সন্তান যখন বিপদে পড়ে, পৃথিবীর সব শক্তি জড়ো হয় মায়ের দুহাতে। সন্তানের জন্য মা করতে পারেন না হেন কাজ বোধহয় সত্যিই নেই। যুদ্ধে টালমাটাল ইউক্রেনে দাঁড়িয়ে নতুন করে সে কথাই প্রমাণ করে দিলেন এক মহিলা। আসুন, শুনে নেওয়া যাক এই সাহসী মায়ের কথা।
যত ঝড় ঝঞ্ঝা আসুক, সন্তানকে দুহাত দিয়ে আগলে রাখতে চান মা। আর কেউ যখন সেই সন্তানের ভাল থাকার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়, তখন প্রবল ক্রোধে রুখে দাঁড়ান তিনি। সেখানে তুচ্ছ হয়ে যায় নিজের প্রাণও। যুগে যুগে কালে কালে এমন করেই অভূতপূর্ব সাহসের নজির রেখেছেন মায়েরা। ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষিতেও সম্প্রতি সামনে এল এমনই এক মায়ের কথা।
আরও শুনুন: যুদ্ধের অভিশাপ! প্রতিদিন উদ্বাস্তু হচ্ছে ইউক্রেনের ৭৫ হাজার শিশু, উদ্বিগ্ন ইউনিসেফ
ইউক্রেনের বাসিন্দা ছিলেন ৪৮ বছর বয়সি ওলগা সেমিড্যানোভা। নিজের দেশ যখন বিধ্বস্ত হয়ে যাচ্ছে রাশিয়ার আক্রমণে, মিসাইলের আঘাতে জ্বলে উঠছে শহরের পর শহর, চুপ করে ঘরে বসে থাকতে চাননি তিনি। দেশ ছেড়ে কোনও নিরাপদ আশ্রয়েও পালাতে চাননি এই মহিলা। পরিবর্তে হাতে তুলে নিয়েছিলেন বন্দুক। যে শত্রুরা তাঁর সন্তানদের জীবনে এমন অশান্তির ঝড় তুলেছে, যারা তাঁর বাসভূমিকে ক্ষতবিক্ষত করে চলেছে প্রতিনিয়ত, তাদের বিরুদ্ধেই রুখে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি। আর চলতি মাসে সেই যুদ্ধেই শহিদ হলেন ওলগা।
আরও শুনুন: খেলা হোক কি যুদ্ধ, পিছু হটবে না দেশ! বেজিং প্যারালিম্পিকসে দ্বিতীয় স্থান দখল করে জানাল ইউক্রেন
মধ্যবয়সি ওলগা পেশায় একজন কমব্যাট মেডিক। ১২টি সন্তানের মা তিনি। তার মধ্যে ছজন তাঁর পালিত সন্তান। সন্তানদের নিরাপত্তার ভাবনাই তাঁকে এক অসম যুদ্ধের শক্তি জুগিয়েছিল। জানা গিয়েছে, লড়াই করতে করতেই আহত হয়েছিলেন তিনি। তবুও লড়াইয়ের ময়দান ছেড়ে আসেননি। যখন তাঁর দলের অধিকাংশ সেনাই নিহত, তখনও পিঠ না দেখিয়ে একাই লড়ে গিয়েছেন ওলগা। অবশেষে শহিদ হয়েছেন তিনিও। যদিও তাঁকে শহিদের মর্যাদায় সমাধিস্থ করা যায়নি এখনও। যেহেতু এখনও পুরোদমে যুদ্ধ চলছেই, ফলে শহিদদের দেহ উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি বলেই খবর।
আরও শুনুন: ‘অপারেশন গঙ্গা’ মিশনে শামিল হয়ে যুদ্ধের দেশে ভারতের মেয়ে! বাঁচিয়ে এনেছেন ২৫০ পড়ুয়াকে
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি সর্বশক্তি নিয়ে ইউক্রেনের বুকে হামলা করে রাশিয়া। দেওয়ালে পিঠ ঠেকলেও যুদ্ধের ময়দান ছাড়েনি ইউক্রেন। আর তার আসল শক্তি ওলগার মতো বীর সেনানীরাই। রুশ সেনার হাতে নিহত এই কমব্যাট ডাক্তারকে ‘মাদার হিরোইন’ উপাধি দিয়ে সম্মান জানিয়েছে ইউক্রেনের সেনাবাহিনী। মায়ের বীরত্বে গর্বিত ওলগার মাতৃহারা সন্তানেরাও। কেবল তাঁর দেশ নয়, এই অকুতোভয় সেনাকে কুর্নিশ জানাচ্ছে সারা দুনিয়াই।