বিভিন্ন সাইটে কেনাকাটা, টাকার লেনদেন, অনলাইনে গাড়ি বুক করে বিভিন্ন জায়গায় যাতায়াত। এই সবকটি কাজেই মোক্ষম জিনিসটি হল হাতের ফোন। সেইসঙ্গে একটি বিষয় একেবারে অপরিহার্য, তা হল ওটিপি। আর সেই ওটিপি জালিয়াতি করেই লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার খেলা চলছে। সেই দুষ্টচক্র রুখতেই এবার নয়া ভাবনা কেন্দ্রের।
অনলাইন লেনদেনের ক্ষেত্রে ওটিপি যে পদে পদে জরুরি, সে তো আমি আপনি সকলেই জানি। কিন্তু এই ওটিপি-র চক্করে অনলাইন জালিয়াতির ঘটনাও আজকাল যাকে বলে জলভাত। ধরুন, অনলাইনে কোনও ব্যক্তির সঙ্গে কিছু কেনাবেচা চলছে, সেখানে অন্যজন জানালেন আপনার ফোনে একটি ওটিপি গিয়েছে। মিথ্যে বলে, নানান গল্পের ফাঁদ পেতে আপনাকে বোকা বানিয়ে জেনে নিলেন আপনার ফোনে আসা ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড। আপনিও সরল বিশ্বাসে তা পাঠিয়ে দিলেন, আর তারপরেই দেখলেন ব্যাঙ্কের মেসেজ। দেখা গেল বিপুল অঙ্কের টাকা উড়ে গিয়েছে অ্যাকাউন্ট থেকে।
ইদানীং কালে এহেন জালিয়াতির ঘটনা বড্ড চেনা। পুলিশ, প্রশাসনের তরফেও বারবার এ বিষয়ে সতর্ক করা হয়ে থাকে। বলা হয়, কিছুতেই, কারও সঙ্গে ভাগ করে নেবেন না আপনার মোবাইলে আসা ওটিপি। তবুও বহুজনই অপরাধীর কথার ফাঁদে পা দিয়ে সেই ওটিপি বলে দিয়ে ডেকে আনেন বিপদ। আর তাই, বারবার ঘটে চলা এই অপরাধকে নিয়ন্ত্রণ করতে এবার নয়া উপায় কেন্দ্রের।
টেলিকম পরিষেবা নিয়ন্ত্রক সংস্থা তথা ‘ট্রাই’ এবার জানাল, চলতি বছরই ৩০ নভেম্বরের পর বন্ধ হতে পারে সংস্থার তরফ এই ওটিপি আদানপ্রদানের পরিষেবা। বিভিন্ন ভুয়ো ফোনকল ও অবাঞ্ছিত মেসেজ ঢোকা বন্ধ করতে সেসব সংস্থাকে আলাদা করে চিনে নেওয়ার নতুন নিয়মকানুন তৈরি করেছে ট্রাই। আর তাই সর্বপ্রথমে সংস্থাগুলিকে থামাতে হবে তাদের তরফ থেকে পাঠানো বিভিন্ন অহেতুক মেসেজ। তাহলেই ভুয়ো মেসেজের সাইটগুলি চিহ্নিত করা সুবিধাজনক হবে। আর এই নিয়ম চালু হবার দিন হিসেবে ১ ডিসেম্বরকেই নির্ধারিত করেছে ট্রাই।
তবে সংশয় কিন্তু থেকেই যায়। ১ ডিসেম্বরের মধ্যে যদি টেলিকম সংস্থাগুলি সত্যিই তাঁদের মেসেজ পরিষেবা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারে সেক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি সমস্যার মুখে পড়বেন গ্রাহক। যদিও টেলিকম সংস্থাগুলির দাবি, এই নতুন নিয়মগুলি চালু হলে তা গ্রাহকদের জন্যই সুবিধাজনক হবে। এতে করে তাঁদের ব্যক্তিগত তথ্য থেকে শুরু করে আর্থিক নিরাপত্তা সবটাই বৃদ্ধি পাবে। পাশাপাশি টেলিকম সংস্থাগুলি জানিয়েছে, নতুন নিয়ম যাই আসুক না কেন, নিজেদের ব্যক্তিগত তথ্যগুলিকে সুরক্ষিত রাখতে সমস্ত গ্রাহকদের উচিত, মোবাইলের টু-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশনের সেটিং চালু করা। একইসঙ্গে সন্দেহজনক লিঙ্কে ক্লিক করা বা অজানা অ্যাপ ডাউনলোড করার বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে সমস্ত গ্রাহককে। আর ডিভাইসটিকে সুরক্ষিত রাখতে নিয়মিত ডিভাইসের বিভিন্ন সফ্টওয়্যারগুলিকে আপডেট করতে হবে। শুধু তাই নয়, শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে নিরাপদ রাখতে হবে সমস্ত অ্যাকাউন্টগুলি।
একাধিক সংস্থা ওটিপি বন্ধ করার কথা ভাবলেও, কোনও কোনও সংস্থা জানিয়েছে, হয়তো পুরপুরি এই পরিষেবা বন্ধ নাও হতে পারে। তবে ওটিপি আসতে দেরি হবে, কিংবা সবসময় আসবে না- এমন অনেক সমস্যাই হয়তো হতে পারে। সংস্থাগুলি যাই বলুক, হঠাৎ করেই এই সিদ্ধান্ত যে মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীদের দুর্ভোগ বাড়াতে পারে, সেকথাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।