নাবালিকাকে নির্যাতনের মতো ভয়ঙ্কর অপরাধের দায়ে জেল হয়েছিল। টানা ৬ বছর শাস্তিও ভোগ করেন। তাতে লাভের লাভ অবশ্য কিছুই হয়নি। জেল থেকে ছাড়া পেয়ে আবারও একই অপরাধ করেছেন শিক্ষক। আবারও হয়তো জেলে পোরা হবে তাঁকে। একইভাবে কি অপরাধের পুনরাবৃত্তিও হবে?
আর জি করের ঘটনা সামনে এনে দিয়েছে নারীদের সামগ্রিক বিপন্নতাকে। দোষীদের শাস্তির দাবিতে উত্তাল গোটা দেশ। মিটিং, মিছিল, আন্দোলন সব চলছে। পাল্লা দিয়ে চলছে ধর্ষনও। বিগত কয়েকদিনে দেশজুড়ে একাধিক যৌন হেনস্থার ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে। তার মধ্যে এমনও এক অপরাধ রয়েছে, যার দায় একই অপরাধে জেল খাটা আসামীর।
জেল নয়, সংশোধানাগার। অনেকেই ভুল শুধরে দেন। অপরাধী নয় অপরাধকে ঘ্রৃণা করুন, যুক্তি অকাট্য। কোনও ভুল নেই। এ যুক্তি মানতেও সমস্যা নেই। কিন্তু সংশোধানাগারে ৬ বছর কাটিয়েও যদি কেউ সংশোধিত না হন, তাহলে তো প্রশ্ন উঠবেই! ঘটনাটি পুনের। জনপ্রিয় এক স্কুলের শিক্ষকের বিরুদ্ধে নাবালিকাকে শারীরিক হেনস্থার অভিযোগ উঠেছে। তাতে প্রশাসনের তরফে পদক্ষেপও করা হয়েছে। গ্রেপ্তার হয়েছেন অভিযুক্ত শিক্ষক। তারপরই সামনে এসেছে অবাক করা এক তথ্য। এই শিক্ষকের বিরুদ্ধে নাকি ৬ বছর আগে একই অভিযোগ উঠেছিল। সেবার বয়েস আরও ছোট একটি মেয়েকে হেনস্থা করেন তিনি। বিষয়টি নিয়ে বেশ জলঘোলা হয়। দোষ প্রমাণে জেল হয় অভিযুক্ত শিক্ষকের। সদ্য জেল থেকে বেইল পেয়েছেন তিনি। এই ধরনের ঘটনার দায় ঘাড়ে চাপলে লজ্জায় সারাজীবন মাথা নিচু করে থাকতে হয় অনেককে। এই শিক্ষককে সেসব কিছুই করতে হয়নি। বরং গর্বের সঙ্গে মাথা উঁচু করে আবারও নিজের পুরনো স্কুলেই চাকরি পান। অনেকেই ভেবেছিলেন, সংশোধানাগারে এতগুলো বছর কাটিয়ে তিনি বদলে গিয়েছেন। কিন্তু না, বাস্তবে দেখা গেল ঠিক উলটোটা। যে অপরাধের দায়ে জেল হয়েছিল, ফিরে এসে একই অপরাধ করেছেন তিনি। শুধু ওই শিক্ষক নয়, গ্রেপ্তার করা হয়েছে স্কুল কর্তৃপক্ষের আরও অনেককেই। প্রশাসনের দাবি, ওই শিক্ষককে পুনরায় চাকরিতে বহাল করে অপরাধ করেছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। তাই প্রিন্সিপাল, চেয়ারম্যান সহ আরও কিছু শিক্ষককে গ্রেপ্তারির ব্যবস্থা করা হয়।
কিন্তু তাতে লাভের লাভ কি আদৌ হবে?
উত্তর দেবে সময়। ততক্ষণ অপেক্ষা ছাড়া উপায় নেই। কারণ এই একটা ঘটনা রাতারাতি ‘সংশোধোনাগারের’ সংজ্ঞা বদলে ‘জেল’ করে দেবে না। অথচ এই প্রসঙ্গে ধরে প্রশ্ন উঠেছে সুপ্রিম কোর্টেও। আর জি কর ঘটনার শুনানিতে সুপ্রিম বিচারপতি ক্ষোভের সুরে বলেন, ‘আরও একটা ধর্ষনের জন্য অপেক্ষা করবে দেশ?’ পুনের এই ঘটনাও যেন মনে করিয়ে দিল সে কথা। যে সময় দাঁড়িয়ে গোটা দেশ উত্তাল। দিকে দিকে ধর্ষকের ফাঁসির দাবিতে স্লোগান উঠছে। সেই পরিবেশেও নাবালিকাকে অত্যাচারের আগে দুবার ভাবতে হয়নি এই শিক্ষককে। একই কারণে ৬ বছর জেলে খেটেছেন, তাও ভাবনাতেই আসেনি এটা তিনি অপরাধ করছেন। তাহলে কি আবারও জেল থেকে বেরিয়ে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটাবেন? জানা নেই। উত্তর দেবে সময়। ততক্ষণ অপেক্ষা। স্রেফ অপেক্ষা।