একজনের বয়স সাত, আরেকজন খুব বেশি হলে পাঁচ। সাতসকালে থানায় হাজির হয়েছে দুজন। দাবি, এক্ষুনি তাদের বাবাকে গ্রেপ্তার করতে হবে। হঠাৎ এমন ‘আবদার’ শুনে পুলিশ আধিকারকরাও রীতিমতো ঘাবড়ে যান। পরে অবশ্য সবটা শুনে ব্যবস্থা নেন তাঁরাই। বাবার বিরুদ্ধে ঠিক কী অভিযোগ ছিল ওই দুই খুদের? আসুন শুনে নিই।
বাবাকে গ্রেপ্তার করুন। এই আরজি নিয়েই থানায় হাজির দুই খুদে। দাবি, দীর্ঘদিন ধরে তাদের মায়ের উপর অত্যাচার চালাচ্ছে বাবা। তাই অবিলম্বে ‘পুলিশ কাকু’-রা তাদের বাবাকে গ্রেপ্তার করুন। সঙ্গে মায়ের লেখা একটা চিঠিও নিয়ে গিয়েছিল তারা। সেখানেই ঘটনার বিস্তারিত লেখা রয়েছে বলে জানায় দুই খুদে।
আরও শুনুন: বিয়ে ভেঙেছে পাত্রী, চুল কাটিয়ে গ্রামে ঘুরিয়ে তরুণীকে শাস্তি পঞ্চায়েতের
ঘটনাটি মধ্যপ্রদেশের। সেখানকার গোয়ালিয়র জেলার ভিতরয়ার থানায় সম্প্রতি এমনই আরজি নিয়ে হাজির হয় দুই খুদে। থানায় সচারচর এত ছোট কাউকে দেখা যায় না। তাই প্রথমে পুলিশ আধিকারিকরাও তাদের দেখে অবাক হন। মনে করা হয়েছিল, কোনও বিপদে পড়ে ওই দুই খুদে থানায় হাজির হয়েছে। তবে বিপদ বলতে যা ভাবা হয়েছিল তেমনটা নয়। অর্থাৎ তারা পথ হারিয়ে বা কাউকে ভয় পেয়ে থানায় আসেনি। এসেছে তাদের মায়ের উপর হওয়া অন্যায়ের অভিযোগ জানাতে। আর সেই অন্যায়ের জন্য দায়ি তাদের বাবা। দুই খুদের দাবি, তাদের মায়ের উপর রিতিমতো অত্যাচার চালায় বাবা। এমনকি মারধরও করে। মায়ের এই কষ্ঠ আর সহ্য করতে পারেনি দুজন। তাই সটান হাজির হয়েছে থানায়। সঙ্গে অবশ্য মায়ের লেখা একটা অভিযোগ পত্রও নিয়ে গিয়েছিল ওই দুই খুদে। প্রথমে কিছু বুঝতে না পারলেও, দুই খুদের কথা শুনে সবটা পরিষ্কার হয় পুলিশ আধিকারিকদের কাছেও। সেই সময় ওই থানায় দায়িত্বাধীন অফিসার হিসেবে ছিলেন প্রদীপ শর্মা নামে এক পুলিশ অফিসার। তিনি সব শুনে দুই খুদেকে আশ্বস্ত করেন। কথা দেন, অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আরও শুনুন: জোর করে মহিলার ধর্ম পরিবর্তন মুসলিম ব্যক্তির! অভিযোগ পেয়ে বিশেষ পদক্ষেপ আদালতের
কিছুক্ষণের মধ্যেই তিনি নিজেই ওই দুই খুদের বাড়িতে হাজির হন। সেখানে তাদের বাবা-মায়ের সঙ্গে দেখা করেন। ঠিক কী ঘটেছে তা সবিস্তারে জানতে চান। পুলিশের পর্যবেক্ষণ, মাত্রাতিরিক্ত সাংসারিক ঝামেলার প্রভাব পড়ে দুই খুদের উপর। সেইসঙ্গে মায়ের উপর হওয়া অত্যাচার সহ্য করতে পারেনি দুজন। তাই সরাসরি হাজির হয় থানায়। যদিও ঘটনার জেরে তাদের বাবা-কে সত্যি সত্যি গ্রেপ্তার করেনি ওই পুলিশ অফিসার। ভালোভাবে বুঝিয়ে বলেন এমনটা যেন আর না হয়। তাঁদের জন্য কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থাও করা হয়। যতই আইন থাকুক, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে এখনও গৃহস্থ মহিলাদের উপর হওয়া অত্যাচার বন্ধ হয়নি। তাই প্রায়শই এমন ঘটনার কথা প্রকাশ্যে আসে। এই ঘটনাও তারই উদাহরণ মাত্র। তবে যেভাবে ঘটনার প্রভাব দুই খুদের উপর পড়েছে তা রীতিমতো উদ্বেগের।