‘মাদার কার্ড’ নেই, তাই ফিরিয়ে দিয়েছিল সরকারি হাসপাতাল। চিকিৎসকের সাহায্য ছাড়া বাড়িতেই দুই যমজ শিশুর জন্ম দেন মহিলা। কিন্তু হল না শেষরক্ষা। অসহায়ভাবে মৃত্যু হল মা ও দুই যমজ শিশুর। প্রশাসনিক লাল ফিতের ফাঁসে এভাবেই তিনটি ভয়াবহ মৃত্যুর সাক্ষী বিজেপি শাসিত কর্নাটকের টুমাকুরু। কী ঘটেছে ঠিক? শুনে নেওয়া যাক।
‘মাদার কার্ড’ নেই। তাই প্রসূতিকে ভরতিই নেয়নি সরকারি হাসপাতাল। অগত্যা তীব্র প্রসব যন্ত্রণা নিয়ে বাড়িতে ফিরে আসতে হয় তাঁকে। কিছুক্ষণের মধ্যে চিকিৎসক ছাড়াই জন্ম হয় দুই যমজ সন্তানের। কিন্তু প্রসবের পরে প্রয়োজনীয় চিকিৎসার অভাবে শুরু হয় তীব্র যন্ত্রণা। কার্যত যা সহ্য করতে না পেরে অকালে মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়লেন সদ্যপ্রসূতি। বাঁচেনি দুই সদ্যোজাতও। মৃত্যুর খবর প্রকাশ্যে আসতেই বিক্ষোভে ফেটে পড়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
আরও শুনুন: বিয়েতে উপহার পেয়েছেন গাড়ি, আনন্দে চালাতে গিয়ে আত্মীয়দেরই পিষলেন যুবক
ঘটনার কেন্দ্রস্থল কর্নাটকের টুমাকুরু। বিজেপিশাসিত এই রাজ্যের নিয়ম অনুসারে কোনও প্রসূতিকে সরকারি হাসপাতালে প্রসব করানোর জন্য আগে থেকে একটি ‘মাদার কার্ড’ বানিয়ে রাখতে হয়। এই কার্ডটি ছাড়া কোনও সরকারি হাসপাতাল প্রসূতিকে ভরতি নেয় না। তবে এমন নিয়মের কথা বোধহয় জানতেন না তামিলনাড়ুর ভারতীনগর এলাকার বাসিন্দা কস্তূরী ও তাঁর বাড়ির লোক। হঠাৎ করে প্রসব বেদনা শুরু হওয়ায় কস্তূরীকে নিয়ে নিকতবর্তী টুমাকুরু জেলা সদর হাসপাতালে হাজির হন তাঁর পরিবারের লোকেরা। কিন্তু আদতে তামিলনাড়ুর বাসিন্দা কস্তূরীর কাছে সেই সময় কর্নাটক সরকারের দেওয়া কোনও ‘মাদার কার্ড’ ছিল না। সরকারি পরিচয়পত্র হিসেবে আধার কার্ডও ছিল না তাঁর। তাই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাঁকে ভরতি নিতে অস্বীকার করেন। এমনকি, চিকিৎসকেরা প্রাথমিক পরীক্ষা ও চিকিৎসা করতেও অস্বীকার করেন বলে অভিযোগ। প্রসূতির যন্ত্রণার তীব্রতা আরও বাড়লে নিকটবর্তী এক বেসরকারি হাসপাতালে তাঁকে নিয়ে যাওয়ার কথা বলেন কিছু শুভাকাঙ্ক্ষী। কিন্তু তার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের সংস্থান করতেও ব্যর্থ হন কস্তূরীর পরিবারের সদস্যরা। ফলত কস্তূরীকে শেষমেশ বাড়িতেই ফিরিয়ে আনা হয়। আর সেখানেই, কোনও চিকিৎসকের তত্ত্বাবধান ছাড়াই দুই যমজ সন্তানের জন্ম দেন কস্তূরী। এমনকি প্রসব পরবর্তী প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ও শুশ্রূষারও কোনও ব্যবস্থা ছিল না। ফলত অস্বাভাবিক যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়েন তাঁকে। মায়ের সঙ্গেই মৃত্যু হয় দুই সদ্যোজাতের।
আরও শুনুন: পর্ন দেখলেই জরিমানা নয় হাজতবাস! ফোনে আপনার কাছেও কি এসেছে হুমকি?
এদিকে ঘটনার কথা প্রকাশ্যে আসতেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন ওই এলাকার বাসিন্দারা। ব্যাপক উত্তেজনা তৈরি হয় ভারতীনগর এলাকায়। বিক্ষোভের জেরে সরকারি হাসপাতালটি পরিদর্শনে যান কর্নাটকের স্বাস্থ্যমন্ত্রী কে সুধাকর। টুমকুর জেলা প্রশাসনের খবর অনুযায়ী, সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়েছেন স্থানীয়রা। ইতিমধ্যেই ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। অভিযুক্ত তিন চিকিৎসককেও সাসপেন্ড করা হয়েছে। বিজেপিশাসিত রাজ্যে চিকিৎসার অভাবে এভাবে এক প্রসূতি ও শিশুদের মৃত্যুর ঘটনায় স্বাভাবিকভাবেই বিরোধীদের তোপের মুখে গেরুয়া শিবির।