গোটা গ্রাম শুনশান। রাস্তাঘাট ফাঁকা। ঘরের দরজা বন্ধ। লোকজন প্রায় বেরোচ্ছে না বললেই হয়। রাস্তাঘাটে দেখা নেই বাচ্চাদেরও। অর্থাৎ যাকে বলে কড়া লকডাউন, তাই-ই চলছে গোটা গ্রাম জুড়ে। কারণ? কী ভাবছেন কোভিড সচেতনতা! উহুঁ, গ্রামবাসীদের বিশ্বাস গ্রামের আনাচে-কানাচে ঘুরে বেড়াচ্ছে এক অশুভ আত্মা বা পিশাচ। সেই মাংসখেকো দানবের হাত থেকে বাঁচতেই নাকি গোটা গ্রামে লকডাউন। কোথায় ঘটল এই ঘটনা? আসুন শুনে নিই।
কয়েক বছর আগেও যে-শব্দটা আমাদের দৈনন্দিন অভিধানে ছিল না, সেটাই এখন আমাদের কাছে খুব পরিচিত। লকডাউন। গত বছর দুয়েকের এই লকডাউনের যন্ত্রণা ভোগ করেছে মানুষ। সামনে চতুর্থ ঢেউয়ের ইশারাও যেন দেখা যাচ্ছে। পুনরায় যাতে লকডাউনের কোপে না পড়তে না হয়, তার জন্য সকলেই সতর্ক। ঠিক এই সময়েই অন্ধ্রপ্রদেশের এক গ্রামে গ্রামবাসীরা স্বতঃস্ফূর্ত ভাবেই লকডাউনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। গ্রামে ঢোকার রাস্তায় লেখা আছে সতর্কবাণী। যা জানাচ্ছে, গ্রামের বাইরে থেকে যাঁরা আসছেন তাঁদের প্রবেশ নিষিদ্ধ। আর গ্রামের বাসিন্দারা যেন বাইরে পা না রাখেন। দেখে যেন মনে হয়, প্রশাসন কড়া লকডাউন জারি করেছে। কিন্তু না, এ তো গ্রামের মানুষদেরই সিদ্ধান্ত। আর সে সিদ্ধান্তের কারণটা নাকি পিশাচ। অর্থাৎ গ্রামে পিশাচ ঘুরছে এই ভয়েই জারি লকডাউন।
আরও শুনুন: ১১ কোটি টাকার কয়েন গায়েব SBI থেকে, উদ্ধারে তদন্তে নামল CBI
ঘটনার সূত্রপাত অবশ্য রাতারাতি হয়নি। শ্রীকাকুলামের এই গ্রামটিতে বিগত কয়েকদিনে জনা চারেক মানুষের প্রাণ গিয়েছে। প্রথমে জ্বর, তারপর তা থেকেই মৃত্যু। প্রতিবেশীদের পরপর মৃত্যুর দরুন গ্রামের মানুষের বিশ্বাস, কোনও এক অশুভ আত্মা বা মাংসখেকো পিশাচ এই গ্রামে ঘুরে বেড়াচ্ছে। সেই দুষ্ট আত্মাই মেরে ফেলছে একের পর এক মানুষকে। যারা ঘরের বাইরে বেরোচ্ছে, তাদের উপরই কোপ পড়ছে বলে মানুষের বিশ্বাস। অসুখের কারণে নয়, এই মৃত্যু তাঁদের কাছে রহস্যময়। আর তাই বাইরে বেরনো একেবারে বন্ধ করে দিয়েছেন তাঁরা। বলা বাহুল্য আতঙ্কই তাঁদের টেনে এনেছে এমন ঘরবন্দি অবস্থায়। তবে তাঁদের এহেন সিদ্ধান্ত গ্রহণের পিছনে আছে পুরোহিতদের পরামর্শও। গ্রামটি ওড়িশার সীমান্ত লাগোয়াও বটে। ওড়িশা এবং পাশের অন্যান্য গ্রামের পুরোহিতদের কাছে এই রহস্যমৃত্যু থেকে বাঁচার উপায় জানতে চান প্রবীণ গ্রামবাসীরা। পুরোহিতরাই জানান, অন্তত এক সপ্তাহের জন্য লকডাউন পালন করা জরুরি। আর গ্রামের চার কোনায় অশুভ আত্মা তাড়াতে রাখতে হবে লেবু। গ্রামবাসীরা অক্ষরে অক্ষরে সেই নির্দেশ পালন করছেন।
আরও শুনুন: বেহাল অর্থনীতির হাল ফেরাতে দেশে আয়োজন মহা কুবের যজ্ঞের
এখন এই স্বতঃস্ফূর্ত লকডাউনের জেরে গ্রামের অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র ইত্যাদি একেবারে বন্ধ, যেহেতু বাইরে থেকে কারও গ্রামে পা রাখা নিষেধ। গ্রামটির এই সিদ্ধান্ত তোলপাড় ফেলেছে গোটা তল্লাটে। কেউ কেউ বলছেন, এই একবিংশ শতাব্দীতে এসেও এরকম কুসংস্কারে যে কেউ বিশ্বাস করেন, তা ভাবা যায় না। অন্য অনেকে আবার গ্রামবাসীদের এই সিদ্ধান্তে আস্থা রাখছেন। যাতে মানুষ ভাল থাকে, তাতেই তাঁদের বিশ্বাস। এদিকে প্রশাসন খানিকটা দোটানাতেই। লকডাউনের জেরে স্বাভাবিক কাজকর্ম সব প্রায় বন্ধ। শেষমেশ পুলিশ গিয়ে গ্রামবাসীদের বোঝায়। অনেক কথাবার্তা পরই অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের গ্রামে প্রবেশের অনুমতি মিলেছে। খানিকটা সচল হলেও গ্রামের মানুষ এখনও লকডাউনের নিয়মাবলিই মেনে চলছেন। খামোখা পিশাচের হাতে কে প্রাণ দেবে! অতএব গ্রামবাসীরা নিজেদের সিদ্ধান্তেই অটল। কোভিড নয়, পিশাচের আতঙ্কেই এখন গোটা গ্রাম জুড়ে চলছে কঠোর লকডাউন।