বড় হয়ে মন্দির ভাঙতে পারে, এমন ছাত্রকে আমরা পড়াই না। এহেন বিস্ফোরক মন্তব্য করেই নার্সারির পড়ুয়াকে স্কুল থেকে বহিষ্কারের নির্দেশ ধরিয়েছেন প্রধান শিক্ষক। কী ঘটেছে ঠিক? শুনে নেওয়া যাক।
সবে নার্সারির ছাত্র। বয়স বছর চার-পাঁচ। কিন্তু তাকেই বহিষ্কারের নির্দেশ ধরিয়েছে স্কুল। কিন্তু কেন? না, পড়াশোনা না করা কিংবা কোনও আচরণের সমস্যা নয়। স্রেফ ধর্মীয় অভিযোগে এই শাস্তি বরাদ্দ করা হয়েছে তার জন্য। খোদ প্রধান শিক্ষকের বক্তব্য, ‘বড় হয়ে মন্দির ভাঙবে এমন ছাত্রকে আমরা পড়াই না!’ আর সেই কথা ধরেই খুদে পড়ুয়াকে সাসপেন্ড করেছে উত্তরপ্রদেশের আমরোহার স্কুলটি।
অথচ এত ছোট এক পড়ুয়ার প্রসঙ্গে এমন কথা আসছেই বা কোথা থেকে?
সে কথার নেপথ্যে রয়েছে এক ছোট্ট ঘটনা। দাবি, স্কুলের টিফিনে আমিষ খাবার নিয়ে গিয়েছিল ওই খুদে। আর তাতেই গেল গেল রব উঠেছে। অথচ ছোটদের টিফিনে সুস্বাদু কোনও খাবার দিতে কে না চান! পাশাপাশি ছোটদের পুষ্টির জন্য প্রোটিন খাবারের উপকারিতাও সকলেরই জানা। সেখানে টিফিনে আমিষ খাবার দেওয়া একটা বড় অংশের মানুষের কাছেই একেবারে স্বাভাবিক ব্যাপার। একইরকমভাবে বন্ধুদের মধ্যে টিফিন ভাগ করে খাওয়াই স্বাভাবিক। কিন্তু যোগীরাজ্যে আমিষ-নিরামিষ নিয়ে দ্বন্দ্ব তো বিজেপির আমলে বারেবারেই মাথাচাড়া দিয়েছে। আমিষ খাওয়া মানেই মুসলিম, এমনই এক সমীকরণ টেনেছেন মোদি-শাহরা। ঘটনাচক্রে এই শিশুটিও মুসলিম পরিবারের সন্তান। ফলে এই আমিষ খাবার স্কুলে আনা নিয়েই উসকে উঠেছে বিতর্ক। প্রধান শিক্ষকের বক্তব্য, তাঁরা স্কুলে এমন কোনও ছাত্রকে পড়াবেন না, যে মন্দির ভাঙবে আর হিন্দুদের ক্ষতি করবে। উপরন্তু অভিযোগ, আমিষ খাবার খাইয়ে অন্য পড়ুয়াদের ধর্মান্তরিত করবে, এমন কথা নাকি বলেছে ওই খুদে। যদিও খুদের মা বলছেন, স্কুলের অনেক পড়ুয়াই অনেকসময় হিন্দু-মুসলিম ইস্যুতে ঝগড়া করে, তাঁর ছেলেকে উত্যক্তও করে।
সত্যি বলতে, বেঁচে থাকার জন্য খাবার খেতে হয়। আদিম মানুষ যেমন যা পেয়েছে তা দিয়েই ক্ষুন্নিবৃত্তি করেছে, তেমনই এ দেশে আর এ পৃথিবীতে এখনও অনেক মানুষ খাবার নিয়ে বাছবিচারের সুযোগই পান না, কেননা খাবার জোটাই তাঁদের কাছে ভাগ্যের। অথচ এ দেশে দিন দিন খাবারের সঙ্গেও ধর্মকে জুড়ে দিয়েছে রাজনীতি। শুধু খাবারই নয়, রোজকার দিনযাপনের সঙ্গেও জুড়েছে ধর্ম। আসলে ধর্মের জুড়ে থাকায় তো সমস্যা ছিল না, কিন্তু রাজনীতির ভাষ্য মেনে এক ধর্ম হয়ে দাঁড়িয়েছে অন্য ধর্মের শত্রু। আর সেই বিরোধিতা ছেয়ে যাচ্ছে সর্বত্র। এমনকি স্কুলের পরিসরও যে তার থেকে মুক্ত নয়, নতুন করে সে কথা বুঝিয়ে দিল যোগীরাজ্যের এই ঘটনা।