অবস্থার ফেরে কী না করতে হয় মানুষকে! কিন্তু তেলেঙ্গানার এক গ্রামের এই পরিবারটিকে যা করতে হল, তা ভাবতেও কষ্ট হয়। তাও এক-আধ দিন নয়, এই ঘটনার জের চলেছে চার বছর ধরে! কী সেই ঘটনা?
অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান। এই নাকি মানুষের প্রাথমিক অধিকার। অথচ স্বাধীন দেশের সব মানুষের ভাগ্যেও যে এই তিনটি জিনিস সবসময় জোটে না, সে কথা অজানা নয়। সম্প্রতি সেই অভাবের ছবিটাই আরও স্পষ্ট হয়ে উঠল একটি পরিবারের সূত্র ধরে। চার বছর ধরে যে পরিবারের আস্তানা একটি ছোট শৌচাগার।
আরও শুনুন: গ্রামে বাড়ছে অবিবাহিত আর বিপত্নীকের সংখ্যা, ঘটকালির দায়িত্ব নিল খোদ পঞ্চায়েত
তেলেঙ্গানার মেহবুবনগরে তিরুমালাগিরি গ্রাম। সেখানেই বসবাস সুজাতার। বয়স বছর ৩০। রুজিরোজগারের উপায় দিনমজুরি। স্বামী মারা যাওয়ার বছর তিনেক পরে প্রবল বৃষ্টিতে সুজাতার বাড়ি ধসে পড়ে। এদিকে পরিবারে রয়েছে সুজাতার শাশুড়ি ও দুটি সন্তান। এই অবস্থায় স্থানীয় কমিউনিটি হলে আশ্রয় নিতে গিয়েছিল এই নিম্নবর্গের পরিবারটি। কিন্তু বেশিদিন সেখানে ঠাঁই মেলেনি। শেষ পর্যন্ত, এরকম এক মর্মান্তিক পদক্ষেপ নেওয়া ছাড়া তাদের আর কোনও উপায় ছিল না। একটি সরকারি পাবলিক টয়লেটে আশ্রয় নেয় তারা।
আরও শুনুন: সপ্তাহের শেষে ফের ভারী বৃষ্টির আশঙ্কা, দুর্যোগের দিনে কী কী সাবধানতা অবলম্বন করবেন?
কীভাবে সেখানে থাকছে চার-চারটি মানুষ? ভারতীয় ধাঁচের কমোডের উপর একটি তক্তা পেতে নিয়েছে তারা। তার উপরেই স্টোভ জ্বালিয়ে রান্নার ব্যবস্থা। রাতে শৌচাগারের ভেতরে থাকে সাত বছর আর দশ বছর বয়সের বাচ্চা দুটি। আর পরিবারের দুই মহিলা সদস্যকে ঘুমোতে হয় বাইরে, খোলা আকাশের নিচে। বৃষ্টি পড়লে ঘুম হয় না দিনের পর দিন। শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষা, সব ঋতুর মোকাবিলা একইভাবে করে চলেছে সুজাতারা।
এইভাবেই কেটে গিয়েছে চারটে বছর। এখনও পর্যন্ত ওই অপরিসর এবং অস্বাস্থ্যকর স্থানেই দিন কাটছে তাদের। না গ্রামের মোড়ল, না কোনও প্রশাসনিক কর্তা, এমএলএ, এমপি, কারও দেখা মেলেনি আজ অবধি। সুজাতার এই কথায় সহমত প্রকাশ করেন গ্রামবাসীরাও। ২০১৪ সালের রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনের আগে অর্থনৈতিক ভাবে পিছিয়ে পড়া পরিবারগুলির জন্য দু-কামরার বাড়ি করে দেওয়ার প্রকল্প ঘোষণা করেছিল তেলেঙ্গানা রাষ্ট্র সমিতি তথা টিআরএস সরকার। যদিও কাজ হয়নি কিছুই।
সম্প্রতি বাকি দেশের সামনে এসেছে সুজাতাদের খবর। খানিক নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন। আদৌ কি পালটাবে অবস্থা? আশা নিয়ে সেদিকেই তাকিয়ে রয়েছে সুজাতারা।