দেশজুড়ে ঘটে চলা সাম্প্রদায়িক ঘৃণা আর বিদ্বেষের ছবির মাঝে যেন একঝলক টাটকা বাতাস। যা বুঝিয়ে দিয়ে গেল, দল ধর্ম জাতপাত সবকিছু অতিক্রম করেও মনুষ্যত্ব জেগে থাকে কোথাও। এমনই এক ঘটনার কথা সম্প্রতি জানিয়েছেন এক মহিলা। কী ঘটেছে ঠিক? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
সমীক্ষা যাই বলুক, পরিসংখ্যান যে তথ্যই দিক, কোনও কোনও ঘটনা তবুও প্রমাণ করে দেয় যে মানবিকতা এখনও হারিয়ে যায়নি। সম্প্রতি সে কথাই যেন ফের বুঝিয়ে দিল সোশ্যাল মিডিয়ার একটি পোস্ট। যাত্রাপথে গাড়ি থামিয়ে অ্যাপ ক্যাব চালককে নমাজ পড়ার সুবিধা করে দিলেন এক মহিলা। আর সেই ঘটনার কথাই তিনি ভাগ করে নিয়েছেন নিজের সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে। পরস্পরের প্রতি বিদ্বেষ নয়, বরং সহমর্মিতা আর সম্প্রীতির বার্তা ছড়িয়ে পড়ুক, পোস্টের মধ্যে দিয়ে এই বার্তাই দিতে চেয়েছেন তিনি।
আরও শুনুন: ‘সংখ্যালঘুদের বঞ্চিত করার নয়া আইন সই হবে ওখানে’, মোদির জন্য টেবিল বানাতে নারাজ শিল্পী
কী ঘটেছে ঠিক?
মুম্বাইনিবাসী প্রিয়া সিং নিজের পোস্টে জানিয়েছেন, ঘটনার দিন একটি অ্যাপ ক্যাব বুক করেছিলেন তিনি। গাড়ি আসে সময়মতোই। কিন্তু যাত্রা শুরুর মিনিট দশেকের মধ্যেই ওই মহিলা শুনতে পান, চালকের মোবাইল ফোনে আজানের সুর বাজছে। তার ফলেই ওই মহিলার কাছে চালকের ধর্মপরিচয় স্পষ্ট হয়ে যায়। আর সঙ্গে সঙ্গেই তিনি জানতে চান, রোজা ভেঙে ইফতার করেছেন কি না ওই ব্যক্তি। জবাবে চালক জানিয়েছিলেন, নতুন ভাড়া এসে গিয়েছিল, আরোহীকে গাড়িতে তুলতে হবে, তাই চলার পথেই তাড়াহুড়ো করে উপবাস ভঙ্গ করেছেন তিনি। এরপর তাঁকে চমকে দিয়ে ওই মহিলা জানতে চান, তিনি কি নমাজ আদায় করতে চান? নিছক পেশাদার যোগাযোগের মধ্যে স্বাভাবিকভাবেই এমন কথা শোনার আশা করেননি ওই অ্যাপ ক্যাবের চালক। বিশেষ করে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়াই যেখানে এই গাড়িগুলির বাঁধাধরা কর্তব্য। সুতরাং এই কথার পর তিনি অত্যন্ত সংকোচের সঙ্গে মহিলার কাছে নমাজ পড়ার অনুমতি চেয়েছিলেন।
আরও শুনুন: কোরান পাঠ করেই শুরু হয় পূজা, সম্প্রীতির ধারা বয়ে নিয়ে চলেছে কর্ণাটকের মন্দির
বলাই বাহুল্য, চালকের নমাজ পড়ায় কোনও আপত্তি করেননি প্রিয়া সিং। বরং সাহায্য করেছেন তাঁকে। রাস্তার একপাশে গাড়ি পার্ক করার পর নিজেদের জায়গা অদলবদল করে নেন তাঁরা। প্রিয়া চলে আসেন সামনের সিটে, যাতে ওই ব্যক্তি পিছনের আসনে বসে নমাজ পড়ে নিতে পারেন। পরবর্তী রাস্তা জুড়ে সম্প্রীতি প্রসঙ্গেই কথা বলেন তাঁরা।
আরও শুনুন: মন্দির চত্বরেই আয়োজন ইফতারের, মুসলমান পড়শিদের আমন্ত্রণ স্বয়ং পুরোহিতের
এই ঘটনার কথা শুনে ওই মহিলাকে প্রশংসায় ভরিয়ে দিয়েছেন নেটিজেনেরা। তবে প্রিয়া কিন্তু তাতে অবিচল। তাঁর বক্তব্য, “আমার মা-বাবা আমাকে এমনই এক ভারতের কথা জানিয়েছেন।” সাম্প্রদায়িক বিভেদের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে পরস্পরের প্রতি মানবিকতা আর সহমর্মিতার গল্প বলুক এমন ঘটনাগুলি, এইটুকুই দাবি তাঁর।