দিন কয়েক ধরেই হিন্দি ভাষা বিতর্কে উত্তাল দেশ। অভিনয় জগৎ থেকে শুরু হয়ে বিতর্ক পৌঁছেছে রাজনীতির আঙিনাতেও। আঞ্চলিক ভাষার উপর হিন্দির আগ্রাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে কিছুদিন আগেই একজোট হতে দেখা গিয়েছিল কর্ণাটককে। রাজনৈতিক বিভেদ মুছে ফেলে দক্ষিণী অভিনেতার পাশে দাঁড়িয়েছিলেন অনেকেই। হিন্দি ভাষার হয়ে সওয়াল করতে গিয়ে কার্যতই সমালোচনার মুখে পড়েন বলিউড অভিনেতা অজয় দেবগন। এবার সেই বিতর্ককেই আরও এক ধাপ উসকে দিলেন উত্তরপ্রদেশের এক মন্ত্রী। অজয় দেবগনের পাশে দাঁড়াতে গিয়ে আলটপকা মন্তব্যই করে বসলেন তিনি। কী বলেছিলেন সেই মন্ত্রী? আসুন, শুনে নিই।
ভাষা, বিশেষত মাতৃভাষা এমনই জিনিস, যা সব কিছুর উর্ধ্বে। ভাষার অধিকারের দাবিতে আন্দোলন থেকে শুরু করে রক্তক্ষয়, সবকিছুরই সাক্ষী থেকেছে ইতিহাস। আঞ্চলিক ভাষার উপরে বিশেষ কোনও ভাষার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে বারবারই গর্জে উঠেছে মানুষ। এ কোনও নতুন কথা নয়।
সম্প্রতি হিন্দি ভাষার হয়ে মুখে খুলে বিতর্ক বাড়িয়েছিলেন বলিউড অভিনেতা অজয় দেবগন। দক্ষিণী অভিনেতা সুদীপ কিচ্চা কথায় কথায় বলে ফেলেছিলেন, হিন্দি দেশের রাষ্ট্রভাষা নয়। বিষয়টি নিয়ে রীতিমতো চটে ওঠেন অজয়। হিন্দি দেশের রাষ্ট্রভাষা ছিল এবং থাকবে বলে টুইটারে বাগবিতন্ডাতেও জড়ান তিনি। এরপরেই দক্ষিণী অভিনেতার পাশে দাঁড়াতে এগিয়ে আসে গোটা কর্নাটক। সমস্ত বিভাজন, দলভেদ ভুলে হিন্দি ভাষার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন রাজ্যের প্রায় সমস্ত দলের নেতা-মন্ত্রীরা।
তারপর থেকেই বিতর্ক চলছেই। দিন কয়েক আগে দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহও হিন্দি ভাষার উপর জোর দেওয়ার কথা বলেছিলেন। সেখান থেকেই বিতর্কের সূত্রপাত। স্বাভাবিক ভাবেই দুই অভিনেতার বাগযুদ্ধ সেই বিতর্কেই নতুন করে ঘৃতাহুতি দিয়েছে।
আরও শুনুন: ‘হিন্দি রাষ্ট্রভাষা নয়’, রাজনৈতিক রং ভুলে ভাষার প্রশ্নে এককাট্টা কর্ণাটকের নেতা-মন্ত্রীরা
শাহ-র দেখানো পথে মুখ খুলে ফের বিতর্ক বাড়ালেন উত্তরপ্রদেশের এক মন্ত্রী। অজয় দেবগন আর কিচা সুদীপের বাগবিতন্ডার প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে সাংবাদিকদের সামনে উত্তরপ্রদেশের মন্ত্রী সঞ্জয় নিষাদ বলে বসেন, “যাঁরা হিন্দি ভাষাকে ভালবাসেন না, তাঁরা হয় বিদেশি, নয়তো তাঁদের সঙ্গে বিদেশি শক্তির যোগ রয়েছে। তাই যাঁরা হিন্দিতে কথা বলতে পারেন না, তাঁদের দেশ ছেড়ে অন্য কোথাও গিয়েই থাকা উচিৎ।” না, এখানেই থামেননি সঞ্জয়। তাঁর আরও দাবি, ভারতীয় সংবিধান অনুযায়ী, ভারত হিন্দুস্থান, যাঁর অর্থই নাকি হিন্দি ভাষাভাষিদের দেশ। ফলে যাঁরা হিন্দি বলতে পারেন না, তাঁদের হিন্দুস্থানে কোনও জায়গা নেই।
