ধুমধাম করেই সারা হয়েছিল বিয়ে। কিন্তু সময় গড়াতেই বদলে গেল সেই আনন্দের ছবি। বিয়ে করা স্ত্রীকে মাত্র ঘণ্টা দুই পরেই তিন তালাক দিলেন এক ব্যক্তি। কিছুদিন আগেই যদিও তিন তালাক আইন এনে এই প্রথাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে মোদি সরকার। কিন্তু নরেন্দ্র মোদির অন্যতম সহযোগী যোগী আদিত্যনাথের রাজ্যেই ঘটল এহেন ঘটনা। যার জেরে উঠছে নানা প্রশ্ন। শুনে নেওয়া যাক।
আইন থাকে আইনের জায়গাতেই। কিন্তু যত আইনই আসুক না কেন, তাতে মেয়েদের অবস্থা কতখানি বদলায়? সেই প্রশ্নই যেন ফের তুলে দিল যোগীরাজ্যের একটি সাম্প্রতিক ঘটনা। যেখানে বিয়ে সারার পর মাত্র ঘণ্টা দুই যেতে না যেতেই তাৎক্ষণিক ভাবে তিন তালাক দিয়ে সেই বিয়েকে নাকচ করে দিয়েছেন এক ব্যক্তি। কী ঘটেছে ঠিক? আসছি সে কথাতেই।
আরও শুনুন: ‘মুসলিম নেই আর’, প্রেমের টানে ভারতে আসা পাক বধূকে ফেরাতে নারাজ পরিবার, পড়শিরাও
জানা গিয়েছে, উত্তরপ্রদেশের আগ্রায় সম্প্রতি বিয়ের আসর বসেছিল দুই বোনের। প্রিয়াংশু গার্ডেনের ওই বিয়ের আসরে কনের সাজে বসেছিলেন গৌরী ও ডলি নামের দুই বোন। হাজির হয়েছিল দুই পাত্রপক্ষও। বড় বোন গৌরীর বিয়ে মিটে গিয়েছিল নির্বিঘ্নেই। কিন্তু ডলির বিয়ে নিয়েই গোলমাল বেধে যায়। নির্ধারিত সময়ের বেশ পরেই বিয়ের আসরে পৌঁছয় পাত্রপক্ষ। তার উপরে খাবারের মান নিয়েও তারা অভিযোগ করে। তার থেকেও বড় কথা, নিকা হয়ে যাওয়ার পর একটি দামি গাড়ি এবং আরও কিছু গয়না দাবি করে বসেন পাত্র আসিফ। এমনিতে দেশের আইন অনুযায়ী পণপ্রথাকে অবৈধ বলে ঘোষণা করা হলেও, নগদ টাকার বদলে নানারকম দামি জিনিসপত্রের লেনদেন বিয়েতে হতেই থাকে। এই বিয়েতেও উপহারের নামে তেমন কিছু দেওয়া হয়েছিল পাত্রীপক্ষের তরফে। পাত্রীর দাদার মতে, দুই বোনের বিয়ে উপলক্ষে প্রায় ৩০ লক্ষ টাকা খরচ করেছেন তাঁরা। কিন্তু তাতে পাত্রপক্ষের মন ওঠেনি। তাই আরও দাবিদাওয়ার পাশাপাশি হুমকি দেওয়া হয় যে দাবি না মিটলে কনেকে এখানেই ফেলে রেখে যাওয়া হবে। আর তেমনটাই ঘটেছে। ঘণ্টা দুই ধরে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তপ্ত বাদানুবাদ চলে। শেষ পর্যন্ত তিন তালাক উচ্চারণ করে মণ্ডপ ছেড়ে চলে যায় বরপক্ষ। ঘটনায় পাত্র ও তার বাবা সহ মোট সাতজনের নামে এফআইআর দায়ের করা হয়েছে আগ্রার স্থানীয় থানায়।
আরও শুনুন: ‘ইসলামবিরোধী’ অভিযোগে হয়েছিল নিষিদ্ধ, সেই শাড়িকে ফিরিয়ে আনছেন পাকিস্তানি নারীরা
কিন্তু এই ঘটনা আসলে আরও কিছু প্রশ্ন তুলে ধরেছে। মোদি সরকারের আমলেই আইন করে নিষিদ্ধ করা হয়েছে তিন তালাক প্রথা। আর সেই প্রসঙ্গ টেনেই ইদানীং কালে অভিন্ন দেওয়ানি বিধিতে মুসলিম মেয়েদের সুযোগসুবিধা নিয়ে জোর সওয়াল করছে বিজেপি শিবির। তাদের দাবি, এই অভিন্ন আইনব্যবস্থা মেয়েদের বিয়ে এবং সম্পত্তির উত্তরাধিকার সংক্রান্ত বিষয়গুলিতে সমানাধিকার দেবে। এমনকি খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও এই ইস্যুতে সওয়াল করেছেন, কেন বাকিদের মতো সুযোগ সুবিধা পাবে না মুসলিম মেয়েরা? কিন্তু যে তিন তালাক আইন ইতিমধ্যেই নিষিদ্ধ, সেই তালাক প্রথারই শিকার হয়েছেন এই তরুণী। তাও আবার যোগীরাজ্যে, যে যোগী আদিত্যনাথ নরেন্দ্র মোদির সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য সৈনিকদের মধ্যে একজন। তাই তিন তালাকই হোক কি অভিন্ন দেওয়ানি বিধি, মেয়েদের অবস্থান তাতে কতখানি বদলাবে কিংবা বদলাবে না, তা নিয়ে প্রশ্ন কিন্তু থেকেই যাচ্ছে।