সপ্তাহ শেষে ফের দুর্যোগের আশঙ্কা করছে আবহাওয়া দপ্তর। ইতিমধ্যে জমা জলে জেরবার জনজীবন। ব্যাহত হচ্ছে বাস-ট্রেন-বিমান পরিষেবা। বিদ্যুৎস্পৃষ্ঠ হয়ে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। এদিকে দিনে দিনে বাড়ছে বাজ পড়ার সংখ্যাও। সতর্ক করছেন আবহাওয়া বিজ্ঞানীরা। কিন্তু ঠিক কীভাব সতর্ক হবেন দুর্যোগের এই আবহাওয়ায়?
একটানা ভারী বৃষ্টিতে ভাসছে শহর কলকাতা থেকে জেলা। বহু জায়গায় নতুন করে তৈরি হয়েছে বন্যা পরিস্থিতি। কলকাতার বিভিন্ন এলাকায় জল নামেনি চব্বিশ ঘণ্টা পরেও। জল জমে থাকা রাস্তায় বিকল হচ্ছে বাইক, গাড়ি। রেল লাইনে জল জমায় ব্যাহত হয়েছে রেল পরিষেবাও। বাতিল হয়েছে একাধিক দূরপাল্লার ট্রেন। বিমানবন্দর চত্বরে জল জমায় ও দৃশ্যমানতার কারণে বদল হয়েছে উড়ানের সময়। সবচেয়ে বড় কথা, ঘটেছে একাধিক মৃত্যুও।
গত কয়েকদিনের দুর্যোগে বাজ পড়ে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে যেমন, তেমনই বিদ্যুৎস্পৃষ্ঠ হয়ে মৃত্যু হয়েছে বেশ কয়েকজনের। আবহাওয়া দপ্তর জানিয়ে দিয়েছে, এখনই নিস্তার নেই দুর্যোগ থেকে। আরও তিনটি নিম্নচাপের আশঙ্কা করছেন তাঁরা। এইসঙ্গে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে এখনও সক্রিয় রয়েছে মৌসুমী বায়ু। অতএব, দুর্যোগকে মেনে নিয়ে প্রয়োজনীয় সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে আমাদের। কিন্তু, কীভাবে সতর্ক হব? অতিভারী বৃষ্টি ও বজ্রপাতের মতো প্রকৃতির রুদ্ররোষ থেকে নিজেদের বাঁচাব কেমন করে?
ঘরে ও বাইরে যাতে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট না হন সেই বিষয়ে সতর্ক হতে হবে:
ঘরের কোনও বৈদ্যুতিন সুইচে ভেজা হাত দেবেন না। আগেই ফ্রিজ, টিভির মতো বৈদ্যুতিন ডিভাইস বন্ধ রাখুন। আপনার বাড়ি যদি নিচু এলাকায় হয় তবে আগেভাগে বাড়ির ইলেকট্রিক সংযোগ বন্ধ রাখা ভাল। ভারী বৃষ্টির মধ্যে কোনও কারণে বিদ্যুৎ চলে গেলে, বৃষ্টি চলাকালীন বিদ্যুৎসংযোগ ফেরানোর চেষ্টা করবেন না। ভেজা বাড়ির মিটার বক্স, মেন সুইচে হাত না দেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। বৃষ্টি চলাকালীন ও বৃষ্টি থামার পর জল জমে থাকা রাস্তায় না বেরোনোই ভাল। জল বিদ্যুৎ পরিবাহী। খোলা ইলেকট্রিক তার জলে থাকলে, এবং সেই জলে পা দিলে বিদ্যুৎস্পৃষ্ঠ হয়ে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। অতএব, খুব প্রয়োজনে যে রাস্তায় জল নেই সেই পথ ব্যবহার করুন।
গাড়ি চালানোর সময় সতর্ক থাকতে হবে:
ভারী বৃষ্টিতে খুব জরুরি না হলে গাড়ি নিয়ে বেরোবেন না। হাতে পর্যাপ্ত সময় নিয়ে বের হবেন। যাতে করে গন্তব্যস্থলে পৌঁছাতে খুব বেশি তাড়াহুড়ো করতে না হয়। ভিজে জুতা পরে গাড়িতে বসবেন না। গাড়ির সামনের কাঁচের জল মোছার জন্য ওয়াইপার চালু রাখুন। সামনের কাঁচে জল জমে থাকলে সেই অবস্থায় গাড়ি চালানো বিপজ্জনক। প্রয়োজনে দিনেও হেডলাইট জ্বালিয়ে রাখুন। যাতে অন্য গাড়িকে দেখতে পান এবং অন্য গাড়ির চালকও আপনার গাড়িটিকে দেখতে পান। ধীর গতিতে গাড়ি চালান। যদি অতিবৃষ্টিতে আপনার সামনের রাস্তা বা যানবাহন দেখতে সমস্যা হয়, তবে কিছুক্ষণের জন্য গাড়িটিকে নিরাপদে রাস্তার এক পাশে দাঁড় করান। যেসব রাস্তা জলজমে ডুবে সেখানে সাবধানে চালান। জলে গাড়ির চাকা সম্পূর্ণ ডুবে গেলে গাড়ি চালানো যাবে না। অসুবিধাজনক স্থানে আটকা পরতে পারেন। তাই এই সময় অতিরিক্ত সাবধানতা অবলম্বন করুন।
বজ্রপাতের সময় কী করবেন আর কী করবেন না:
বাড়ির বাইরে থাকবেন না। উঁচু জায়গা বা বাড়ির ছাদে থাকবেন না। পুকুর, হ্রদ, দীঘি, জলাশয়ের কাছে থাকবেন না। বাজ পড়ার সময় ঘরের জানলা দরজা বন্ধ রাখুন। কংক্রিটের মেঝেতে শোবেন না, কংক্রিটের দেওয়ালে হেলান দেবেন না। বজ্রপাতের সময় জল ঘাঁটবেন না, স্নান করতে যাবেন না। বাইরে থাকলে বজ্রপাতের সময় একটা নিরাপদ আশ্রয়ে ঢোকার চেষ্টা করুন। ফাঁকা জায়গায় যাত্রী ছাউনিতে আশ্রয় নেবেন না। বজ্রপাতের সময় গাড়িতে থাকলে জানলার কাচ তুলে দেওয়া দরকার। বাজ পড়ার সময় ফাঁকা মাঠে থাকলে নিজেকে গুটিয়ে রাখার চেষ্টা করুন। গাছের তলায় দাঁড়াবেন না। সমতলে শুয়ে থাকবেন না। ঘরের বৈদ্যুতিক সমস্ত কানেকশন বন্ধ করে রাখবেন। কোনও গ্যাজেট ব্যবহার করবেন না। ধাতব বস্তু এড়িয়ে চলুন। বজ্রপাত ও ঝড়ের সময় ধাতব কল, সিঁড়ির রেলিং, পাইপ ইত্যাদি স্পর্শ করবেন না।
বাকিটা শুনে নিন প্লে-বাটন ক্লিক করে।