ইসলাম ধর্মের পীঠস্থান মক্কা। কিন্তু তা নাকি আসলে মক্কেশ্বর মহাদেবের মন্দির। বহু হিন্দু ভক্তই এই কথা বিশ্বাস করেন। আর তাঁদের ধারণাতেই কার্যত স্বীকৃতি দিল পুরীর শংকরাচার্যের বয়ান। আসুন শুনে নিই ঠিক কী বললেন তিনি?
জ্ঞানবাপীতে পুজো করার অধিকার চেয়ে সরব হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা। তাঁদের বিশ্বাস এই মসজিদেই আছে শিবলিঙ্গ। সেই প্রসঙ্গে মন্তব্য করতে গিয়েই পুরীর শংকরাচার্য স্বামী নিশ্চলানন্দ সরস্বতী বলেন, ‘কাশী হিন্দুদেরই। আর শুধু জ্ঞানবাপী কেন? আমাদের তো মক্কাতেও পুজো করার অধিকার দেওয়া উচিত। মক্কায় মক্কেশ্বর মহাদেব বিরাজমান। মানবাধিকারের খাতিরেই মক্কায় পুজো করার অধিকার দেওয়া উচিত।’ সঙ্গত কারণেই শংকরাচার্যের এই দাবিকে ঘিরে নতুন করে শুরু হয়েছে চর্চা।
আরও শুনুন: মুসলিমদের থেকে দীপাবলির সামগ্রী কেনা ‘শাস্ত্রবিরোধী’, হিন্দু নেতার দাবিতে বিতর্ক
জ্ঞানবাপী বিতর্কে কিছুদিন আগেই উত্তাল হয়েছিল দেশ। মসজিদের ওজুখানা থেকে শিবলিঙ্গ উদ্ধার হয়েছে বলে দাবি ওঠে। পালটা দাবিতে জানানো হয়, সেটি আসলে শিবলিঙ্গ নয়, ফোয়ারা। পুরো বিষয়টিই এখন আদালতের বিচারাধীন। তবে জনশ্রুতি আর বিশ্বাস যে সবসময় আইন মেনে চলে তা নয়। হিন্দুদের একাংশের দৃঢ় বিশ্বাস যে, শিবলিঙ্গ মসজিদের মধ্যেই আছে। এদিকে ভারতের ইতিহাস বলে, বিদেশি আক্রমণে ভারতবর্ষের বহু মন্দিরই ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছিল। ফলত এই ধরনের বিশ্বাস বা জনশ্রুতি যে একেবারে অযৌক্তিক, তা এক কথায় বলা যায় না। সেরকমই বিশ্বাস যে, ইসলাম ধর্মের পীঠস্থান হিসাবে পরিচিত মক্কাতে আসলে মক্কেশ্বর মহাদেবের অধিষ্ঠান। হিন্দু মহাসভার আলিগড় শাখা যে হিন্দু ক্যালেন্ডার প্রকাশ করেছিল, সেখানেও মক্কা স্থান পেয়েছিল শিব মন্দির হিসাবেই। সেই বিশ্বাসই যেন পোক্ত হল শংকরাচার্যের স্বীকৃতিতে। শংকরাচার্যের আরও দাবি যে, ভারত হিন্দু রাষ্ট্র হওয়ার দিকে এগোচ্ছে। ভারত যদি নিজেকে হিন্দু রাষ্ট্র হিসাবে ঘোষণা করতে পারে, তবে বিশ্বের অন্তত ১৫টি দেশ নিজেদের হিন্দু রাষ্ট্র হিসাবে ঘোষণা করবে।
আরও শুনুন: হিন্দুরা সুরক্ষিত নয়, দাবি জানিয়ে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি ১৮০টি প্রবাসী হিন্দু সংগঠনের
এদিকে জ্ঞানবাপী বিতর্ক আপাতত আদালতের বিচারাধীন হলেও, শংকরাচার্য সাফ জানিয়েছেন, কাশী শিবের নগরী। শিব ছাড়া সেখানে আর কেউ থাকতে পারেন না। তাঁর বক্তব্য, বিভিন্ন ধর্মের উৎস যদি খুঁজে দেখা যায়, তবে সনাতন ধর্মের কাছেই ফিরতে হবে। সেটিই শিকড়। আমেরিকার নিরিখে বর্তমানে আধুনিকতার যে মানদণ্ড খাড়া করা হয়, তা নিয়েও খুশি নন শংকরাচার্য। তাঁর মতে, এই আধুনিকতা আসলে মানবজাতিকেই বিনাশের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। সনাতন ধর্মকেই প্রাচীন ধর্মের স্বীকৃতি দিয়ে তাই তিনি বলেছেন, সনাতন ধর্মই মানুষের সবথেকে কল্যাণকারী ধর্ম। সেটিকেই অনুসরণ করা উচিত। মক্কাতে যে তাই মক্কেশ্বরই আছেন, সে-কথা বলতেও তাই দ্বিধা করেননি তিনি। স্বভাবতই শংকরাচার্যের এই মন্তব্যের পর নতুন করে শুরু হয়েছে চর্চা। জ্ঞানবাপী নিয়ে বিতর্ক চলছেই। তাজমহল, কুতুবমিনার নিয়েও বিতর্ক থেকে থেকেই মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। সেই তালিকায় কি এবার নয়া সংযোজন হল মক্কা? অন্তত এই নিয়ে হিন্দুদের একাংশ যে দাবিতে সোচ্চার হবে, এমনটাই মনে করছেন অনেকে।