তালিবানের দৌলতে বিপর্যয় পিছু ছাড়ছে না আফগানিস্তানের। অশান্ত দেশ, ঘরছাড়া মানুষের ভিড়, ভেঙে পড়া অর্থনীতি, এর মধ্যেই শোনা গেল নতুন আশঙ্কার কথা। দুর্ভিক্ষ শুরু হতে পারে আফগানিস্তানে। এক উচ্চপর্যায়ের সম্মেলনে আফগানিস্তান প্রসঙ্গে এমনই উদ্বেগ প্রকাশ করল রাষ্ট্রপুঞ্জ এবং ইউনিসেফ।
দু’দশকের যুদ্ধ। অসহায়তা। যন্ত্রণা। এসবের পরেও বলা যায়, এই সময়টাই হয়তো আফগানিস্তানের সবচেয়ে বড় সংকটকাল। এ কথা বলছেন খোদ রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিব, আন্তোনিও গুতেরেস। তালিবানের শাসন জারি হওয়ার পর থেকে ক্রমশ বাড়ছে দারিদ্র্যের হার। বহু মানুষ ঘরছাড়া। নিয়মিত কাজ হারিয়েছেন অনেকেই। আমজনতার জন্য বরাদ্দ প্রাথমিক পরিষেবাগুলিও ভেঙে পড়ার মুখে। এদিকে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বাজারের দর। ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রাম-এর অনুমান, অন্তত ৪০ শতাংশ শস্য নষ্ট হয়ে গিয়েছে এই টানাপোড়েনের পরিস্থিতিতে। মূল খাদ্যশস্য গমের দাম বেড়েছে ২৫ শতাংশ। এমনকী রাষ্ট্রপুঞ্জ মনে করছে, শীতকাল আসার আগেই হয়তো দুর্ভিক্ষ দেখা দিতে পারে সে দেশে। জেনিভায় একটি উচ্চপর্যায়ের সম্মেলনে আফগানিস্তান প্রসঙ্গে এমনই উদ্বেগ প্রকাশ করল রাষ্ট্রপুঞ্জ এবং ইউনিসেফ।
আরও শুনুন: বোরখা ছুঁড়ে ফেলে রঙিন পোশাকে উজ্জ্বল, তালিবানের চোখে চোখ রেখে প্রতিবাদে আফগান মহিলারা
এমনিতেই খরা, জলবায়ুর পরিবর্তন, এসবের কারণে ব্যতিব্যস্ত ছিল আফগানিস্তান। তার ওপর তালিবানের সঙ্গে অনবরত যুদ্ধের চাপ। আন্তর্জাতিক অনুদানের উপরই এত দিন অনেকখানি নির্ভর করছিল আফগানিস্তানের অর্থনীতি। কিন্তু তালিবানের দখলে আসার পর সে পথেও কাঁটা পড়েছে। আফগানিস্তানের নতুন সরকারের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ঠিক কেমন হবে, তা নিয়েই দ্বন্দ্বে রয়েছে একাধিক দেশ। আফগানিস্তান ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন অনেক মানবাধিকার সংস্থার কর্মী। অথচ বিদেশ থেকে আসা আর্থিক অনুদানের উপর আফগানিস্তানের প্রায় ১ কোটি শিশুর নিয়মিত খাওয়াদাওয়া নির্ভর করে বলে বৈঠকে জানিয়েছেন ইউনিসেফের প্রধান। সে দেশের অনেক শিশুই অপুষ্টিতে ভোগে। তাঁর আশঙ্কা, আফগানিস্তানের বর্তমান পরিস্থিতি না বদলালে কেবল অনাহারের কারণেই মৃত্যুর মুখে পড়তে পারে অন্তত ১০ লক্ষ শিশু।
আরও শুনুন: তাক করা তালিবানি বন্দুকের মুখে নির্ভয়ে দাঁড়িয়ে আফগান মহিলা, কুর্নিশ বিশ্ববাসীর
জেনিভায় আয়োজিত এই বৈঠকে আফগানিস্তানের জন্য একশো কোটি ডলার সাহায্য চাওয়া হয়েছিল। সেই লক্ষ্য পূরণ হয়েছে বলে সাংবাদিক বৈঠকে জানিয়েছেন রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিব। তার মধ্যে খাবার এবং ওষুধের জন্য ৬৪০ লক্ষ ডলার সাহায্য দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে আমেরিকা।