যুদ্ধের ভয়াবহতা ধ্বংস করেছে ইউক্রেনকে। বুচা শহরে গণহত্যার বীভৎস ছবি প্রকাশ্যে আসতেই শিউরে উঠেছে গোটা বিশ্ব। এবার সামনে এল আর এক মর্মান্তিক দৃশ্য। জানা গেল, রুশ সেনাদের ধর্ষণ থেকে বাঁচতে ইউক্রেনের বহু নারীই তাঁদের চুল কেটে ফেলছেন। এই সিদ্ধান্ত কীভাবে বাঁচাবে তাঁদের নির্যাতন থেকে? আসুন শুনে নিই তাঁদের ভাবনা।
ইউক্রেনের বুচা-সহ একাধিক শহরে গণহত্যার যে ভয়াবহ দৃশ্য সামনে এসেছে, তাতে টলে গিয়েছে আধুনিক বিশ্ব। অনেক যুক্তি, প্রতিযুক্তির পরও আজকের পৃথিবী যুদ্ধ থামাতে পারেনি। রুশ হানায় বিধ্বস্ত হয়েছে ইউক্রেন। আর যুদ্ধ যে একটা দেশের নাগরিকদের কী মর্মান্তিক পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দেয়, বিস্ফারিত চোখে সেই হৃদয়বিদারক দৃশ্যই যেন দেখছে বিশ্ব। একের পর এক তথ্য সামনে আসছে, যা লজ্জা দিচ্ছে বিশ্ব মানবতাকে। বুচা শহরে গণহত্যার জেরে রাষ্ট্রসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিল থেকে সাসপেন্ড করা হইয়েছে রাশিয়াকে। এমনকী যে ভারত কৌশলগতভাবে যুদ্ধকালীন সময়েও রাশিয়ার সঙ্গে মিত্রতা বজায় রেখেছে, সেই ভারতও তীব্র নিন্দা করেছে এহেন ঘটনার।
আরও শুনুন: বন্ধুত্বের অপূর্ব নিদর্শন! রুশ হানায় নিহত ব্যক্তির পাশে ঠায় বসে রইল পোষা কুকুর
তবে এ তো মাত্র কয়েকটা শহরের ছবি। ইউক্রেনের শহর থেকে শহরে এখন ছড়িয়ে আছে যুদ্ধের মর্মান্তিক দৃশ্য। নাগরিকদের তাড়া করে বেড়াচ্ছে আতঙ্ক। যে দৃশ্যের মুখোমুখি তাঁরা হয়েছেন, তা বোধহয় কল্পনাও করতে পারেননি তাঁরা। ভয়াবহ বাস্তব ওলটপালট করে দিয়েছে সবকিছু। বুচা যখন খবরের শিরোনামে, তখনই উঠে আসছে সে-দেশের আর এক শহর ইভানকিভের কথা। রাজধানী কিভ থেকে মাত্র ৫০ মেইল দূরের শহরটির দখল নিয়েছিল রুশ সেনা। আর তারপরই সেখানকার অধিবাসীদের উপর নেমে আসে চরম নির্যাতন। বিশেষত আক্রমণের শিকার হন মহিলারা। নির্বিচারে রুশ সেনারা ধর্ষণ করে তাঁদের।
আরও শুনুন: রুশ হানায় যদি মৃত্যু হয়! ভয়ে সন্তানের পিঠে নাম-ঠিকানা লিখে রাখছেন ইউক্রেনবাসী
ইউক্রেনের মহিলাদের উপর যে নির্মম অত্যাচার চালিয়েছে রুশ সেনা, সেই আতঙ্কের দৃশ্যগুলি এখনও রীতিমতো টাটকা। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম জানাচ্ছে সেইসব ঘটনা। ১৫ আর ১৬ বছরের দুই কিশোরী। পিঠোপিঠি দুই বোনকে চুল ধরে টেনে ঘরের বাইরে বের করে আনে রুশ সেনারা। তারপর চলে ধর্ষণ। এরকম ঘটনা একটা, দুটো নয়, অসংখ্য। আর একটি ঘটনার কথা শুনেও বিশ্ববাসীর শিরদাঁড়া দিয়ে বয়ে গিয়েছে ভয়ের ঠান্ডা স্রোত। এক মহিলার স্বামীকে তাঁর চোখের সামনে গুলি করে হত্যা করা হয়। তারপর তাঁর চার বছরের সন্তানকে অন্য ঘরে আটকে রেখে ধর্ষণ করা হয় মহিলাকে। ইউক্রেনের তরফে জানানো হয়েছে, রুশ সেনারা সে দেশের নাবালিকাদেরও ধর্ষণ করেছে নির্বিচারে। ইভানকিভও এর ব্যতিক্রম নয়য়। রাজধানী কিভের পাশ্ববর্তী অঞ্চলগুলি যখন দখল করে নেয় রুশ বাহিনী, তখন ইভানকিভও ছিল সেই তালিকায়। একইভাবে এই শহরের মহিলাদের উপরও নেমে এসেছিল নির্যাতন, ধর্ষণ। সম্প্রতি সে দেশের আধিকারিক এ কথা জানাতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। জানান, একটা সময় আসে, যখন শহরের সব মেয়েরা চুল কেটে ফেলতে শুরু করে। চুল ধরে টেনে নিয়ে গিয়েই অত্যাচার করত রুশ সেনা। সেই নির্যাতনের হাত থেকে বাঁচতেই এমন সিদ্ধান্ত। তা ছাড়া এমন ভাবনা ছিল যে, চুল কেটে ফেললে আর মেয়েরা সুন্দর থাকবে না। সৌন্দর্য না থাকলে হয়তো রুশ সেনারা তাঁদের রেয়াত করবে। এই ভেবেই, ইউক্রেনের বহু মহিলা এবং ইভানকিভ শহরের মেয়েরাও তাঁদের চুল কেটে ফেলতে শুরু করেছেন বলে জানিয়েছেন ওই আধিকারিক।
আরও শুনুন: দেশে জমেছে রুশ সেনাদের পচাগলা মৃতদেহের স্তূপ, ঘোরতর সমস্যার মুখে ইউক্রেন
আধুনিক বিশ্ব এই অত্যাধুনিক প্রযুক্তির শতাব্দীতে পা দিয়েও যুদ্ধ আটকাতে পারেনি। পারেনি এই লাঞ্ছনা, নির্যাতন রোধ করতে। বিশ্ব মানবতার ইতিহাসে এ এক অনপনেয় কালিমা। ইউক্রেনের মহিলাদের এই হাহাকার মনে করিয়ে দিচ্ছে ‘গোয়েরনিকা’র কথা। ধ্বংস হয়ে যাওয়া এক শহরকে তুলে ধরতে গিয়ে পিকাসো ফুটিয়ে তুলেছেন নারীদেরই। প্রখ্যাত সে চিত্রকর্মে সবথেকে বেশি চরিত্র আছে মহিলাদেরই। যখন আক্রমণ নেমে আসে, তখন সবথেকে বেশি যন্ত্রণা সহ্য করতে হয় নারীদেরই। ইউক্রেন যেন গোটা বিশ্বকে নতুন করে মনে করিয়ে দিচ্ছে সে কথাই।