সীমান্ত যাতে সুরক্ষিত থাকে, তার জন্য লড়ছেন অসমসাহসী ভারতীয় সেনা। নিজেদের জীবন বাজি রেখেই তাঁরা আগলে রাখছেন দেশের সম্প্রীতি। এই দেশ তো আম-নাগরিকেরও। পাকিস্তানের বিভাজন-গোলা নিষ্ক্রিয় করার দায়িত্ব তাই সকলেরই। অস্ত্র নয়, সহ-নাগরিকদের প্রতি শ্রদ্ধা আর ভালোবাসাতেই তা সম্ভব। বৈদেশিক শক্তি যখন সংঘাত বাড়াতে চায়, তখন বেঁধে-বেঁধে জুড়ে-জুড়ে থাকার থেকে বড় রক্ষাকবচ আর কী-ই বা হতে পারে!
ভারত-পাক সংঘাতে আবহে উঠে আসছে একাধিক অত্যাধুনিক যুদ্ধাস্ত্রের নাম। তার সঙ্গেই চলছে এক প্রাচীন অস্ত্রের ব্যবহার- বিভাজন। পাক-গোলার আঘাত আসলে যেন নষ্ট করতে চাইছে ভারতের সম্প্রীতির অটুট প্রাচীর। আর তাই সীমান্ত-সুরক্ষায় যেনারা যেমন লড়াই করছেন, তেমন দেশ রক্ষার অনেকখানি দায় নাগরিকদেরও বটে।সম্প্রতি এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন বিদেশসচিব বিক্রম মিস্রী (Vikram Misri)।
বিদেশসচিব (Vikram Misri) জানিয়েছেন, পাকিস্তান যে সুকপরিকল্পিত হামলা চালাচ্ছে, তার অন্যতম উদ্দেশ্য হল ভারতে অস্থিরতা ছড়ানো। আর তাই বেছে বেছে সীমান্ত এলাকার গির্জা ও গুরুদ্বারকে লক্ষ্য করে হামলা চালানো হচ্ছে। ধর্মস্থান চিহ্নিত করে আক্রমণের উদ্দেশ্য ভারতের কাছে স্পষ্ট। সেনার তরফে সেই আক্রমণ রুখেও দেওয়া হয়েছে। তবে, এই বিষয়টি বিশেষ গুরুত্ব দিয়েই উল্লেখ করেছেন বিদেশসচিব(Vikram Misri)। কারণ, সংঘাতের আবহে ভারতের ভিতর বিভাজনের বিষ ছড়ানো যে পাকিস্তানের নিম্নস্তরের মানসিকতার পরিচয়, সে-কথা বিশ্বের দরবারে তুলে ধরা জরুরি বলে মনে করেছেন তিনি। একদিকে যাত্রীবাহী বিমানকে মানব-ঢাল করে ভারতকে বিপাকে ফেলার চেষ্টা করা হচ্ছে। অন্যদিকে ভারতের ভিতরে বিভাজনের গোলা ছুড়ে অস্থিরতা তৈরি করার চেষ্টা করা হচ্ছে। পাকিস্তানের জঙ্গি-সংস্রবের নমুনা পেশের পাশাপাশি, এই দ্বিমুখী কৌশলের কথা দেশ ও বিশ্বের কাছে তুলে ধরেছেন বিক্রম মিস্রী(Vikram Misri)। আর এই প্রেক্ষিতেই নাগরিকের দায় আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
