রাম মন্দির নির্মানের আবহে, যোগীরাজ্যে তৈরি হয়েছে অসংখ্য হিন্দুমন্দির। সেইসঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে পুরোহিতের চাহিদা। অনেকেই মনে করছেন, আগামী দিনে রাম মন্দিরের মতো জায়গায় পৌরোহিত্যের কাজ পাওয়া সরকারি চাকরির সমান হবে। তাই ইতিমধ্যেই সেখানে যোগ দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি শুরু করেছে যোগিরাজ্যের পড়ুয়ারা। ঠিক কীভাবে? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
সংস্কৃত শেখার প্রতি নতুন করে আগ্রহ বাড়ছে যোগীরাজ্যের পড়ুয়াদের। সেইসঙ্গে নিয়মিত ধর্মীয় আচারের পাঠ নিচ্ছেন তাঁরা। উদ্দেশ্য একটাই, রাম মন্দিরে পুরোহিত হিসেবে যোগ দেওয়া। শুধু রাম মন্দির নয়। বর্তমানে গোটা উত্তরপ্রদেশ জুড়েই গড়ে উঠেছে একাধিক হিন্দু মন্দির। সেখানেও নিয়মিত পুজোপাঠ করার জন্য পুরোহিত দরকার। সেই কাজে যোগ দেওয়ার উদ্দেশ্য নিয়েই কোমর বেঁধে নেমেছেন যোগীরাজ্যের পড়ুয়ারা।
আরও শুনুন: মন্দির না মসজিদ! ‘জ্ঞানবাপী আসলে বৌদ্ধ মঠ’, দাবি পৌঁছল সুপ্রিম কোর্টে
রামমন্দির উদ্বোধনের দিকে তাকিয়ে গোটা দেশের মানুষ। ইতিমধ্যেই সেই দিনক্ষণ ঘোষণা করেছে মন্দির কর্তৃপক্ষ। জানা গিয়েছে, খোদ প্রধানমন্ত্রী রামমন্দির উদ্বোধনের রাজকীয় অনুষ্ঠানে হাজির থাকবেন। সেই সঙ্গে থাকবেন আরও অনেক গণ্যমান্য ব্যক্তিত্বরা। আর এই আবহেই নতুন করে উঠে এসেছে পুরোহিতের চাহিদার প্রসঙ্গ। রামমন্দিরে নিত্যপুজোর জন্য একাধিক পুরোহিতের প্রয়োজন হবে। সেক্ষেত্রে নতুন প্রজন্মের অর্থাৎ যুবকদের চাহিদাই বেশি হবে বলে মনে করছেন অনেকে। সেইসঙ্গে এমনটাও মনে করা হচ্ছে, রামমন্দিরে পুরোহিতের চাকরি সরকারি চাকরির মতোই স্বীকৃতি পাবে। এর আগে এ প্রসঙ্গে একমাত্র সরকারি চাকরির ব্যবস্থা ছিল সেনাবাহিনীতে। পদের নাম ‘ধর্মগুরু’। এই পদে যোগ দেওয়ার জন্য সংস্কৃত এবং পৌরোহিত্যে বিশেষ জ্ঞান থাকা আবশ্যক। মূলত সংস্কৃত নিয়ে স্নাতকে ভরতি হওয়া পড়ুয়ারাই সেনাবাহিনির ওই পদে যোগ দেওয়ার আবেদন জানাতেন। তবে বর্তমানে সেইসঙ্গে নতুন করে যোগ হয়েছে ধর্মীয় আচার শেখার কোর্স। চলতি শিক্ষাবর্ষে এই কোর্সের প্রতি বিশেষ আগ্রহ দেখাচ্ছে অধিকাংশ পড়ুয়া। মনে করা হচ্ছে, এই কোর্সের পর পুরোহিত হিসেবে রাম মন্দিরে যোগ দেওয়ার সুযোগ মিলতে পারে। সেটিকেই পাখির চোখ করেছেন রাজ্যের পড়ুয়ারা।
আরও শুনুন: বদলাচ্ছে দেশ! ১০০ বছর পেরিয়ে মিলল অধিকার, তামিলনাড়ুর মন্দিরে পুজো দিলেন দলিতরা
উত্তরপ্রদেশের একাধিক কলেজে এই ধর্মীয় আচার শেখার সুযোগ মিলছে। বিজ্ঞান শাখার ছাত্ররাও সেখানে ভরিত হচ্ছেন। বেশ কয়েকবছর আগে নেহেরু গ্রাম ভারতী-তে সর্বপ্রথম এই ধর্মীয় আচারের কোর্স চালু হয়েছিল। সেই সময় মাত্র কয়েকজন পড়ুয়াকে নিয়ে শুরু হয়েছিল এই নতুন বিষয়। কোর্সের মূল উদ্দেশ্য ছিল সংস্কৃত শেখার পাশাপাশি ধর্মীয় আচার শিখিয়ে পড়ুয়াদের পৌরহিত্যে পারদর্শী করে তোলা। রামমন্দির নির্মানের আবহে নতুন দিশা পেয়েছে এই বিশেষ কোর্সটি। তাই এখানে ভরিতি হওয়ার জন্য অনেকেই আবেদন জানাতে শুরু করেছেন। সকলেই মনে করছেন, এই কোর্সের জেরে পরবর্তীকালে রাম মন্দিরের মতো জায়গায় চাকরি পেতে সাহায্য হবে। এক্ষেত্রে রাম মন্দির কর্তৃপক্ষের তরফেও পুরোহিতের চাহিদার কথা ঘোষণা করা হয়েছে। শুধুমাত্র মন্দিরের গর্ভগৃহ নয়, তার বাইরের কাজের জন্যও পুরোহিত প্রয়োজন হবে বলে জানিয়েছেন মন্দির কর্তৃপক্ষ। আপাতত সেই কাজের বিনিময়ে কোনও মাস মাইনের ব্যবস্থা থাকবে না। তবে প্রত্যকের পুরোহিতকে নির্দিষ্ট কাজের বিনিময়ে দক্ষিণা দেওয়া হবে। মনে করা হচ্ছে, ২০০-রও বেশি পুরোহিতকে এই কাজে নিযুক্ত করা হবে। কিন্তু ঠিক কীভাবে সেই নির্বাচন হবে, তা জানানো হয়নি। তাই সবরকম কাজ শিখে নিজেদের প্রস্তুত করে নিতে চাইছে যোগিরাজ্যের পড়ুয়ারা। এতদিন সংস্কৃত এবং ধর্মীয় আচার শিখে সেনাবাহিনীতে ধর্মগুরু হিসেবে যোগ দেওয়ার সুযোগ ছিল। এবার রাম মন্দির আবহে সেইসঙ্গে নতুন সুযোগ হিসেবে যোগ হল পৌরোহিত্য। আগামীদিনে রাজ্যের পড়ুয়াদের জন্য নতুন কর্মসংস্থানের দিশা হবে এই পৌরোহিত্য। সেইসঙ্গে এভাবেই সনাতন ধর্মের আদবকায়দা চিরকাল বজায় করতে পারবে তাঁরা, এমনটাই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।