বাহানাগার ভয়াবহ স্মৃতি কাটতে না কাটতেই বড় দুর্ঘটনা কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসে। ‘মিশন জিরো অ্যাক্সিডেন্ট’-এর পরেও ভারতীয় রেলে ঘটছে একের পর এক দুর্ঘটনা। কী ছিল এই মিশন? শুনে নেওয়া যাক।
‘মিশন জিরো অ্যাক্সিডেন্ট’ চালু হওয়ার পরে ২০১৯ সালে রেল দুর্ঘটনায় মৃতের সংখ্যা শূন্যে এসে দাঁড়িয়েছিল, এমনটাই বলছে পরিসংখ্যান। অথচ সাম্প্রতিক সময়ের দিকে তাকালে সে পরিস্থিতি যেন স্বপ্নের মতো মনে হয়। কিংবা আসলে দুঃস্বপ্ন হয়তো এই সময়টাই। তা ছাড়া আর কী! কেবল ২০২৩ থেকে ২৪, এই বছরখানেক সময়ের মধ্যেই মর্মান্তিক পাঁচ দুর্ঘটনার সাক্ষী হয়েছে ভারতীয় রেল। আর এবার কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের বড় দুর্ঘটনা সেই নিরাপত্তাহীনতাকেই যেন আরও চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল। একইসঙ্গে স্পষ্ট হয়ে উঠল মিশন জিরো অ্যাক্সিডেন্ট’-এর ব্যর্থতাও।
আসলে কী ছিল ওই মিশন?
আরও শুনুন:
একের পুণ্যে অন্যের সর্বনাশ! তীর্থযাত্রীদের বইতে গিয়েই চারধামে প্রাণ হারায় অবোলা পশুরা
২০১৬-১৭ সালে কেন্দ্রীয় রেল মন্ত্রক শপথ নিয়েছিল, দুর্ঘটনা কমিয়ে শূন্যে আনা হবে। আর সেই সুরক্ষার শপথেরই নাম দেওয়া হয় ‘মিশন জিরো অ্যাক্সিডেন্ট’। সত্যি বলতে ২০১৯ সালে সে শপথ কাঁটায় কাঁটায় রক্ষা করাও গিয়েছিল। ভারতীয় রেলের ইতিহাসে এই বছরটিই ছিল নিরাপদতম বছর। কিন্তু, তথ্য বলছে, বছর দুই সেই মিশন লাইনে চললেও ২০২২ সালের পর থেকে আচমকাই বেলাইন হয়ে গিয়েছে। দুর্ঘটনা শূন্য হওয়া দূরে থাক, উলটে লাফিয়ে বেড়েছে দুর্ঘটনার সংখ্যা ও ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা। বিশেষ করে ২০২৩ সালে কার্যত আকাশ ছুঁয়ে ফেলে এই গ্রাফ। সে বছরে ছোট বড় মিলিয়ে না হোক ১৮টি রেল দুর্ঘটনা ঘটেছে। কখনও চলন্ত ট্রেনে লেগেছে আগুন। কখনও বেলাইন হয়েছে বগি। আবার সিগন্যালিংয়ের গন্ডগোলেও ঘটেছে দুর্ঘটনা। হিসেব বলছে, শুধু ২০২৩ সালেই সাড়ে তিনশোর বেশি মানুষ মারা গিয়েছেন রেল দুর্ঘটনায়। আর ২০২৪ সালের প্রথম ছ’মাসে কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের দুর্ঘটনা ধরলে এখনও পর্যন্ত অন্তত পনেরো জনের মৃত্যু হয়েছে।
আরও শুনুন:
বাবার গল্প: সন্তানের মৃত্যুশয্যায় হেঁটে পৌঁছতে পারেননি যে বাবা
‘মিশন জিরো অ্যাক্সিডেন্ট’-এর ঘোষণার সময় রেল জানিয়েছিল, নিয়মিত রেল লাইন রক্ষণাবেক্ষণে গুরুত্ব দেওয়া হবে। পরিকল্পনায় বলা হয়েছিল, দুর্ঘটনা এড়াতে সিগন্যালিং সিস্টেম আধুনিক করা হবে, দুর্ঘটনা রুখতে সক্ষম লিঙ্ক হফম্যান বুশ অর্থাৎ এলএইচবি রেল বগি ও আধুনিক ইঞ্জিন ব্যবহার করা হবে। যাতে দুই ট্রেনের ধাক্কা লাগলে একটি কামরা আর একটি কামরায় ঢুকে যাবে না। এমনকি, একটি কামরা আর একটির উপরে উঠেও যাবে না। তার জন্য রাষ্ট্রীয় রেল সংরক্ষা কোষে ১ লক্ষ কোটি টাকা নির্ধারণও করেছিল রেল। দেশের সব ট্রেনেই ধীরে ধীরে পুরনো কামরা পালটে ওই নতুন উন্নত কামরা লাগানোর কথা ছিল। পুরনো প্রযুক্তির কামরা তথা কনভেনশনাল কোচ বানানো বন্ধ করে দেওয়ারই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল রেল। অথচ যে কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসে দুর্ঘটনা ঘটেছে, দেখা যাচ্ছে তাতে এখনও ব্যবহার হয়েছে আইএসএফ বগি। মালগাড়ির ধাক্কায় ট্রেনের বগি উঠে গিয়েছে উপরে। শেষ পর্যন্ত পাওয়া খবর বলছে, দুর্ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে অন্তত ৯, আহত অন্তত ৪১ জন। তবে হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। আর এই দুর্ঘটনাই আরও একবার প্রশ্ন তুলে দিল ‘মিশন জিরো অ্যাক্সিডেন্ট’-এর কার্যকারিতা নিয়ে।