পিছিয়ে পড়া মানুষদের উচ্চবর্ণের অত্যাচার থেকে মুক্তি দিতে চেয়েছিলেন বাবাসাহেব আম্বেদকর। কিন্তু সেই নিপীড়িত শ্রেণির মধ্যেও যে আরেকভাবে অন্যকে পীড়ন করার ঘটনা ঘটতে পারে, আর তাও ঘটতে পারে তাঁর নামকে হাতিয়ার করেই, এমনটা কি তিনি ভাবতে পেরেছিলেন? সম্প্রতি সামনে এল তেমনই এক ঘটনা।
আম্বেদকরের পুজোয় অংশ নিতে অসম্মতি জানিয়েছিল এক ছাত্র। সেই অপরাধেই কঠোর শাস্তি পেতে হল তাকে। তাও নিজের সহপাঠীদের হাতেই। পোশাক খুলিয়ে, আম্বেদকরের ছবি হাতে রাস্তায় হাঁটতে বাধ্য করা হয়েছে ওই পড়ুয়াকে।
আরও শুনুন: চলতি বছরে পদ্ম প্রাপকের তালিকায় নাম একাধিক বিদেশির, কারা তাঁরা?
জানা গিয়েছে, কর্নাটকের কালবুর্গি জেলার এক ছাত্রাবাসে ঘটেছে এই ঘটনাটি। বি আর আম্বেদকরকে শ্রদ্ধা জানাতে ‘আম্বেদকর পূজা’-র আয়োজন করেছিল হোস্টেলের পড়ুয়ারা। কিন্তু এক ছাত্র তাতে যোগ দিতে অস্বীকার করে। ঠিক কী কারণে তার এই আপত্তি, তা অবশ্য জানা যায়নি। কিন্তু বিষয়টিকে আদৌ ভালোভাবে নেয়নি বাকি পড়ুয়ারা। অন্তত ১৫-২০ জন ছাত্র তাকে রীতিমতো হেনস্তা করে বলেই অভিযোগ। তাকে অর্ধনগ্ন করা হয়। এরপর আম্বেদকরের একটি ছবি হাতে ধরে কালবুর্গির রাস্তা দিতে হাঁটতে বাধ্য করা হয় ওই ছাত্রকে। এই ঘটনা নিয়ে ইতিমধ্যেই পুলিশের কাছে জমা পড়েছে অভিযোগ। অপরাধমূলক কাজকর্ম, শান্তিভঙ্গ ইত্যাদি একাধিক ধারায় অভিযুক্ত পড়ুয়াদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছে।
আরও শুনুন: সাধারণতন্ত্র দিবসের উদযাপনে চটুল নাচ যোগীরাজ্যের স্কুলে, ক্ষোভ নেটদুনিয়ায়
এ কথা ভোলার নয় যে, ক্ষমতাহীন মানুষের প্রতি ক্ষমতাবানের যে আগ্রাসন, সেই নিপীড়নের বিরুদ্ধেই আজীবন লড়াই ছিল বাবাসাহেব আম্বেদকরের। সব মানুষ যেন নিজের মতো করে বাঁচতে পারে, এমন এক দেশ গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন তিনি। কিন্তু যারা তাঁকে শ্রদ্ধা জানাচ্ছে, তারাই যে অপর কাউকে এমনভাবে খাটো করছে, তাও আবার তাঁরই নাম নিয়ে- এমন কথা আম্বেদকরের ভাবনায় নিশ্চিতভাবেই ছিল না। আম্বেদকর পুজোর আয়োজন করার পাশাপাশি যারা নিজেদেরই সহপাঠীকে চূড়ান্ত অসম্মান করতে দ্বিধা করল না, আম্বেদকরের ভাবনাটিকে তারা কতখানি আত্মস্থ করতে পেরেছে তা নিয়ে সংশয় হয়। বাবাসাহেবের সেই ভাবনাকে যথাযথভাবে গ্রহণ করলে, তাকেই হয়তো সত্যিকারের আম্বেদকর পূজা বলা যেত।