ব্যবহার শেষ হলেই ফুরোয় গুরুত্ব। অর্থাৎ ‘ইউজ অ্যান্ড থ্রো’। আজকাল বিয়েও যেন অনেকটা সেরকমই হয়ে উঠেছে। অন্তত তরুণ প্রজন্মের কাছে বিয়ের ধারণা যে আগের থেকে অনেকটাই বদলে গিয়েছে, এমনটাই মনে করছে কেরলের এক আদালত। এ বিষয়ে আর কী পর্যবেক্ষণ আদালতের? আসুন, শুনে নিই।
বিয়ে এমন এক প্রতিষ্ঠান, যা দুটি মানুষকে বেঁধে রাখে বন্ধনে। ভারতীয় সংস্কৃতিতে বিয়ের যে বিশেষ গুরুত্ব আছে, তা আমরা জানি। অনেক সময় এমনও কল্পনা করা হয় যে, যে দুজন মানুষ বৈবাহিক বন্ধনে আবদ্ধ হন, তাঁদের সম্পর্ক কেবল এক জন্মের নয়। জন্মান্তরেও তাঁরা বন্ধনে জড়িয়ে পড়েন। কিন্তু সেই চিরায়ত ধারণা কি এখনও বহাল? কেরলের এক আদালত বলছে, মোটেও না। বিয়ে এবং তার পবিত্রতা, বৈবাহিক সম্পর্কের গুরুত্ব সম্পর্কে তরুণ প্রজন্মের দৃষ্টিভঙ্গি একেবারেই আলাদা। পবিত্র ভাবা তো দূরের কথা, বেশিরভাগ তরুণ-তরুণী এখন বিয়েকে ক্ষতিকর এবং একটা ঝামেলার ব্যাপার বলেই মনে করেন।
আরও শুনুন: বেকারত্বের জেরে বাড়ছে কমবয়সিদের আত্মহত্যার ঘটনা, তালিকার শীর্ষে কোন শহর?
আদালতের পর্যবেক্ষণ, বিয়ে যেন আজকাল ‘ইউজ অ্যান্ড থ্রো’ সংস্কৃতিতে আক্রান্ত। যে-সংস্কৃতি কেবল সাময়িকের উপর জোর দেয়, চিরকালীন ব্যাপার-স্যাপারকে স্বীকৃতি দেয় না। সেই সংস্কৃতির প্রভাব নষ্ট করেছে বৈবাহিক সম্পর্ক বা বন্ধনের গুরুত্বকেও। একদিক থেকে দেখত গেলে, আসলে এর ফলে বিপন্ন হচ্ছে পারিবারিকতা। পরিবারের বন্ধনও আলগা হয়ে যাচ্ছে। যার ফলে বদলে যাচ্ছে সমাজের মূল গঠনই। আদালতের দাবি, অধিকাংশ তরুণ এখন স্ত্রী বা বউকে চিরকালের এক ঝঞ্ঝাট হিসাবেই ধরে নেন। ইংরেজি প্রতিশব্দ উল্লেখ করে বিচারকরা বলেন, WIFE-কে ‘Wise Investment For Ever’ আর কেউ ভাবছেন না। পরিবর্তে তাঁরা WIFE-এর নতুন অর্থ করে নিয়েছেন এইভাবে যে, ‘Worry Invited For Ever’। ভোগ্যপণ্য সম্পর্কে যে ‘ইউজ অ্যান্ড থ্রো’ মানসিকতা কনজিউমারদের মধ্যে থাকে, বিয়েকে অনেকটা এখন সেভাবেই দেখছে তরুণ প্রজন্ম। লিভ-ইন রিলেশনশিপকে তাই অনেক বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে এখনকার প্রজন্ম। তাঁর কারণ এটাই যে, সেখানে না-পোষালে সম্পর্ক ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ার সহজ রাস্তা খোলা থাকে। অর্থাৎ বৈবাহিক বন্ধন তার মাধুর্য হারিয়ে এখন একরকমের জটিল গিঁট হিসাবেই দেখা দিয়েছে তরুণদের সামনে।
আরও শুনুন: অভিকর্ষে অ্যালার্জি, দিনের ২৩ ঘণ্টাই বিছানায় কাটান তরুণী
একটি ডিভোর্স মামলার প্রেক্ষিতেই ছিল আদালতের এই পর্যবেক্ষণ। ডিভিশন বেঞ্চের দুজন বিচারপতি আক্ষেপ করে জানান, ঈশ্বরের আপন রাজ্য হিসাবে পরিচিত কেরলে এককালে পারিবারিক বন্ধনকে অত্যন্ত গুরুত্ব দেওয়া হত। কিন্তু বর্তমানে, স্বার্থপরতার কারণে বহু মানুষ সেই গুরুত্বকে অস্বীকার করছেন। ভেঙে দিতে চাইছেন পারিবারিক বন্ধন। এর ফলে যে সামগ্রিক ভাবে সামাজিক স্থিরতাই বিঘ্নিত হচ্ছে, এমনটাই স্পষ্ট করে দিয়েছে ওই বিশেষ আদালত।