‘ও কেন ছোট পোশাক পরেছিল?’, ‘ও কেন রাতে গিয়েছিল ফাঁকা জায়গায়?’ – যে কোনও নির্যাতনের ঘটনার পর এইভাবে আঙুল ওঠে নির্যাতিতার দিকেই। অতীত থেকে সাম্প্রতিকের ঘটনা, কোনও ক্ষেত্রেই এর ব্যতিক্রম হয় না। সেই ভিক্টিং ব্লেমিং-এর সংস্কৃতিকেই একেবারে নস্যাৎ করেছিলেন নির্যাতিতা স্বয়ং। কী ছিল তাঁর বক্তব্য? আসুন শুনে নিই।
আর জি কর কাণ্ডের প্রতিবাদে গত ১৪ আগস্ট রাত দখলে নেমেছিলেন মেয়েরা। যে ১১ দফা দাবি ছিল, সেখানে অন্যতম ছিল ভিক্টিম ব্লেমিং-কে আইনি আওতায় নিয়ে আসা। যে কোনও ঘটনার পর নির্যাতিতাকে দোষারোপ করার এই সংস্কৃতি যেন সমাজের গভীর গভীরতর অসুখ। সে-অসুখের শিকড় বহু গভীরে। সমাজের ভিতর পিতৃতন্ত্রের যে আধিপত্য, তাই-ই এই বয়ান নির্মাণ করে। ফলত এর সামাজিক প্রভাবও বহুদূর প্রসারিত। সমাজে একজন মেয়ে এই প্রশ্নগুলোকে সঙ্গে নিয়েই বড় হয়। কোথাও যেন তাঁদের মাথায় টিক টিক করে বাজতে থাকে পিতৃতান্ত্রিক সমাজের তৈরি এইসব প্রশ্নগুলোই। অর্থাৎ সেলফ্ ব্লেমিং-এর একটি পরিসরও এই সূত্রে তৈরি হয়ে যায়। এই পরিস্থিতি অতিক্রম করা সহজ নয়। তবে, লড়াই এবং সচেতনতাই সেই পথ তৈরি করে।
আরও শুনুন: মধ্যরাতে আলোর পথযাত্রী…
আগামীর পরিস্থিতি কোন দিকে গড়াবে তা এখনই বলা মুশকিল। তবে এই ভিক্টিম ব্লেমিংকে একেবারে নস্যাৎ করার সাহস দেখিয়েছিলেন নির্যাতিতা স্বয়ং। চলতি বছরেই জনৈকা স্প্যানিশ-ব্রাজিলিয়ান মহিলাকে ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। ঝাড়খণ্ডের সেই ঘটনার প্রতিবাদ হয়েছিল গোটা দেশ জুড়ে। সেখানেও এসেছিল ভিক্টিম ব্লেমিং-এর প্রসঙ্গ। কেন তিনি ভারতে এসেছিলেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। কেন তিনি রাস্তায় বেরিয়েছিলেন, সে প্রশ্নও পিছু ছাড়েনি। পরে এ নিয়ে মুখ খুলেছিলেন তিনি। সাফ জানিয়েছিলেন, এসব কথার কোনও অর্থ হয় না। তিনি ঝুঁকি নিয়েছিলেন, তবে তা নিয়ে কোনও আক্ষেপ নেই তাঁর । মহিলার বক্তব্য ছিল, তাঁর সঙ্গে একটি ঘটনা ঘটে গিয়েছে বটে! কিন্তু তাই বলে তাঁর জার্নিকে তিনি খাটো করতে চান না। সেই সময় তিনি সেখানে না থাকলে হয়তো এই ঘটনা ঘটত না। তবে অন্য কোথাও থাকলেও অন্য কিছু ঘটতে পারত! ফলত এই ধরনের প্রশ্ন যে অমূলক তা দৃপ্ত কণ্ঠেই জানিয়েছিলেন তিনি। এমনকী ভারতবর্ষ নিয়েও তাঁর কোনও অভিযোগ ছিল না। স্পষ্ট জানিয়েছিলেন, পৃথিবীর যে কোনও দেশেই এটা হতে পারে। অর্থাৎ একটি সামাজিক অসুখের মূলটিকেই তিনি চিহ্নিত করেছিলেন। অপ্রাসঙ্গিক প্রশ্ন আর উত্তরে তা ঢেকে দিতে চাননি।
আর তাই নারীদের উদ্দেশে তাঁর সাফ বার্তা ছিল, ঘরের গণ্ডি কেটে বেরিয়ে এসে সারা পৃথিবীতে যেন তাঁরা ছড়িয়ে পড়েন। এবং ভয়হীন হয়ে। নির্ভয় হওয়াই যে ভয়কে জয় করার হাতিয়ার, সেদিন ভিক্টিম ব্লেমিং-কে উড়িয়ে দিয়ে সে কথাই ঘোষণা করেছিলেন তিনি।