পয়গম্বরের পর এবার টিপু সুলতান। ঐতিহাসিক এই চরিত্রকে ‘মুসলিম গুন্ডা’ বলে এবার বিতর্কে জড়ালেন কর্ণাটকের এক বিজেপি বিধায়ক। জিভ কেটে নেওয়ার হুমকি দিয়ে মিলল চিঠি। রাজ্য জুড়ে ফের অশান্তির আশঙ্কায় সতর্কতা প্রশাসনের। এই প্রথম নয়, আগেও বিতর্কে জড়িয়েছেন বিধায়ক। আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
টিপু সুলতানকে নিয়ে আপত্তিজনক মন্তব্যের জের। হুমকির মুখে পড়লেন কর্ণাটকের এক বিজেপি বিধায়ক। ঐতিহাসিক এই চরিত্রটিকে ‘মুসলিম গুন্ডা’ বলার পরেই রাজ্য জুড়ে শুরু হয়েছে জোর বিতর্ক।
খুব বেশি দিন আগের কথা নয়। হজরত মহম্মদকে নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যের জেরে উত্তাল হয়ে উঠেছিল দেশ। বিভিন্ন জায়গায় শুরু হয় বিক্ষোভ, আন্দোলন। হিংসার পরিস্থিতিও তৈরি হয়েছিল দেশের বেশ কিছু জায়গায়। দু-একদিন আগে সেই বিতর্ককে আরও একবার উসকে দিয়েছেন তেলঙ্গানার এক বিজেপি বিধায়ক। ইতিমধ্যেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাঁকে। বরখাস্ত করা হয়েছে দলের তরফেও। তবে তাঁর রেশ কাটতে না কাটতেই ফের আলটপকা মন্তব্য করে বসলেন কর্ণাটকের এক বিজেপি বিধায়ক।
আরও শুনুন: ‘সংস্কারী হলে ধর্ষণ করেছিল কেন?’ বিলকিস বানোর ধর্ষকদের মুক্তিতে প্রশ্ন নির্ভয়ার মায়ের
লাউডস্পিকার বিতর্ক থেকে হিজাব বিতর্ক, একাধিক বিষয়কে কেন্দ্র করে গোড়া থেকেই উত্তপ্ত ছিল কর্ণাটক। তার উপর স্বাধীনতা দিবসের সময় কর্ণাটকের শিবমোগ্গাতে সাভারকার আর টিপু সুলতানের ছবি একইসঙ্গে ব্যানারে ব্যবহার করা নিয়ে দ্বন্দ্ব বাধে দুই গোষ্ঠীর মধ্যে। আর তা হাতাহাতির রূপ নিতে সময় লাগেনি। অশান্তি এমন জায়গায় পৌঁছয় রাজ্য জুড়ে জারি করতে হয় ১৪৪ ধারা। সেই অশান্তির আবহেই এবার টিপু সুলতানকে মুসলিম গুন্ডা বলে আগুনে ঘি ঢাললেন কর্ণাটকের বিজেপি বিধায়ক কে এস ঈশ্বরাপ্পা। শিবমোগ্গায় সাম্প্রতিক অশান্তির জন্যও সংখ্যালঘুদেরই দায়ী করেছেন তিনি। মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতি বার্তা দিয়ে বিধায়ক সম্প্রতি এ-ও জানান, “সব মুসলিমই যে গুন্ডা, তা বলছি না। মুসলিম সমাজের বহু প্রতিনিধিই এর আগে শান্তি স্থাপনে জরুরি ভূমিকা নিয়েছেন।” গুন্ডামিকে প্রশ্রয় দিচ্ছেন যারা, তাদের বিরুদ্ধে সরকার পদক্ষেপ নেবে বলেই হুশিয়ারি দেন বিধায়ক।
আরও শুনুন: হিন্দু দেবতারা কেউই ব্রাহ্মণ নন, স্বয়ং শিবও তফসিলি! জেএনইউ উপাচার্যের মন্তব্যে বিতর্ক
আর তার পর থেকেই শুরু হয়েছে বিক্ষোভ। ঈশ্বরাপ্পার বক্তব্যের বিরোধিতায় সরব হয়েছে বেশ কয়েকটি পক্ষ। ইতিমধ্যেই জিভ কেটে নেওয়ার হুমকি দিয়ে চিঠি পর্যন্ত দেওয়া হয়েছে ওই তাঁকে। কন্নড় ভাষায় লেখা চিঠিটি পাঠানো হয় ওই বিধায়কের বাড়ির ঠিকানায়। চিঠি পেয়েই বিষয়টি নিয়ে থানায় অভিযোগ দায়ের করেন ঈশ্বরাপ্পা। ব্যাপারটি নিয়ে ফের অশান্তির আবহ তৈরি হতে পারে বলে আশঙ্কা স্থানীয় প্রশাসনের। তাই গোড়া থেকেই নেওয়া হয়েছে বাড়তি সতর্কতা।
যদিও হুমকির মুখে সমস্ত অভিযোগই কার্যত অস্বীকার করেছেন বিধায়ক। তাঁর বক্তব্য, তিনি আদৌ সব মুসলিমদের গুন্ডা বলতে চাননি। আর এ ধরণের হুমকি চিঠি নিয়ে যথেষ্ট আতঙ্কে রয়েছেন তিনি।
এমন বিতর্কে যে প্রথমবার নাম জড়িয়েছে এই বিজেপি নেতার, তা কিন্তু নয়। এর আগে কর্ণাটক সরকারের পঞ্চায়েত রাজ ও গ্রামীণ উন্নয়ন মন্ত্রকের দায়িত্ব সামলাতেন তিনি। একটি কমিশন দুর্নীতিতে নাম জড়ানোর পরে গত এপ্রিল মাসে তাঁকে মন্ত্রিত্বের দায়িত্ব থেকে রেহাই দেওয়া হয়। যদিও ওই মামলায় ঈশ্বরাপ্পাকে ক্লিনচিট দিয়েছিল বিশেষ তদন্তকারী দল। তবে এ ঘটনায় ওই বিজেপি নেতার ভাবমূর্তি যথেষ্ট খারাপ হয়েছিল। ফের নয়া বিতর্কে জড়িয়ে বিপাকে বাড়ালেন কর্ণাটকের প্রাক্তন এই মন্ত্রী।