দিনকয় আগে দেশের ভোট-সংস্কৃতি নিয়ে কথা বলছিলেন এক সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমে। সেখানে তাঁর কথায় উঠে এল ১৯৫১-৫২ সালের নির্বাচনের কথা। নেহরু জমানার মন্দ দিক নিয়েই এতকাল সরব ছিলেন। এবার যেন ভালো দিকগুলো খুঁজে পেতে শুরু করেছেন আচমকা। আর তাই ভোটের ধরণ বদলাতে, সেই নেহরু আমলকেই পুঁজি করেছেন প্রধানমন্ত্রী।
যা কিছু কৃতিত্বের তা নরেন্দ্র মোদির। আর যা কিছু দোষের, সব নেহরুর। কিছুদিন আগের পর্যন্ত রাজনীতির অরণ্যে এই ছিল প্রাচীন প্রবাদ। নানা প্রসঙ্গেই পূর্বসুরির সমালোচনা করতে দেখা যেত বর্তমান প্রধানমন্ত্রীকে। আর তাই সকলে যেন ধরেই নিয়েছিলেন,মোদির যদি নন্দ ঘোষ কেউ থেকে থাকেন, তাহলে তিনি নেহরুই।
দেখতে দেখতে মোদি-জমানারও আবার অনেকগুলো বছর পেরিয়ে গেল। ‘মোদি হ্যায় তো মুমকিন হ্যায়’ থেকে সময়ের রেলগাড়ি এখন গিয়ে পৌঁছেছে ‘মোদি-কি-গ্যারান্টি’ স্টেশনে। তবে আড়ালে কেউ কেউ বলাবলি করছেন যে, গ্যারান্টি-র যেন সেই গ্যারান্টি নেই। কোথাও গিয়ে মানুষ যেন একটু সন্দিহান হয়ে পড়েছেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা আর একটু খোলসা করে ব্যাপারটা বুঝিয়ে দিয়েছেন। তাঁদের মতে, বিরোধীরা ততটা নয়, যতখানি মোদির প্রতিদ্বন্দ্বী তিনি নিজেই। তাঁর যে ভাবমূর্তি তৈরি হয়েছে, তা রক্ষার গ্যারান্টি দেওয়াই এখন তাঁর কাছে চ্যালেঞ্জ। রাজনীতিতে হাওয়া চিরকাল একদিকে বয় না। এখনও বোধহয় বইছে না। এই কিছুদিন আগেই যে গেরুয়া শিবির ৪০০ পারের স্লোগান দিচ্ছিল, এখন তাদেরই প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছে যে, ২৭২ না পেরোলে ‘প্ল্যান বি’ আছে তো? খোদ অমিত শাহ-ই সে প্রশ্নের মুখে পড়েছেন। গেরুয়া শিবির কতখানি বেকায়দায় বা আদৌ সেই অবস্থায় পড়েছে কি-না, তা আলাদা প্রসঙ্গ। তবে যা বোঝা যাচ্ছে তা হল, রাজনীতির হাওয়াবদল। আর সেই বদলে যাওয়া জলহাওয়ায় এখন আর মোদি-নেহরু দ্বৈরথ সেভাবে দেখা যাচ্ছে না। বরং বলতে গেলে নেহরুকে মিত্র করে কাছেই টেনে নিচ্ছেন নরেন্দ্র মোদি।
এই তো দিনকয় আগে দেশের ভোট-সংস্কৃতি নিয়ে কথা বলছিলেন এক সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমে। সেখানে তাঁর কথায় উঠে এল ১৯৫১-৫২ সালের নির্বাচনের কথা। নেহরু জমানার মন্দ দিক নিয়েই এতকাল সরব ছিলেন। এবার যেন ভালো দিকগুলো খুঁজে পেতে শুরু করেছেন আচমকা। আর তাই ভোটের ধরণ বদলাতে, সেই নেহরু আমলকেই পুঁজি করেছেন প্রধানমন্ত্রী। শুধু এই এক জায়গাতেই নয়, আরও বিভিন্ন ক্ষেত্রে নেহরু হয়ে উঠেছেন তাঁর ভরসার পাত্র। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে হিন্দু-মুসলমান বিভাজনের অভিযোগ উঠেছিল। তাতে তিনি সাফ জানিয়ে দিয়েছেন যে, জীবনে কখনও তিনি বিভাজনকে রাজনীতিতে টেনে আনেননি। মুসলিমদের বিরুদ্ধে কিছু বলেননি। একবার নয়, বারবার তিনি এ কথাই বলে চলেছেন। তবে শুধু আত্মপক্ষ সমর্থন নয়, এই বিভাজনের দায় যে বিরোধীদের তাও কৌশলে বুঝিয়ে দিয়েছেন। বিশেষ করে সংরক্ষণ নিয়ে যখন কংগ্রেস সরব, তখন পালটা দিচ্ছেন মোদি। আর কী আশ্চর্য সেখানে তিনি হাত ধরছেন স্বয়ং নেহরুরই। বলছেন, দেশের সংবিধানের যাঁরা রূপকার – আম্বেদকর এবং নেহরু – তাঁরাও তো কোনোদিন ধর্মভিত্তিক সংরক্ষণ চাননি। অতএব সংবিধানের নামে কংগ্রেস যে মানুষকে ভুল বোঝাচ্ছে এই তাঁর বক্তব্য। তবে লক্ষ্যণীয় হল, এখানেও নেহরুকে টেনে আনা। একদা প্রথম প্রধানমন্ত্রীর ঘাড়ে শুধু দোষই চাপত। কিন্তু এখন নিজের বক্তব্য আর যুক্তির সমর্থনে সেই নেহরুকে একবারে বন্ধু করে নিয়েছেন মোদি। এ কি রাজনৈতিক হাওয়াবদলেরই লক্ষণ? রাজনৈতিক মহল বলছে, অজানা কতকিছুই না জমা হয়ে থাকে রাজনীতির সিন্দুকে। মোদি-নেহরুর সম্পর্কের রসায়ন বদল সেরকমই একনতুন অধ্যায়, খানিকটা অজানা এবং চমকপ্রদ তো বটেই।