‘ভারতমাতা কি জয়’, এই স্লোগানের রচয়িতা একজন মুসলিম। জয় হিন্দ কথাটিও লিখেছিলেন একজন মুসলমানই। কিন্তু এই তথ্য কি সংঘ পরিবার জানে? সম্প্রতি এমনই প্রশ্ন ছুড়েছেন কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন। ঠিক কোন প্রসঙ্গে একথা বললেন বর্ষীয়ান বামনেতা? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
শিয়রে লোকসভা ভোট। প্রচারে ব্যস্ত দেশের প্রায় সমস্ত রাজনৈতিক দলই। একদিকে সরকার পক্ষ কাজের খতিয়ান তুলে আবারও ক্ষমতায় আসার দাবি জানাচ্ছে। পালটা সেইসব কাজের ফাঁক ফোকর দেখিয়ে সরকার বদলের কথা বলছেন বিরোধীরা। এই আবহে তরজা শুরু হয়েছে দুটি জনপ্রিয় স্লোগান নিয়ে। যার মধ্যে রয়েছে ‘ভারত মাতা কি জয়’ এবং ‘জয় হিন্দ’।
আরও শুনুন: যদি ভোটে দাঁড়াতেন কাজী নজরুল ইসলাম, কী থাকত নির্বাচনী ইস্তাহারে?
পরাধীন ভারতে সকলকে এক হয়ে লড়াইয়ে নামার কথা বলতেন স্বাধীনতা সংগ্রামীরা। যার যতটুকু সামর্থ, যতটুকু ক্ষমতা, সেটুকুই দেশমাতৃকার সেবায় কাজে আসুক। সেখানে হিন্দু-মুসলিম কোনও ভেদাভেদ নেই। গান কবিতা সবেতেই ধরা পড়ত এক হওয়ার আহ্বান। এই সময়কার কিছু স্লোগান এখনও একইভাবে প্রাসঙ্গিক এবং জনপ্রিয়। কে বা কারা স্লোগান লিখেছিলেন সেসব নিয়ে মাথা না ঘামালেও স্লোগান ব্যবহার করতে এক পা এগিয়ে থাকেন রাজনৈতিক নেতারা। দেশের কথা গর্বের সঙ্গে দশের সামনে বলতে গেলেই, বলা হয় ‘ভারত মাতা কি জয়’। আগুন ঝরানো বক্তব্যের শেষে আপনা থেকেই বেরিয়ে আসে ‘জয় হিন্দ’ এর মতো স্লোগান। সম্প্রতি, এই দুই স্লোগানকে সামনে রেখেই সংঘ পরিবারের উদ্দেশে প্রশ্ন ছুড়েছেন কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন। বর্ষীয়ান বাম নেতার দাবি, এই দুটি স্লোগানই লিখেছেন দুজন মুসলমান স্বাধীনতা সংগ্রামী। কিন্তু সেই খোঁজ সংঘ পরিবারের কাছে কি আদৌ রয়েছে? আর এই প্রশ্নের পরই তাঁর কটাক্ষ, এই স্লোগান মুসলমানের লেখা জানলে সংঘীরা এর ব্যবহার বন্ধ করে দেবেন?
আরও শুনুন: ভোটের মুখে বড় বড় নেতার থেকে ফোন পাচ্ছেন? সাধু সাবধান!
কিন্তু কোন প্রসঙ্গে এমন কটাক্ষ করলেন বিজয়ন?
নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণার আগেই দেশজুড়ে সিএএ কার্যকর করেছে কেন্দ্র। এই নিয়ে নরেন্দ্র মোদীর সরকারকে তোপ দেগেছে বিরোধীরা। বাংলা সহ বিভিন্ন রাজ্যে উঠেছে প্রতিবাদের ঝড়। সেই তালিকায় যোগ হয়েছে কেরলও। সেই সিএএ-র বিরোধিতায় আয়োজিত সভা থেকেই সংঘ পরিবারের উদ্দেশে প্রশ্ন ছুড়েছেন বিজয়ন। এর আগে সিএএ বিরোধিতায় সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থও হয়েছে কেরল সরকার। প্রথম থেকেই এই আইনকে অসাংবিধানিক বলে দাবি করে এসেছে সে রাজ্যের সরকার। একইসঙ্গে এই আইন মুসলিমদের বিপক্ষে এই দাবিও উঠেছে। এবার সরাসরি ‘ভারত মাতা কি জয়’ স্লোগান-এর কথা উল্লেখ করে সংঘ পরিবারকে কটাক্ষ করলেন বিজয়ন। তাঁর কথায়, এই স্লোগান লিখেছিলেন আজিমুল্লা খান। আর ‘জয় হিন্দ’ এর রচয়িতা আবিদ হাসান সরফানি। স্বাধীনতার ইতিহাসে দুজনেরই অবদান কম নয়। কিন্তু সংঘ পরিবারের সদস্যরা আদৌ সেসব জানে কি না, সেই নিয়ে ব্যঙ্গ করেছেন বিজয়ন। একইসঙ্গে স্বাধীনতার ইতিহাসে মুসলিমদের অবদানও কিছুমাত্র কম নয়, বিভিন্ন উদাহরণ তুলে তা মনে করিয়ে দিয়েছেন বিজয়ন। সবমিলিয়ে নির্বাচনের আগে বিজেপি এবং সংঘ পরিবারকে বিঁধে জোরালো মন্তব্য করতে শোনা গিয়েছে কেরলর মুখ্যমন্ত্রীকে। যা লোকসভা নির্বাচনেও প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।