কত শিশুর মৃত্যু হল? মুহুর্মুহু সংবাদমাধ্যমে ভেসে আসছে আপডেট। সংখ্যা বাড়ছে… বাড়ছে তো বাড়ছেই। তবে, শুধুই সংখ্যা! ওরা কি কেবলই সংখ্যা, মানুষ নয়! বিধ্বস্ত গাজায় সন্তানকে আগলে ধরে সেই প্রশ্নই তুললেন অভিভাবকরা। পৃথিবী কি শুনবে?
অবিশ্রান্ত বোমাবর্ষণ। মৃত্যুর ছায়া ক্রমশ এগিয়ে আসছে, বুঝেও পরিত্রাণের উপায় নেই। এমনকী কোলের শিশুটিকেও বাঁচানো যাবে, এমন দুরাশাও করতে পাচ্ছেন না অভিভাবকরা। রাষ্ট্রীয় যুদ্ধ অবিরাম কেড়ে নিচ্ছে জীবন। নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে শৈশব। শত্রুপক্ষের বোমার আঘাত থেকে বাঁচানো যাচ্ছে না সন্তানদের। মা-বাবার কাছে এর থেকে যন্ত্রণার বোধহয় আর কিছু হতে পারে না। আর সেই যন্ত্রণা প্রকাশ করার মতো ভাষা বোধহয় সভ্যতারও জানা নেই। ইউনিসেফ বলছে, মানবসভ্যতার উপরই পড়ছে অনপনেয় কালিমা। তবু যেন পৃথিবী নির্বাক। শান্ত, নিশ্চুপ হয়ে বাইরের পৃথিবী দেখছে এই সংহারলীলা।
আরও শুনুন: গাজায় নিহত স্ত্রী-সন্তান, চোখে জল নিয়েও বিশ্বকে ধ্বংসের খবর জানাতে অনড় সাংবাদিক
এই ভবিতব্যের মধ্যে দাঁড়িয়ে তাঁরা কী করবেন? যাঁরা জানেন না, তাঁদের সন্তানকে বাঁচাতে পারবেন কি-না। জানেন না, তাঁদের সন্তানও এক লহমায় কেবল সংখ্যা হয়ে উঠবে কি-না। তাঁরা সন্তানের শরীরেই লিখে রাখছেন শিশুদের নাম। জীবন নিয়ে আশা তাঁরা ছেড়েই দিয়েছেন। অন্তত মৃত্যুর পর যদি তাদের চিনতে পারা যায়, এটুকুই আশা। কেই-বা সেই শনাক্তকরণ করবে! কীভাবে তা সম্ভব হবে! কেউই সঠিক কিছু জানেন না । শুধু কী এক দুরাশায় এই কাজ করে চলেছেন তাঁরা। একটাই ক্ষীণ আশা, যদি শেষমেশ শবটিকেও চিহ্নিত করা যায়, তাহলে গণকবরের বদলে অন্তত তাদের জন্য আলাদা কবরের ব্যবস্থা করা যাবে।
চিকিৎসকরাও এই মুহূর্তে রীতিমতো বিপর্যস্ত। অনেকখানি অসহায়ও। শিশুরা যেভাবে বোমার আঘাতে ছিন্নভিন্ন হয়ে যাচ্ছে, তাতে আলাদা করে চেনা সত্যিই সম্ভব নয়। গাজার স্বাস্থ্যমন্ত্রকের তরফে, শিশুমৃত্যুর তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। জানানো হয়েছে, কয়েকশো শিশুর মৃত্যু হয়েছে, যাদের আর আলাদা করে চেনা সম্ভব নয়। তাদের দাবি, একবারে পরিকল্পনা করেই শিশুদের আঘাত করা হচ্ছে। তাই ভবিষ্যতে কী হবে, কেউ জানেন না। তবে, শিশুদের শরীরের কোনও একটা অঙ্গে – হাতে বা পায়ে- তাদের নাম লিখে শুরু করেছেন গাজার মানুষ। প্রথম প্রথম অনেকেই আঁতকে উঠেছিলেন! এই নাম লিখে রাখার মধ্যে যে ভয়াবহ ইঙ্গিত আছে, তা হতবাক করেছিল তাঁদের। তার পর সকলেই এক এক করে সেই কাজ করছেন। উদ্দেশ্য একটাই। অন্তত পৃথিবী দেখুক। অভিবাকরা বলছেন অন্তত পৃথিবী জানুক যে, যে শিশুদের হত্যা করা হচ্ছে তারা শুধু সংখ্যা নয়। তারাও মানুষ ছিল। সমস্ত স্বপ্ন, সম্ভাবনাকে এক নিমেষে শেষ করে দেওয়া হচ্ছে।
পৃথিবী যে তা দেখছে না, তা তো নয়। তবে, এই মৃত্যু-ধ্বংসের শেষ কোথায়! কীভাবেই বা কোনও সমাধানে পৌঁছনো যায়! গাজায় যেমন শিশুসংহার চলছে, তেমনই ইউনিসেফের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, মৃত্যু হয়েছে ইজরায়েলের শিশুদেরও। অনেকেই আবার বন্দি। সত্যি হল এই যে, রাষ্ট্রের যুদ্ধ কেড়ে নিচ্ছে অসংখ্য শিশুদের। পৃথিবী কি তাদের কাছে বাসযোগ্য ছিল? নির্বাক এই পৃথিবীর কাছে সে উত্তর যেন সত্যিই নেই।