নিয়োগ দুর্নীতি ইস্যুতে দীর্ঘদিন ধরেই সরগরম রাজনৈতিক মহল। কিন্তু এই প্রথম নয়, এর আগেও নিয়োগের ক্ষেত্রে বিপুল আকারে দুর্নীতি হয়েছিল বলে জানা যায়। আর সেই দুর্নীতির জেরে জলঘোলা হয়েছিল গোটা দেশ জুড়েই। কোটি কোটি টাকার এই দুর্নীতিতে জড়িয়ে গিয়েছিল রাজনৈতিক নেতাদের নামও। কী ঘটেছিল ঠিক? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
শিক্ষাক্ষেত্র থেকে পুরসভায় নিয়োগ, একাধিক ক্ষেত্রে দুর্নীতির অভিযোগে সম্প্রতি সরগরম রাজ্য রাজনীতি। ফাঁকা ওএমআর শিটে নম্বর বসানো, উত্তরপত্রে নম্বর বাড়িয়ে দেওয়া, এমন বহু অভিযোগে উসকে উঠেছে বিতর্ক। কিন্তু নিয়োগের ক্ষেত্রে দুর্নীতির অভিযোগ এই প্রথম নয়। এর আগেও চাকরি দেওয়ার বিনিময়ে কোটি কোটি টাকা নয়ছয় করা নিয়ে শোরগোল পড়ে গিয়েছিল দেশ জুড়ে। সেই দুর্নীতির জালে নাম জড়িয়েছিল একাধিক রাজনৈতিক নেতামন্ত্রীর, বাদ যাননি সরকারি আধিকারিক, বিভিন্ন উচ্চপদস্থ কর্মীরাও। এমনকি এই দুর্নীতি প্রকাশ্যে আসার পর একাধিক গ্রেপ্তারি, এমনকি মৃত্যুর মতো ঘটনাও ঘটে। কী ঘটেছিল ঠিক? খুলেই বলা যাক।
আরও শুনুন: আইনের বাইরে নন বিচারকও! ‘সুপ্রিম’ তোপে পড়েন কলকাতা হাই কোর্টের এই বিচারপতি
গোটা দেশ জুড়েই জলঘোলা হয়েছিল এই দুর্নীতি ঘিরে। মনে করা হয়, এত ব্যাপক আকারে দুর্নীতি খুব কমই হয়েছে। ১৯৯০ সাল থেকে জাল ছড়াতে শুরু করেছিল এই দুর্নীতি চক্র, যা ফাঁস হয় ২০১৩ সালে এসে। ঘটনাস্থল ছিল মধ্যপ্রদেশ, তবে এর আঁচ ছড়িয়ে যায় গোটা দেশের রাজনীতিতে। ব্যাপম নামেই এই দুর্নীতিকে চিহ্নিত করা হয়েছিল সেসময়। দেশের আইনশৃঙ্খলার ইতিহাসে যা এক কালো অধ্যায়।
মধ্যপ্রদেশ পপুলার এগ্জামিনেশন বোর্ড তথা এমপিপিইবি-র অন্য নাম ব্যবসায়িক পরীক্ষা মণ্ডল, সংক্ষেপে ব্যাপম। এটি মধ্যপ্রদেশ সরকার দ্বারা গঠিত একটি স্বয়ংক্রিয় প্রতিষ্ঠান, যা রাজ্যের বিভিন্ন পরীক্ষা এবং সরকারি চাকরির নিয়োগ প্রক্রিয়া পরিচালনা করে। প্রতি বছর ৩০ লক্ষের বেশি পরীক্ষার্থী ব্যাপম আয়োজিত পরীক্ষায় অংশ নিতেন। আর এর মাধ্যমেই সরকারি চাকরিতে নিয়োগ এবং বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা, নামী প্রতিষ্ঠানে ভরতির প্রবেশিকা পরীক্ষা, এই সবকিছুতেই টাকার বিনিময়ে সুযোগ দেওয়া হয় বলে অভিযোগ উঠেছিল। জানা যায়, কখনও ফাঁকা খাতাতেই বসানো হত নম্বর। কখনও আবার টাকার বিনিময়ে সিট নম্বর সাজানো হত। যাতে মেধাবী পড়ুয়ার খাতা দেখে টাকা-দেওয়া প্রার্থীরা উত্তর লিখতে পারে। আর কখনও কখনও চাকরিপ্রার্থীর বকলমে পরীক্ষায় বসত অন্য কেউ। এই সব সুযোগই মিলত লক্ষ লক্ষ, এমনকি কোটি টাকার বিনিময়েও।
আরও শুনুন: ভারতে বহিরাগত, ব্রাহ্মণদের জন্মভূমি নাকি রাশিয়া! ‘ভিনদেশি’দের তাড়ানোর দাবি নেতার
২০১৩ সালে ইন্দোরে প্রাক্-মেডিক্যাল পরীক্ষার কেন্দ্র থেকে হাতেনাতে ধরা হয় ২০ জন ভুয়ো পরীক্ষার্থী। আর তাঁদের সূত্রেই তদন্তকারীদের জালে ধরা পড়েন দুর্নীতি চক্রের অন্যতম মাথা জগদীশ সাগর। এই দুর্নীতিতেই ২০১৪ সালে গ্রেপ্তার করা হয় বিজেপি নেতা তথা মধ্যপ্রদেশের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী লক্ষ্মীকান্ত শর্মাকে। গ্রেপ্তার হন শিক্ষা দপ্তরে বহু আধিকারিক ও চিকিৎসক। তদন্ত চলাকালীন দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত একাধিক ব্যক্তির অস্বাভাবিক মৃত্যুও ঘটে। অভিযোগ, ঘটনার সাক্ষী, অভিযুক্ত বা অভিযোগকারীদের কাউকে কাউকে মেরে ফেলা হয়েছে, যাতে গোপন তথ্য ফাঁস হয়ে না যায়। ২০১৩ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে ব্যাপমের সঙ্গে জড়িত ২৩ জনের অস্বাভাবিক মৃত্যুর কথা সামনে আসে। এই তদন্ত শুরু হয়েছিল ইন্দোরের চিকিৎসক আনন্দ রাই-এর দায়ের করা এক জনস্বার্থ মামলার সূত্রে। অভিযোগ, নিয়মিত হুমকি ফোন পেতেন তিনি। পরে তাঁকে দূরে বদলি করেও দেওয়া হয়।
২০১৫ সালে সিবিআইকে ব্যাপম ইস্যুতে তদন্তের ভার দেয় সুপ্রিম কোর্ট। মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহান এবং মধ্যপ্রদেশের রাজ্যপাল রাম নরেশ যাদবের নামও জড়িয়ে যায় ব্যাপম কেলেঙ্কারিতে। এই মামলার জেরে ২০১৭ সালে মোট ৬৩৪ জন চিকিৎসকের ডিগ্রি বাতিল করার নির্দেশ দেয় দেশের শীর্ষ আদালত। যদিও এত কিছুর পরেও এই দুর্নীতির সমস্ত তথ্য আদৌ সামনে আনা যায়নি, বরং বিভিন্ন উপায়ে সত্যিকে ধামাচাপা দেওয়া হয়েছে, এমনটাই মত ওয়াকিবহাল মহলের।