যে-ঘটনা থেকে এই সংঘাতের সূত্রপাত, সেই পহেলগাঁও হামলাতেই ধর্ম বেছেই নিরপরাধ ভারতীয় নাগরিকদের হত্যা করেছিল সন্ত্রাসবাদীরা। ধর্মভিত্তিক বিভাজনের অস্থিরতা দেশ জুড়ে ছড়িয়ে দেওয়াই ছিল লক্ষ্য। জবাব দিয়ে ভারত শুরু করে ‘অপারেশন সিঁদুর’। সংঘাত উত্তরোত্তর বাড়ছে। আর সেই প্রেক্ষিতেই পাকিস্তানের মূল উদ্দেশ্যটি সম্পর্কে দেশবাসীকে আরও একবার যেন সতর্কই করে দিয়েছেন বিদেশসচিব(Vikram Misri)। অত্যাধুনিক অস্ত্রের প্রয়োগ হচ্ছে সেই প্রাচীন বিভাজন অস্ত্রটিকে হানার তাগিদেই। সেনারা যেমন পাক-অস্ত্র নিষ্ক্রিয় করছেন, হামলার প্রতিরোধ করছেন, সতর্ক করছেন দেশবাসীকে, তেমন কিছু দায়িত্ব থাকে দেশবাসীরও। পহেলগাঁও হামলার পর বিভাজন-বিষ বেশ ভালোই ছড়িয়ে পড়েছিল। অন্তত সোশ্যাল মিডিয়ায়। দেশের সংখ্যালঘুদের যেমন আক্রমণ ও জবাবদিহির মুখে পড়তে হয়েছিল। পাশাপাশি প্রশ্ন উঠেছিল দেশের ধর্মনিরপেক্ষ মানসিকতা নিয়েও। ‘অপারেশন সিঁদুর’ সেই বিভাজন প্রশমিত করেছে অনেকখানি। সন্ত্রাসবাদের সমুচিত জবাব যে ভারত দিয়েছে, তাতে স্বস্তি পেয়েছেন দেশের মানুষ। তবে, দেখা যাচ্ছে, বিভাজনের লক্ষ্য থেকে এখনও সরেনি পাকিস্তান। এদিকে, যুদ্ধের ভয়াবহতা সম্পর্কে অনেকেই সচেতন। আর তাই সংঘাতের আবহ যত পুরোদস্তুর যুদ্ধের দিকে গোচ্ছে, তত সিঁদুরে মেঘ দেখছেন নাগরিকদের একাংশ। কিন্তু প্রকাশ্যে সে-মত প্রকাশ করে ফেললেই, দেশপ্রেমের প্রশ্নে তাঁদের আক্রমণের মুখে পড়তে হচ্ছে। প্রতিরক্ষা জরুরি। দেশের সম্প্রীতি, সার্বভৌমত্বে আঘাত নামলে তার প্রত্যাঘ্যাত যে রাষ্ট্র করবে, তাও অস্বাভাবিক কিছু নয়। কিন্তু যুদ্ধ-পরিস্থিতি এলে নাগরিকদের উপরই নেমে আসে সার্বিক আঘাত। সে সম্পর্কে সচেতন থাকা নাগরিকদের কর্তব্য বইকি! রাষ্ট্রের কর্তব্য রাষ্ট্র পালন করছে সুচারুভাবে। তবে যুদ্ধের ভয়াবহতার কথা স্মরণ করিয়ে দিলেই দেশপ্রেমের জবাবদিহি চাওয়া আসলে বিভাজনেরই অন্য রূপ। একদিকে ধর্মভিত্তিক বিভাজনের গোলা ছুড়ছে পাকিস্তান। অন্যদিকে মতানৈক্যের বিভাজন ছড়িয়ে পড়ছে সমাজে। যা আসলে পাকিস্তানের বিভাজন-অস্ত্রেরই প্রভাব এবং প্রতিক্রিয়া। আর তাই বিক্রম মিস্রীর (Vikram Misri) কথা দেশের নাগরিকদেরও কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
সীমান্ত যাতে সুরক্ষিত থাকে, তার জন্য লড়ছেন অসমসাহসী ভারতীয় সেনা। নিজেদের জীবন বাজি রেখেই তাঁরা আগলে রাখছেন দেশের সম্প্রীতি। এই দেশ তো আম-নাগরিকেরও। পাকিস্তানের বিভাজন-গোলা নিষ্ক্রিয় করার দায়িত্ব তাই সকলেরই। অস্ত্র নয়, সহ-নাগরিকদের প্রতি শ্রদ্ধা আর ভালোবাসাতেই তা সম্ভব। বৈদেশিক শক্তি যখন সংঘাত বাড়াতে চায়, তখন বেঁধে-বেঁধে জুড়ে-জুড়ে থাকার থেকে বড় রক্ষাকবচ আর কী-ই বা হতে পারে!