স্ত্রীর ইচ্ছে নেই, তবুও তাঁকে জোর করে মদ্যপান করাতে চেষ্টা করছেন স্বামী। প্রকাশ্য রেস্তরাঁয় এই ঘটনা দেখেই প্রতিবাদে সোচ্চার হল একদল পড়ুয়া। নিজেদের গণ্ডির বাইরে গিয়ে পারিপার্শ্বিক ঘটনার দায় নেওয়াও যে মানুষের কর্তব্য, সে কথাই যেন মনে করিয়ে দিয়েছে ওই কিশোর কিশোরীরা। আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
স্ত্রীকে চেপে ধরে জোর করে তাঁর গলায় মদ ঢেলে দিচ্ছেন এক ব্যক্তি। এদিকে ওই মহিলার যে মদ্যপানে রুচি নেই, সে কথা স্পষ্ট। কিন্তু তাঁর অনিচ্ছাকে কোনোরকম গুরুত্ব না দিয়েই জোরাজুরি চালাচ্ছেন স্বামী, এবং তা নিয়ে তাঁর মধ্যে কোনোরকম দ্বিধাও নেই। প্রকাশ্য রেস্তরাঁতেই ঘটছিল এমন কাণ্ড। আর তা দেখে চুপ করে থাকতে পারেনি সেখানে বসে থাকা একদল পড়ুয়া। ওই ঘটনার প্রতিবাদে সরব হয় তারা। যদিও প্রাথমিক ভাবে ওই ব্যক্তিও পালটা জবাব দেন। যা হচ্ছে তা একান্তই ওই দম্পতির ব্যক্তিগত ব্যাপার, এমনটাই দাবি ছিল তাঁর। কিন্তু ব্যক্তিগত ব্যাপার হলেও তা যে অন্যায়, জোর গলায় সে কথা বলে ওই পড়ুয়ারা। তাদের সমবেত প্রতিবাদের জেরেই শেষমেশ পিছু হটতে বাধ্য হন ওই ব্যক্তি। তারপর প্রায় আধঘণ্টা রেস্তরাঁয় থাকলেও তিনি স্ত্রীকে আর স্পর্শ পর্যন্ত করেননি। সোশ্যাল মিডিয়ার পাতায় এই ঘটনা ভাগ করে নিয়েছেন শ্বেতা কোঠারি নামে এক মহিলা।
আরও শুনুন: বাইরে মুসলিম, ভিতরে হিন্দু! সাবানের ‘ধর্ম’ বিচার ঘিরে বিস্মিত নেটিজেনরা
সাম্প্রতিক কালে অনেক সময়ই চোখে পড়ে এমন কাণ্ড, যেখানে প্রকাশ্যে ঘটা কোনও অপরাধ বা অন্যায় দেখেও তার প্রতিবাদ করে না কেউ। আসলে নিজের চেনা গণ্ডিটিকে মানুষ বরাবরই নিরাপদ ভাবে। কিন্তু নিজের সঙ্গে সঙ্গে নিজের পরিপার্শ্বের দায়িত্ব নিতে গেলে একটা ঝুঁকির জায়গা থেকেই যায়। তাই সেই অচেনা পরিসরটিকে অনেকেই সাধ্যমতো এড়িয়ে চলেন। বিশেষ করে আজকের তরুণ প্রজন্মকে সচরাচর আত্মকেন্দ্রিক বলে দাগিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু এমন সাধারণীকরণ যে সবসময় সব ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়, সে কথাই বুঝিয়ে দিয়েছে ঝাঁসির এই ঘটনা। ওই কিশোর কিশোরীরা রেস্তরাঁয় নিজের মতো করেই সময় কাটাতে গিয়েছিল, কিন্তু চোখের সামনে এমন অন্যায় হতে দেখে তারা চোখ ফিরিয়ে নেয়নি। বরং যে মহিলা স্বামীর বিরুদ্ধে সেভাবে প্রতিবাদ করার সাহস জোগাড় করতে পারেননি, তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছে। তারা সরাসরি ওই ব্যক্তিকে গিয়ে বলে, এটা ঠিক হচ্ছে না। উনি পছন্দ করছেন না, তবুও আপনি জোর করছেন। জানা গিয়েছে, এর জবাবে রীতিমতো চড়া সুরে ওই ব্যক্তি বলেন, “কে হে তোমরা? আমার স্ত্রী, আমি যা ইচ্ছে তাই করতে পারি।”
আরও শুনুন: ডিজে আর নাচ-গান ইসলামী সংস্কৃতি নয়, বিয়ে না দেওয়ার বার্তা মৌলবিদের
এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, পিতৃতান্ত্রিক ব্যবস্থায় স্ত্রীর প্রতি অনেক পুরুষের মনোভাব এমনটাই। কোনও মানুষই যে একজনের সম্পত্তি হতে পারেন না, তাঁর নিজস্ব ইচ্ছা অনিচ্ছা চাওয়া পাওয়া আছে, সে কথা তাঁরা মনে রাখেন না। এই ব্যক্তিও সেই ভাবনাতেই চালিত। কিন্তু সেই কথা শুনে হাল ছেড়ে দেয়নি ওই ছেলেমেয়েরা। একাদশ শ্রেণির পড়ুয়া ওই কিশোর কিশোরীরা বয়সে অনেকটাই ছোট, তবুও এ ঘটনা যে অন্যায়, তা বলতে ছাড়েনি তারা। আর একেই সাহসের পরিচয় বলে মনে করছেন নেটিজেনরা। ওই পড়ুয়াদের উচ্ছ্বসিত প্রশংসায় ভরিয়ে দিয়েছেন তাঁরা। পাশাপাশি, এমনটাই যে হওয়া উচিত, সেই মতও সাফ প্রকাশ করেছেন নেটিজেনরা।