পর্দার ‘সিঙ্ঘম’-এর মতোই, অপরাধীদের সঙ্গে সঙ্গে শাস্তিবিধান করার পক্ষপাতী যোগী আদিত্যনাথ। তাই যোগীরাজ্যে হামেশাই শোনা গিয়েছে ‘ঠোক দো’ বুলি। কিন্তু এই এনকাউন্টার নীতিকে কী চোখে দেখছে দেশের আইনব্যবস্থা? সম্প্রতি তা নিয়েই পদক্ষেপ করল সুপ্রিম কোর্ট। আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
অপরাধীদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতিতেই চলতে চান উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। যদিও দেশের সংবিধান বলে, যে কোনও অপরাধীরও বিচার পাওয়ার অধিকার আছে। কিন্তু আদালতে দীর্ঘ বিচার এবং তারপর অপরাধীকে সাজা শোনানো, এই আইনি পথে হাঁটার বদলে বারে বারেই অপরাধীদের সঙ্গে এনকাউন্টারে জড়িয়েছে যোগীরাজ্যের পুলিশ। এমনকি খোদ আদিত্যনাথের গলাতেও এই দাবি শোনা গিয়েছে, যে, তাবড় তাবড় গ্যাংস্টারেরা এনকাউন্টার নীতির ভয়ে কাঁপছে। যোগী আদিত্যনাথের কথাকেই যেন কার্যত সমর্থন করে সে রাজ্যের এনকাউন্টারের পরিসংখ্যানও। যা জানাচ্ছে, যোগী আদিত্যনাথ সরকারের আমলে গত ছ’বছরে, ১০,৭১৩ ‘এনকাউন্টার’ হয়েছে উত্তরপ্রদেশে। যাতে নিহতের সংখ্যা ১৮৩। আহত ৪,৯১১ জন অভিযুক্ত। যোগীরাজ্যের এই ‘ঠোক দো’ নীতি বারেবারেই রাজনৈতিক মহলে বিতর্ক উসকে দিয়েছে। এবার এই এনকাউন্টারের ঘটনা নিয়েই বিস্তারিত রিপোর্ট তলব করল সুপ্রিম কোর্ট।
আরও শুনুন: ধর্মের ভেকে ঢাকা অপরাধ, দর্শকের মগজে টোকা দিয়ে রাজ যেন বললেন ‘হ্যালো স্যার’
আসলে কোনও একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সর্বোচ্চ শাস্তির চল সবসময়েই কম। বরং অপরাধীদের মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনা সম্ভব কি না, তা দেখার জন্য এ দেশে জেলগুলিকে সংশোধনাগারে বদলানোর কথাও ভাবা হয়েছে। দেশে মাওবাদী অধ্যুষিত এলাকা, এমনকী জম্মু-কাশ্মীরের মতো অশান্ত অঞ্চলেও পুলিশের গুলিতে এত মানুষের মৃত্যুর নজির সাম্প্রতিককালে নেই। সেখানে পুলিশের হাতে এত মানুষের মৃত্যুর ঘটনায় নড়েচড়ে বসেছে দেশের শীর্ষ আদালত। সুপ্রিম কোর্ট জানতে চেয়েছে, তদন্ত কোন পর্যায়ে ছিল এবং সংঘর্ষে মারা যাওয়ার আগে অপরাধীকে ধরতে পুলিশ কী ধরনের পদক্ষেপ করেছিল। একইসঙ্গে নিহতদের বিরুদ্ধে কী কী ধরনের অপরাধ ছিল এবং আদালতে বিচার সম্পন্ন হলে সেই অপরাধের সর্বোচ্চ সাজা কী হতে পারত, তাও জানাতে হবে পুলিশকে। ১৮৩টি ঘটনার প্রত্যেকটি সম্পর্কেই এইসব তথ্য উত্তরপ্রদেশ সরকারকে হলফনামা দিয়ে জানাতে হবে, নির্দেশ সুপ্রিম কোর্টের। বিচারপতি এসআর ভাট বলেন, প্রয়োজনে আদালত একটি কমিশন গঠন করে সংঘর্ষে মৃত্যুর ঘটনাগুলি খতিয়ে দেখবে।
আরও শুনুন: ‘পাপ্পু’ ব্যঙ্গ উধাও! কেন রাহুল ক্রমে মাথাব্যথার কারণ বিজেপির কাছে?
কিছুদিন আগেই ঝাঁসিতে এনকাউন্টারে নিহত হয় গ্যাংস্টার আতিক আহমদের ছেলে আসাদ এবং তার সঙ্গী গুলাম। আইনজীবী উমেশ পাল হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিল তারা। উমেশ হত্যাকাণ্ডের পর পরই উত্তরপ্রদেশের বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ বলেছিলেন, মাফিয়াদের মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেব। ঘটনাচক্রে, তার পর থেকেই উমেশ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত অভিযুক্তরা একের পর এক পুলিশ এনকাউন্টারে নিহত হয়েছেন। যার জেরে যোগীরাজ্যের এনকাউন্টার নীতি ফের চর্চায় উঠে এসেছিল। কিন্তু এই এনকাউন্টার প্রবণতাকে যে খুব একটা ভাল চোখে দেখছে না দেশের আইনব্যবস্থা, তারই ইঙ্গিত দিল দেশের শীর্ষ আদালত।