স্বর্গ নেই, আমাদের উপসর্গ আছে। এ যেন ঘর ঘর কি কাহানি। করোনার নয়া স্ট্রেন ওমিক্রন যে ব্যাপক সংক্রামক, সে ব্যাপারে আগেই সাবধান করেছিলেন বিশেষজ্ঞরা। সময় আসতে না আসতে সে তার ভয়াল রূপ ধারণ করেছে। এখন সকলের মনে যেন একটাই প্রশ্ন, এই ঝড় থামবে কবে? এবার সেই উত্তর দিলেন বিশেষজ্ঞরা। আসুন শুনে নেওয়া যাক।
ঊর্ধমুখী করোনা-গ্রাফ। গত কয়েকদিন ধরে এটাই যেন দস্তুর। গোটা দেশে লাফিয়ে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। আমাদের রাজ্যও তার ব্যতিক্রম নয়। পরিসংখ্যান যথেষ্ট উদ্বেগই বাড়াচ্ছিল সর্বত্র। ওমিক্রনের যে ঝড় উঠতে পারে, এ ব্যাপারে সতর্কতা আগেই ছিল। প্রায় নিয়ন্ত্রণে চলে আসা করোনা পরিস্থিতি পুনরায় বিগড়ে যাবার সংকেত দেখছিলেন বিশেষজ্ঞরা। প্রত্যাশিত ভাবেই তা এল। এখন ঘরে ঘরে অসুস্থতা। ফলত, প্রশ্ন একটাই, এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তি মিলবে কবে?
আরও শুনুন: মা ভ্যাকসিন নিলে মাতৃদুগ্ধেই কোভিডের অ্যান্টিবডি পাবে শিশু, জানালেন গবেষকরা
সম্প্রতি এ ব্যাপারে আলোকপাত করেছেন, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। যেমন, ডাঃ সন্দীপ নায়ার সংবাদ সংস্থা এএনআই-কে জানিয়েছেন, জানুয়ারিতে সংক্রমণ সবথেকে বেশি হবে। অর্থাৎ, লেখচিত্রের শীর্ষবিন্দু এই মাসেই ছুঁয়ে ফেলবে সংক্রমণ। কিন্তু একই সঙ্গে যথাযথ করোনাবিধি পালন, সংক্রমণ যাতে না ছড়ায় সেদিকে নজর রাখার কাজ চলছে জোর কদমে। ফলে, এর পর থেকেই গ্রাফ নিচের দিকে নামতে শুরু করবে বলে তাঁর আশা। অর্থাৎ, সন্দীপ বাবুর মতে জানুয়ারির পর থেকেই ওমিক্রনের এই প্রাবল্য বা দারুণ প্রকোপ কাটতে শুরু করবে।
আরও শুনুন – ওমিক্রনের প্রভাবে শরীর মাত্রাতিরিক্ত দুর্বল! নিজেকে চাঙ্গা রাখবেন কীভাবে?
আই আই টি কানপুরের অধ্যাপক মনীন্দ্র আগারওয়াল, এক সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, যে দ্রুততায় সংক্রমণ শীর্ষ স্পর্শ করছে, তা একটি স্পষ্ট ইঙ্গিত বহন করছে যে, একই দ্রুততায় এই গ্রাফ নিম্নমুখী হবে। একই মত ডাক্তার সন্দীপ নায়ারেরও। বিশেজ্ঞরা বলছেন, জানুয়ারির শেষ নাগাদই করোনা-গ্রাফ তার শীর্ষ ছুঁয়ে ফেলবে। অন্তত এখনও পর্যন্ত সেরকম সম্ভাবনাই দেখা যাচ্ছে। যেহেতু ছোঁয়াচে হলেও ওমিক্রন বেশিদিন শরীরে বাসা বেঁধে থাকছে না, তাই দ্রুত বাড়তে থাকবে সুস্থতার হারও। সেক্ষেত্রে জানুয়ারির পর থেকেই গ্রাফ ক্রমশ নিম্নমুখী হবে বলেই আশা তাঁদের।
আরও শুনুন – করোনা রোগীকে সামলাতে ব্যস্ত? সংক্রমণ রুখতে সতর্ক থাকুন নিজেও
ডাঃ নায়ার জানাচ্ছেন, কয়েকটা জিনিসই ওমিক্রনের প্রকোপ শেষ করতে পারে। সেগুলি হল, সোশ্যাল ডিস্টান্সিং বজায় রাখা, মাস্ক পরা এবং ভ্যাকসিন নেওয়া। বারংবার বলার ফলে, এই কথাগুলো আমাদের কাছে পরিচিত এবং ক্লিশে। কিন্তু ডাক্তারবাবু বলছেন, কোনও ওষুধই এখনও পর্যন্ত ১০০ শতাংশ নিরাপত্তা দিতে পারছে না। একমাত্র সঠিক বিধি মেনে চলাই সেক্ষেত্রে যথার্থ ওষুধ। এখন ১৫ ঊর্ধদের ভ্যাকসিন শুরু হয়ে গিয়েছে। বয়স্কদের জন্য চালু বুস্টার ডোজ টিকাকরণ। এই দুই পদক্ষেপই করোনা নিয়ন্ত্রণে সদর্থক ভূমিকা নেবে বলে তাঁর আশা। তিনি বলছেন, ভ্যাকসিন অস্ত্রেই অতীতে পরাজিত হয়েছিল স্মল পক্স বা পোলিও। করোনার ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হবে না। টিকাকরণের গতি বাড়লে আর মানুষ করোনা বিধি মেনে চললে – ওমিক্রনের দাপট বেশিদিন বজায় থাকবে না, বরং দ্রুত করোনা জয় করবে মানুষ। এমনটাই আশা বিশেষজ্ঞদের।