স্বাভাবিক ভাবেই মন্ত্রীর এ হেন মন্তব্যের পরেই নিন্দার ঝড় উঠেছে। ভারত বরাবরই নানা ভাষা, নানা মতের দেশ। সেখানে হিন্দি ভাষার পক্ষে এ হেন সওয়াল করে কার্যত বিপাকেই পড়েছেন ওই মন্ত্রী। ‘নির্বল ইন্ডিয়ান শোষিত হামারা আম দল’ নামে উত্তরপ্রদেশের একটি স্থানীয় দলের প্রতিষ্ঠাতা সঞ্জয়, যা বিজেপিঘনিষ্ঠ বলেও পরিচিত।
এই পরিস্থিতিতে বিতর্কে রাশ টানতে মুখ খুলতে বাধ্য হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। শনিবার দিল্লির বিজ্ঞান ভবনে একটি অনুষ্ঠানে আঞ্চলিক ভাষা ব্যবহারের উপরে জোর দিয়েছেন তিনি। আদালতের ক্ষেত্রেও সেই আঞ্চলিক ভাষা ব্যাবহারের কথাই বলেন মোদি। তাতে দেশের বিচারব্যবস্থার উপরে আমজনতার ভরসা ও বিশ্বাস বাড়বে বলেই মন্তব্য তাঁর।
আরও শুনুন: নিরন্নের মুখে খাবার তুলে দেওয়াই ধর্ম! ইউটিউব চ্যানেল খুলেই সেই কাজই করে চলেছেন তিন বন্ধু
হিন্দি ভাষার একাধিপত্য না আঞ্চলিক ভাষার স্বাধীনতা,এই বিতর্কে উত্তাল গোটা দেশ। এই পরিস্থিতিতে আবার আজব দাবি করে বসেছেন বলিউড অভিনেত্রী কঙ্গনা রানাউত। হিন্দি বিতর্কে মুখ খুলে তাঁর দাবি, হিন্দি নয়, সংস্কৃতকেই রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দেওয়া উচিৎ। এর পিছনে কঙ্গনার যুক্তি, হিন্দি, কন্নড় থেকে শুরু করে গুজরাটি কিংবা তামিল, এ সমস্ত ভাষার থেকেই অনেক পুরোনো সংস্কৃত ভাষাটি। শুধু তা-ই নয়, এ সমস্ত ভাষারই উৎস-ভাষা সংস্কৃতই। ফলে সংস্কৃত রাষ্ট্রভাষা নয় কেন? প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছেন অভিনেত্রী। পাশাপাশি হিন্দির আগ্রাসন নিয়ে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের পাশে দাঁড়াতেও ভোলেননি কঙ্গনা। তাঁর মতে, হিন্দি ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে না মানার অর্থ কেন্দ্রীয় সরকারকে অস্বীকার করা। প্রসঙ্গত, বিজেপি সরকার ঘনিষ্ঠ বলে যথেষ্ট সুনাম রয়েছে অভিনেত্রীর। ফলে হিন্দি বিতর্কে যে তিনি অজয় দেবগনের পাশেই দাঁড়াবেন, তা তো জানা কথাই। সব মিলিয়ে হিন্দি-আঞ্চলিক ভাষা বিতর্ক যে এখনই থামার নয়, তা এররকম ভাবে পরিষ্কার বলেই মনে করছেন ওয়াকিবহাল মহল।