ভোটে লড়তে পারবেন। কিন্তু ভোট দিতে পারবেন না। এমনই নিয়ম মানতে হয় জেলবন্দীদের। লোকসভা নির্বাচনেও এমন নজির ধরা পড়েছে। যেখানে জেলে থেকেও ভোটের প্রার্থী হচ্ছেন কেউ, অথচ জেলবন্দীদের কেউই ভোট দেওয়ার অধিকার পাচ্ছেন না। কী ব্যাখ্যা এমন নিয়মের? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
লোকসভার আগেই জেলবন্দী হয়েছেন অরবিন্দ কেজরিওয়াল, হেমন্ত সোরেনের মতো রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। তালিকাও আরও অনেক নেতাই রয়েছেন। নিয়ম অনুযায়ী এঁরা কেউই ভোট দিতে পারবেন না। কিন্তু চাইলে ভোটের প্রার্থী হতে পারেন।
আরও শুনুন: ধন যার, ভোটও তারই! সম্পদের মালিকানা মেপেই কি প্রার্থী বাছাইয়ের প্রবণতা বাড়ছে দেশে?
চাঁদিফাটা গরম। তার মধ্যেই চলছে লোকসভা ভোট। প্রথম দুই দফায় ভোটদানের হার কমলেও, উত্তেজনায় কমতি নেই। নেতারা দিনরাত এক করে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। তাপমাত্রার সঙ্গে বাড়ছে ভোটের উত্তাপও। কিন্তু এই আবহেও ভোট নিয়ে জেলবন্দীদের তেমন তাপ উত্তাপ নেই বললেই চলে। কারণ নিয়ম অনুযায়ী তাঁদের কেউই ভোট দিতে পারবেন না। এক্ষেত্রে জেলে থাকাটাই শর্ত। অর্থাৎ অভিযোগ প্রমাণ হয়নি কিন্তু তদন্তের স্বার্থে জেলে রয়েছেন এমন ব্যক্তিও দিতে পারবেন না ভোট। এই নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে বেশ কিছু মামলা হয়েছে। সেখানে বারবার এই নিয়ম নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অনেকে সংবিধানের প্রসঙ্গ তুলেও ভোটাধিকারের দাবি তুলেছেন। আসলে, সংবিধান অনুযায়ী ভারত গণতান্ত্রিক দেশ। তাই দেশের নাগরিকদের ভোট দেওয়ার অধিকার রয়েছে। কিন্তু তা কখনই মৌলিক অধিকার নয়, এমনটাই পর্যবেক্ষণ সুপ্রিম কোর্টের। বরং ভোটদানকে বিধিবদ্ধ অধিকার বলেই চিহ্নিত করেছে শীর্ষ আদালত। কয়েকবছর আগেও এই নিয়ে চর্চা শুরু হয়। দোষ প্রমাণিত হয়নি এমন ব্যক্তিও কেন ভোট দিতে পারবেন না, আদালতে এই আবেদন ওঠে। যদিও সেই আবেদন খারিজ করে দেয় আদালত। এবার কারণ হিসেবে বেশ কিছু ব্যাখ্যাও দেওয়া হয় আদালতের তরফে। প্রথমেই মনে করিয়ে দেওয়া হয়, ভোট মোলিক অধিকার নয়। তাই ভোট দেওয়ার কিছু শর্ত থাকবেই। দ্বিতীয়ত, যিনি অভিযুক্ত আসামীর ভোটদানের জন্য যে ব্যবস্থা করতে হবে তা খরচসাপেক্ষ। একইসঙ্গে লোকবল প্রয়োজন। এমনিতেই ভোটের সময় নিরাপত্তার জন্য আলাদাভাবে ব্যবস্থা নিতেই হয় প্রশাসনকে। তার মধ্যে অভিযুক্তদের নিরাপত্তার জন্য আলাদা ব্যবস্থা করা বেশ সমস্যার। শুধু তাই নয়, আদালতের পর্যবেক্ষণ, একজন জেলে থাকা ব্যক্তি কখনই সাধারণ মানুষের মতো একই স্বাধীনতা উপভোগ করতে পারেন না। তাই জেলে থাকলে ভোট দেওয়ার কোনও অধিকার নেই। আবার দোষ প্রমাণিত হলে ভোট দাঁড়ানোরও অধিকার মেলে না। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় অভিযুক্তের বিরুদ্ধে একাধিক ধারায় মামলা রুজু হয়েছে। এক্ষেত্রে সব মামালার বিচার একসঙ্গে নাও হতে পারে। কিন্তু কোনও একটা মামলায় যদি অভিযুক্ত দোষী সাব্যস্ত হয় তাহলেও একই নিয়ম জারি হবে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে যাঁদের দোষ প্রমাণিত হয়নি, তাঁরা কি ভোটে দাঁড়াতে পারবেন?
নিয়ম বলছে, অবশ্যই পারবেন। চলতি নির্বাচনেই সে উদাহরণ রয়েছে। খালিস্তানি আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত নেতা অমৃতপাল সিং এই মুহূর্তে জেলবন্দী। কিন্তু লোকসভা নির্বাচনে তিনিও পাঞ্জাবের এক লোকসভা কেন্দ্রের নির্দল প্রার্থী। যদিও ভোট দেওয়ার অধিকার থাকবে না তাঁর। কিন্তু তাঁকে সমর্থন জানাতে কোনও বাধা নেই আমজনতার। এমনকি নিয়ম মেনে নির্বাচনী প্রচারও সারতে পারবেন অমৃতপাল। যতক্ষণ না আদালতে তাঁর দোষ প্রমাণিত হচ্ছে ততক্ষণ এই অধিকার থাকবে অমৃতপালের। তার মধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন হলে জেতার সম্ভাবনা থাকছে এই জেলবন্দী নেতারও। সহজ করে বললে, অভিযোগ দায়ের হলেও যদি তা প্রমাণ না হয় তাহলে নির্বাচনে প্রার্থী হতে কোনও বাধা নেই। সেই নেতা জেলে থাকলেও নয়। শুধু ভোটাধিকার প্রয়োগে যত আপত্তি।