বিশুদ্ধ পানীয় জল। এই জিনিসটির একটু গড়বড় হলেই বিপদ। এমনকী প্রাণ নিয়েও টানাটানি হতে পারে। তবে আমরা যে পানীয় জল প্রতিনিয়ত খাচ্ছি, তা কতটা বিশুদ্ধ। তা বুঝতেই এক আশ্চর্য যন্ত্র আবিষ্কার করে ফেলেছে আইআইটি মাদ্রাজের একদল পড়ুয়া-গবেষক। যন্ত্রটির নাম তাঁরা দিয়েছেন ‘সাফ ওয়াটার’। আইবিএম আয়োজিত একটি প্রতিযোগিতায় সেরার পুরস্কার জিতে নিয়েছে তাঁদের এই আবিষ্কার। আসুন, শুনে নেওয়া যাক সেই গল্পই।
বিশুদ্ধ জলের খোঁজ মানুষের আজকের নয়। আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর দিনকাল শুরু হওয়ার আগে থেকেই জল পরিশুদ্ধ করার জন্য নানা ধরনের কৌশল খুঁজে বের করেছিল সভ্যতা। সে নুড়ি-বালি-পাথরের ফিল্টার হোক বা জল ফুটিয়ে নেওয়া। তবে যত দিন গিয়েছে বিশুদ্ধ পানীয় জলের খোঁজে বিজ্ঞানের হাত ধরেছে মানুষ। এসেছে হাজার রকমের ওয়াটার পিউরিফায়ার।
এ বার সেই পথে আরও এক ধাপ এগিয়ে গেলেন আইআইটি মাদ্রাজের একদল পড়ুয়া-গবেষক। সম্প্রতি তাঁরা বের করে ফেলেছেন এমন এক ধরনের যন্ত্র, যা দিয়ে জলের বিশুদ্ধতা সম্পর্কে মিলবে ধারণা। ‘সাফ ওয়াটার’- নিজেদের ওই প্রকল্পটির এমনই নাম দিয়েছেন তাঁরা।
আরও শুনুন: রাস্তাঘাটে তেষ্টা মেটাতে ভরসা, তবে EXPIRY DATE খেয়াল করে জলের বোতল কেনেন তো?
এত কিছু থাকতে বিশুদ্ধ জলের ভাবনা কেন? ওই প্রকল্পের এক অন্যতম কাণ্ডারি হৃষিকেশ ভান্ডারী শোনালেন অন্য গল্প। কর্নাটকের উত্তর কন্নড় জেলার ইয়েল্লাপুরের বাসিন্দা হৃষিকেশে। সেখানে বেশির ভাগ লোকেরাই পানীয় জলের জন্য টিউবওয়েলের উপরেই ভরসা করেন। সেই জল খেয়েই একবার ভয়ানক অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন হৃষিকেশের মা। চিকিৎসক জানান, গ্রামের টিউবওয়েলের জলে আর্সেনিকের পরিমাণ বেশ বেশি। আর সেই থেকেই বিষক্রিয়া।
এই সমস্যা শুধু হৃষিকেশের গ্রামেই নয়, ভারতবর্ষের বহু জায়গাতেই রয়েছে এখনও। আর সেই সমস্যার শিকড়ে পৌঁছতে চেয়েছিলেন হৃষিকেশ ও তাঁর বন্ধুরা। সেখান থেকেই শুরু। হৃষিকেশের সঙ্গেই পড়েন সত্যম প্রকাশ। তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন আরও কয়েকজন। মোট পাঁচ জনে মিলে একদিন নেমে পড়লেন কোমর বেঁধে। শুরু হল ‘সাফ ওয়াটার’ প্রকল্পের কাজ।
বিশ্বের মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক সংখ্যক মানুষই এখনও পানীয় জলের জন্য ভূগর্ভস্থ জলের উপরে ভরসা করেন। তবে এই ভূগর্ভস্থ জল কতটা বিশুদ্ধ, তাতে অন্য কোনও বিষাক্ত রাসায়নিক মিশছে কিনা তা দেখার জন্য ব্যবস্থা বলতে শুধু নিয়মমাফিক পরীক্ষা। তা যে সব জায়গায় সব সময় করে ওঠা সম্ভব হয়, তেমনটা নয়। এই ‘সাফ ওয়াটার’ যন্ত্র দিয়ে মূলত পরীক্ষা করা যাবে জলের গুণগত মান, এবং সেই রিপোর্ট মিলবে নিয়মিত ভাবে।
আরও শুনুন: সাইকেলেই কেরামতি, ফলের রস বের করার অভিনব উপায় আবিষ্কার বিক্রেতার
এর জন্য কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তাকে আইওটি প্ল্যাটফর্মের সঙ্গে জুড়ে দিয়েছেন তাঁরা। অর্থাৎ এমন একটি যন্ত্র তাঁরা বের করে ফেলেছেন, যা কাজ করবে ইন্টারনেটের মাধ্যমে। এই যন্ত্র সময়ে সময়ে জলের মধ্যেকার নানারকম উপাদানের পরিমাণ ও গুণমান বিচার করে সেই তথ্য পাঠিয়ে দেবে উৎস কম্পিউটার বা ডিভাইসে। এর জন্য প্রয়োজন হবে শুধু বিদ্যুৎ সংযোগের। যে কোনও সাধারণ প্লাম্বারই এই যন্ত্রটি লাগাতে পারবে। টু-জি ইন্টারনেট পরিষেবাতেও কাজ করতে পারবে এই যন্ত্র। ফলে সহজেই জানা যাবে, কোনও জায়গার জলে কিছু গড়বড় আছে কিনা। সেক্ষেত্রে লাল সঙ্কেত পাঠাবে হৃষিকেশদের তৈরি এই যন্ত্র। আর তেমনটা হলে সরকার বা প্রশাসন আগে থেকেই পদক্ষেপ করতে পারবে। পাশাপাশি এই যন্ত্র বেশ সুলভও।
বাকি অংশ শুনে নিন।