যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ ছেড়ে কোনও মতে প্রাণ নিয়ে পালিয়েছিল গোটা পরিবার। পিছনে পড়েছিল সাধের ঘর বাড়ি, উঠোন-দালান, এমনকী সাধের পোষ্যটিও। কিন্তু যুদ্ধ পরিস্থিতি থিতিয়ে আসতেই ইউক্রেনে ফিরে সেই পরিবার যা দেখল, তাতে তাদের বিস্ময় ধরে রাখার জায়গা ছিল না। দেশে ফিরে কী এমন হল তাদের সঙ্গে? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
শান্তশিষ্ট দেশটার বিরুদ্ধে হঠাৎ করেই যুদ্ধ ঘোষণা করে দিয়েছিল রাশিয়া। এক লহমায় রণক্ষেত্রের আকার নিল ইউক্রেন। কান পাতলেই গুলি-বোমার শব্দ। মাথার উপর পাক খেত শত্রুপক্ষের বোমারু বিমান। রাস্তায় রুশ সেনার প্রহরা আর প্রাণের ভয়। দেশ ছেড়ে পালাতে শুরু করেছিলেন একের পর এক বাসিন্দা। প্রতিবেশী দেশগুলির সীমান্তে ক্রমশ বাড়ছিল শরণার্থীদের ভিড়।
যুদ্ধক্লান্ত ইউক্রেন থেকে আরও অনেকের মতোই প্রাণভয়ে পালিয়ে গিয়েছিলেন ক্যাটরিয়ানা টাইটোভা ও তাঁর পরিবার। গয়না বানানোই পেশা ছিল ৩৫ বছরের ক্যাটরিয়ানার। কিন্তু যুদ্ধটা হঠাৎই যেন এসে পড়ল একেবারে ঘরের ভিতরে। হস্টোমেলের দখল নিল রুশ সেনা। ঘন ঘন বোমা পড়ছিল বিমানবন্দরের আশেপাশে। সেসময় পালানো ছাড়া আর কোনও পথই খোলা ছিল না তাঁদের কাছে। কোনওমতে দুই সন্তানকে নিয়ে ঘর ছাড়লেন ক্যাটরিয়ানা ও ওলেক্সান্ডার। পরিস্থিতি এমন দাঁড়াল যে পোষা কুকুরটিকেও সঙ্গে করে নিয়ে যেতে পারেলেন না তাঁরা। যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনে একা পড়ে রইল তাঁদের প্রিয় সাইবেরিয়ান হাস্কি বেলি।
আরও শুনুন: একাই একশো! ঘাঁটিতে ঢুকে ৪০ জন রুশ সেনাকে ঘায়েল করল ইউক্রেনের ছাগল
এরই মধ্যে কেটে গিয়েছে মাস চার। যুদ্ধ শেষ না হলেও তার প্রাবল্য কিছুটা কমেছে। সম্প্রতি হস্টোমেল থেকে সেনা সরিয়ে নিয়েছে পুতিনের বাহিনী। আর তার পরেই নিজের ঘরে ফেরার সিদ্ধান্ত নেয় ইউক্রেনের ওই পরিবারটি। প্রিয় পোষ্যটির কথা মনে করে অনেক চোখের জল ফেলেছেন তাঁরা। তবে সে যে যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনে আর বেঁচে নেই, তা একরকম ধরেই নিয়েছিলেন ক্যাটরিয়ানারা।
আরও শুনুন: কয়েকশো পোষ্যের ভার তাঁরই কাঁধে! তাদের মুখ চেয়েই যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেন ছাড়তে নারাজ বৃদ্ধা
কিন্তু বাড়ি ফিরে তাঁরা যা দেখলেন, তাতে তাঁদের বিস্ময়ের শেষ ছিল না। রুশ বোমায় ভেঙেচুরে গিয়েছে বাড়ি। চারদিকে ধ্বংসের ছবি। আর সেসবের মধ্যেই অধীর অপেক্ষায় বসে রয়েছে বেলি। যেন তাঁদের ফেরারই অপেক্ষা এতদিন ধরে করছে তাঁদের প্রিয় পোষ্যটি। এত যুদ্ধ, বোমার মধ্যেও কীভাবে যেন টিকে গিয়েছিল কুকুরটি। আর এই গোটা সময়টাই সে অপেক্ষা করে গিয়েছে তার মালিকের। তাই অন্য কোথাও যাওয়ার কথাও বোধহয় ভাবেনি বেলি।
আর শেষমেশ তাদের ফিরে পেয়ে আনন্দে ছুটোছুটি শুরু করে দেয় বছর নয়েকের কুকুরটি। কখনও পায়ে এসে মুখ ঘষেছে তো কখনও আনন্দে ল্যাজ নেড়েছে। বেলিকে ফিরে পেয়ে চোখের জল ধরে রাখতে পারেনি পরিবারটিও। দেশে ফিরে যে তাঁদের জন্য এত বড় উপহার অপেক্ষা করবে, তা ঘুণাক্ষরেও জানতেন না ক্যাটরিয়ানারা। এখনও পর্যন্ত যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনে কত কুকুরের যে মৃত্যু হয়েছে তার ইয়ত্তা নেই। কেউ মারা গিয়েছে রুশ অস্ত্রে, তো কেউ না খেতে পেয়ে। বিভিন্ন অ্যানিমেল শেল্টারে খাবার ও জলের অভাবে মারা গিয়েছে অন্তত ৩৫৫টি কুকুর। এত সব কিছুর মধ্যে বেলির বেঁচে থাকাটা মিব়্যাকলের চেয়ে কম নয়। বেলিকে ছাড়াই শহর ছেড়েছিল ক্যাটরিয়ানার পরিবার। কিন্তু তাই বলে মালিককে কিন্তু ভোলেনি পোষ্য কুকুরটি। বরং ধ্বংসস্তূপের মধ্যেই বসে অপেক্ষা করে গিয়েছে সে। সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে গিয়েছে বেলির গল্প। যা শুনে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছেন নেটিজেনরাও।