বিমানবন্দর মানেই ঝাঁ চকচকে ব্যাপার। আধুনিকতা জড়িয়ে আছে তার সর্বাঙ্গে। মূলত ইংরেজি আর হিন্দি ভাষারই রাজত্ব বিমানবন্দরগুলিতে। সেখানে সংস্কৃতের মতো প্রাচীন ভাষা কি জায়গা করে নিতে পারে? খানিকটা যেন এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতেই অভিনব এক উদ্যোগ নিল বারাণসী বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। অন্য ভাষার পাশাপাশি এবার সেখানে ঘোষণা শুরু হল সংস্কৃতেও। অবাক হচ্ছেন! আসুন, শুনে নিই, কেন এমন উদ্যোগ নেওয়া হল।
ভাষা বেঁচে থাকে ভাষাভাষীর জোরে। অর্থাৎ, কথায় বা লেখায়, সামগ্রিক ভাবেই যোগাযোগের ক্ষেত্রে ভাষার ব্যবহার না-হলে, যে-কোনও ভাষার খোরস্রোতই একদিন মজে যায়। শুকিয়ে আসে প্রবহমান এক ধারা। সংস্কৃত ভাষার সম্পর্কেও এ-কথা বলা যায়। যে-ভাষায় রয়েছে সাহিত্যের আশ্চর্য ভাণ্ডার, যে-ভাষায় লিখিত হয়েছে বহু সাধকের বহু সাধনায় পাওয়া জ্ঞান, সেই ভাষার ব্যবহার বর্তমানে অত্যন্ত সীমিত পরিসরে। দৈনন্দিনে সংস্কৃত-কে আর কাজের ভাষা বলা যায় না। কিন্তু যদি তা করে তোলা যেত, তাহলে কেমন হত! এই ভাবনা থেকেই ছকভাঙা উদ্যোগ বারাণসীর লাল বাহাদুর শাস্ত্রী ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে। ইংরেজি ও হিন্দির পাশাপাশি সেখানে এবার ঘোষণা শুরু হল সংস্কৃত ভাষাতেও।
আরও শুনুন: উচ্চতা ২২ ফুট, স্বামীজির বিশ্বজয়ের শহর শিকাগোতেই উচ্চতম মূর্তি প্রতিষ্ঠা শ্রীরামকৃষ্ণের
যৌথভাবে এই উদ্যোগ নিয়েছে, এয়ারপোর্ট অথরিটি অফ ইন্ডিয়া এবং বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়। বিমানবন্দরে কোভিড সংক্রান্ত নিয়ামবলি এতদিন বর্ণনা করা হত মূলত হিন্দি এবং ইংরেজিতে-ই। সম্প্রতি সংস্কৃতেও তা করা শুরু হয়েছে। বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এর ফলে যাত্রীদের মনে হবে, তাঁরা যেন এক সংস্কৃত-হাব বা সংস্কৃত ভাষার পরিমণ্ডলে প্রবেশ করেছেন। কর্তৃপক্ষের এ-কথা বলা যথেষ্ট যুক্তিযুক্ত। কেননা প্রাচীনকাল থেকেই জ্ঞানচর্চার অন্যতম পীঠস্থান বারাণসী। আর এই মেধাচর্চার সিংহভাগ-ই হত সংস্কৃত ভাষায়। আজও সেই চর্চার ধারা একেবারে বন্ধ হয়ে যায়নি। দেশের অন্যত্র না-হলেও, বারাণসীতে বেশ ভাল ভাবেই বেঁচে আছে সংস্কৃত চর্চার পরিসর। ফলত এখানকার বিমানবন্দরে প্রবেশ করে যাত্রীরা যদি সংস্কৃত ভাষা শোনেন, তবে তাঁদের অসুবিধা বা অখুশি হওয়ার কোনও কারণ নেই।
আরও শুনুন: বরখাস্ত হয়েও লড়াই ছাড়েননি, ৭ বছর পর চাকরি-বেতন দুই-ই ফিরে ফেলেন কর্মী
বাস্তবিক তা হচ্ছেও না। বরং যাত্রীরা এই উদ্যোগে বেশ উচ্ছ্বসিত। সংস্কৃত ভাষায় পারদর্শী কেউ কেউ টুইটারে বলছেন, এতদিন সংস্কৃত পাঠের কোনও ব্যবহারিক উপযোগিতাই খুঁজে পেতেন না তিনি। এতদিনে হয়তো তাঁর সংস্কৃত-জ্ঞান অনেকের কাজে লাগবে। আবার কেউ কেউ দাবি তুলেছেন, একই উদ্যোগ রেলস্টেশনগুলিতেও নেওয়া উচিত। অবশ্য বিরুদ্ধমতও কিছু এসেছে। যেমন কেউ কেউ বলছেন, কতজন আরে সংস্কৃত বুঝতে পারবেন? পরিবর্তে স্থানীয় ভোজপুরী ভাষায় এই ঘোষণা হলে ফল অনেক ব্যাপক হত।
সব মিলিয়ে ঐতিহ্যের অনুসারী হওয়ার এই উদ্যোগ যে জনমানসে যথেষ্ট সাড়া ফেলেছে, তা বলাই যায়।