রাশিয়ার সঙ্গে একাসনে বসে শান্তির স্নান অন্তত তাঁদের পক্ষে সম্ভব নয়। ইউক্রেনের বক্তব্য, যে রক্তগঙ্গা বয়েছে, সেই রক্তের স্রোত আর দাগ ত্রিবেণীর পবিত্র জলধারাও মুছে দিতে পারে না।
:আরও শুনুন:
লাখ টাকার চাকরি ছেড়ে কুম্ভমেলায় বিমান সেবিকা, প্রয়াগের ভিড়ে ভাইরাল আরও এক সাধ্বী
প্রসঙ্গত রামায়ণের হনুমান চরিত্রের উদাহরণ টেনেছেন ইউক্রেনের প্রতিনিধি। অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করার সংকল্প ছিল হনুমানের। সমস্ত আগ্রাসনের মুখে দাঁড়িয়েও ধর্মের পক্ষে, ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়িয়েছিল এই মহাকাব্যিক চরিত্র। সেই দৃষ্টান্ত তুলে ধরেই ইউক্রেনের বক্তব্য, তাঁরাও সত্যের পক্ষে থাকতে চান। সেটিই তাঁদের সংকল্প। আর তাই কুম্ভের মিলনমেলাকে অভিনন্দন জানালেও, সেখানে অংশগ্রহণ যে সম্ভব নয়,তা দ্বিধাহীন জানিয়ে দিয়েছে ইউক্রেন।
যদিও এর আগে দেখা গিয়েছিল যে, রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে আগত সাধুরা শান্তিপ্রার্থনা করেছিলেন। যুদ্ধ পেরিয়ে আধ্যাত্মিক পরিসরে মিলনের শান্তিবাণীই শুনিয়েছিলেন তাঁরা। দেখা যাচ্ছে, কূটনৈতিক স্তর যুদ্ধের বাধা পেরোতে পারল না। তবে কি রাজনীতি পেরিয়ে সাংস্কৃতিক পরিসরেই মানুষ এই রক্তক্ষয়ী বাস্তবতা পেরিয়ে সভ্যতার দিকে আর একটু এগোতে পারে? সে প্রশ্ন ভাববারই বটে!