এককালে নাকি যুদ্ধ জয় করে ফিরলে রাজ্য জুড়ে ঢ্যাঁড়া পেটানোর নির্দেশ দিতেন রাজা মহারাজারা। যাতে সমস্ত প্রজার কাছে পৌঁছে যায় যুদ্ধে জেতার খবর। একালেও প্রায় তেমনই কাজ করেছে এই ছেলেটি। পরীক্ষায় পাশ করাটা তার কাছে যেন একটা যুদ্ধ জয়ের মতোই। আর তাই সেই খবর সবাইকে জানাতে এক অভিনব উপায় অবলম্বন করেছে এই কিশোর। আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
‘অতীত কারও কারও জন্য পথ তৈরি করে দেয়।’ নিজের জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে এমন কথাই মনে করে এই কিশোর। অতীতের অভিজ্ঞতাই অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিল তাকে। যার জোরে দশম শ্রেণির বোর্ডের পরীক্ষায় সে উত্তীর্ণ হয়েছে। আর এরপরেই সেই ফেলে আসা অতীতের দিকে ফিরে তাকিয়েছে সে। সেই স্মৃতিতে জুড়ে থাকা সব পরিচিত মানুষ, বন্ধু, আত্মীয়- সকলকে সে জানাতে চেয়েছে তার পাশ করার খবর। আর এই খবর জানাবার জন্যই এক অভিনব উপায় বেছে নিয়েছে সে। একটি বিশাল ফ্লেক্স বোর্ড তৈরি করেছে ওই কিশোর। যেখানে নিজের একটি সানগ্লাস পরা শৌখিন ছবি সে জুড়ে দিয়েছে। সঙ্গে লেখা, ‘২০২২ সালের বোর্ড পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার জন্য আমিই আমাকে অভিনন্দন জানাচ্ছি। এবার গল্পের শুরু। কুঞ্জাক্কু ভার্সন ৩.০।’ কোনও পণ্যের ক্ষেত্রে যেমন প্রাথমিক জিনিসটির তুলনায় আপডেট করা পণ্যটিকে ২ বা ৩ নম্বর দিয়ে চিহ্নিত করা হয়, সেভাবেই নিজের পরীক্ষা-উত্তীর্ণ সত্তাকে চিহ্নিত করেছে ওই কিশোর। এখানেই শেষ নয়। একাদশ শ্রেণিতে পাশ করার পরও ফের এইরকম ফ্লেক্স বোর্ড লাগাবে বলেই জানিয়েছে সে। এই ঘোষণার মাধ্যমেই গোটা এলাকার সকলের কাছে নিজের সাফল্যের খবর তুলে ধরতে চায় সে।
আরও শুনুন: ভূমিকম্পে মৃত মালিক, ভাঙা বাড়ির সামনে ‘আত্মীয়ের’ খোঁজে তবু ফিরে আসে পোষ্য কুকুর
কিন্তু কেন এমন কাজ করেছে ওই কিশোর?
আসলে একেকটি বিষয়ের গুরুত্ব একেকজনের কাছে একেকরকম হয়ে ধরা দেয়। দশম শ্রেণির বোর্ডের পরীক্ষা, স্কুলের পড়ুয়াদের ছাত্রজীবনে যা প্রথম বড় পরীক্ষা, সেই পরীক্ষায় বসার পথটি সহজ ছিল না ওই কিশোরের কাছে। কুঞ্জাক্কু ওরফে জিষ্ণু নামে কেরলের ওই পড়ুয়া নিজে একেবারেই সাধারণ মানের ছাত্র। পাশাপাশি পরিবারের তরফ থেকেও পড়াশোনার ক্ষেত্রে কোনোরকম সাহায্য পাওয়া সম্ভব ছিল না তার কাছে। তার মা-বাবা দিনমজুরের সামান্য কাজ করেন। পরীক্ষার এক সপ্তাহ আগে পর্যন্ত তাদের বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ ছিল না। কেরোসিন ল্যাম্পের মৃদু আলোতেই পড়াশোনা করতে হত জিষ্ণু এবং তার দুই বোনকে। স্কুলে যাওয়ার জন্য বাসে চড়ে রোজ পাড়ি দিতে হত ১৪ কিলোমিটার পথ। উপরি হিসেবে জুটত পাড়াপ্রতিবেশী, সহপাঠীদের ঠাট্টা বিদ্রুপ। সে কখনোই পাশ করতে পারবে না, এমনটাই মনোভাব ছিল পরিচিতদের। আর তাদের উদ্দেশেই এবার মধুর প্রতিশোধ নিল ওই কিশোর।
আরও শুনুন: ঘরের ছাদ, দেওয়াল নেই… তবু হোটেল ভাড়া ২৬ হাজার টাকা, কেন জানেন?
জিষ্ণুর এই গল্প পৌঁছে গিয়েছে কেরলের শিক্ষামন্ত্রীর কাছেও। জীবনের পরীক্ষাতেও যেন একইভাবে সাফল্য পায় ওই কিশোর, এমনই শুভেচ্ছা জানিয়েছেন তিনি।